নিজস্ব সংবাদদাতা • বালুরঘাট |
হাসপাতালের ভিতর থেকেই মিলল
১১টি হিটার!
শুধু এক দিনের পিকনিক নয়, নিয়মিতই আগুন জ্বেলে রান্নাবান্না থেকে জল গরম করার রেওয়াজ রয়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে।
আমরি-কাণ্ডের পরেও রাজ্যের হাসপাতালগুলির যে হুঁশ ফেরেনি, তার প্রমাণ ফের একবার মিলল ওই হাসপাতালে। হাসপাতালগুলিতে আগুন নিয়ে যে যথেষ্ট সচেতনতা এখনও নেই, তা স্বীকার করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীও। তিনি বলেন, “অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা যথাযথ করার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও অনেকে তা মেনে উঠতে পারেননি। আমরা দমকলের অনুমতির জন্যও আবেদন করতে বলেছি। কিন্তু সব থেকে বড় কথা হল নিয়মিত নজরদারি। সেটাই বাড়াতে হবে।” |
সেই নজরদারি যে কার্যত নেই তা বোঝা গেল, শুক্রবার বালুরঘাটে জেলা হাসপাতালের ওয়ার্ড ও ওয়ার্ড মাস্টারের ঘর থেকেই ওই হিটারগুলি মেলায়। বৃহস্পতিবার জানা যায়, বুধবার রাতে ওই হাসপাতালের মধ্যে এক্স রে করার ঘরেই গ্যাস জ্বালিয়ে মাংস-ভাত রান্না করে রীতিমতো ভুরিভোজের আয়োজন করা হয়। তার পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। প্রথমে ৭ জনকে ‘শো-কজ’। পরে এক্স রে বিভাগের দুই চিকিৎসক প্রণব ঠাকুর বাছার এবং বিমলেশ জি বিমল-কেও ‘শো-কজ’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান সুপার বুদ্ধদেব মণ্ডল। এ দিন হাসপাতাল পরিদর্শনে যান দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামীও।
শুক্রবার সকালে তদন্তে নেমে সুপারের নজরে পড়ে পুরুষ বিভাগ, পুরুষ শল্য বিভাগ, মহিলা বিভাগের মতো বিভিন্ন ওয়ার্ডে, ওয়ার্ড মাস্টারদের ঘরে এবং তিন তলায় যে ঘরে কম্পিউটার রয়েছে, সেখানেও বেআইনি ভাবে হিটার রয়েছে। সুপার বুদ্ধদেববাবু বলেন, “এই হিটারগুলি নিয়মিত ব্যবহারও করা হয়। কিন্তু আমি আগে জানতাম না।” স্বাস্থ্যকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, হাসপাতালে রান্নার কথা সুপারের অজানা ছিল না। সুপার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত মণ্ডল বলেন, “কী করে এই হিটারগুলি ওই হাসপাতালের ভিতরে গেল, জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
তবে পরপর দু’দিনের এই ঘটনার পরে অন্য হাসপাতালগুলিতে আগুন নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। অসিতবাবু বলেন, “গঙ্গারামপুর ও হিলি গ্রামীণ হাসপাতালেও হিটারের ব্যবহার রোধে অভিযান চালানো হবে।” গঙ্গারামপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার সুদীপ দাস জানান, অস্ত্রোপচারের ঘরে জল গরমের জন্য আগে হিটার ব্যবহার হত, এখন সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বালুরঘাটের পুনরাবৃত্তি রুখতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার। মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন কুমার ঝরিয়াত বলেন, “আমরির ঘটনার পরে রাজ্যে সমস্ত হাসপাতালকে সতর্ক করে নির্দেশ এসেছে। এর পরেও বালুরঘাট হাসপাতালে যাঁরা পিকনিক করেছেন, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত।”
এ দিন বালুরঘাট হাসপাতালের নার্সদের আবাসন থেকেও ১৭টি হিটার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। |