প্রশিক্ষণ নেই, রাজ্যে প্রকট ‘জাতীয় লজ্জা’
যাদের জন্য প্রকল্প, তাদের কাছেই খবর নেই! ফলে আসল উদ্দেশ্যটাই কার্যত জলে যেতে বসেছে।
সরকার চাইছে, অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের খুঁজে বার করে তাদের ওষুধ ও পুষ্টিকর খাবার জোগাতে। অপুষ্ট শিশু এবং সরকারি প্রকল্পের মধ্যে ‘সংযোগ ঘটানোর’ জন্য রয়েছেন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা। কিন্তু কী ভাবে কাজটা করতে হবে, তাঁদের অধিকাংশেরই সে প্রশিক্ষণ নেই। ফলে প্রকল্পের সুফল যেমন অপুষ্ট শিশুদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, তেমন পশ্চিমবঙ্গে এমন শিশুর সংখ্যা কত, তারও হিসেব নেই রাজ্যের স্বাস্থ্য বা নারী-শিশুকল্যাণ দফতরের কাছে।
দেশের ৪২ শতাংশেরও বেশি শিশু যে অপুষ্টির শিকার, সাম্প্রতিক সমীক্ষায় সে তথ্য ধরা পড়ার পরে বিষয়টিকে ‘জাতীয় লজ্জা’ বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সমস্যার মোকাবিলায় পরবর্তী পাঁচ বছরে দু’লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক। সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রতি রাজ্যে ‘পুষ্টি কাউন্সিল’ গড়ার। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, অপুষ্টি দূর করতে এত দিন যে টাকা খরচ হল, তাতে ফল কী মিলল?
ফল যে বিশেষ মেলেনি, পশ্চিমবঙ্গই তার বড় উদাহরণ। স্বাস্থ্য-পরিসংখ্যান বলছে, অপুষ্ট ছেলেমেয়েদের জন্য উপযুক্ত খাদ্য-ওষুধের বন্দোবস্ত করতে পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, উত্তর দিনাজপুর ও জলপাইগুড়িতে ৯টি ‘পুষ্টি পুনর্বাসন’ কেন্দ্র চালু হয়েছে গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের আওতায়। আগামী মাসে আরও তিনটে চালু হওয়ার কথা। এক-একটা কেন্দ্রের পিছনে মাসে খরচ ২৯ লক্ষ টাকা। অথচ পুরুলিয়ার ঝালদা, উত্তর দিনাজপুরের সাপটিবাড়ি বা মালদহের বাঙ্গিটোলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অপুষ্ট শিশুরা কেন্দ্রে আসছে ঠিকই, কিন্তু সংখ্যায় অনেক কম। কারণ, বহু পরিবার এই সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে বিলকুল অন্ধকারে।
এবং এর জন্য স্থানীয় অঙ্গনওয়ারি কর্মীদের ‘ব্যর্থতা’র দিকেই আঙুল তুলছেন জেলার স্বাস্থ্য-কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, এ রাজ্যে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ কখনও হয়নি। উপরন্তু স্বাস্থ্য এবং নারী-শিশুকল্যাণ দফতরে বাঞ্ছিত সমন্বয় নেই বলেও অভিযোগ।
রাজ্যে শিশু-অপুষ্টির ছবিটা ঠিক কী রকম?
স্বাস্থ্য-কতার্রা জানাচ্ছেন, অপুষ্ট শিশুদের ৪%-৫% ‘গভীর অপুষ্টি’তে ভুগছে। আবার এদের মধ্যে ২০%-২৫% শিশুর খাবারের পাশাপাশি ওষুধও দরকার। স্বাস্থ্য দফতরের শিশু-স্বাস্থ্য বিভাগের উপ স্বাস্থ্য-অধিকর্তা পাপড়ি নায়েক জানিয়েছেন, প্রথমে শিশুর অপুষ্টির মাত্রা যাচাই করে খাবার, প্রয়োজনে ওষুধ দেওয়া শুরু হয়। দু’-তিন সপ্তাহ তাকে মা-সহ কেন্দ্রে ভর্তি রাখা হয়। পাপড়িদেবীর কথায়, “বাচ্চাকে কী ভাবে খাওয়াতে হবে, পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, সবই মা শিখে নেন।” ছ’মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের এই সব কেন্দ্রে চিকিৎসা হয়।
আর প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অপুষ্ট শিশুদের সেখানে আনার দায়িত্ব মূলত অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের। কিন্তু যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে তাঁরা বহু ক্ষেত্রে রুগ্ণ শিশু চিহ্নিতই করতে পারছেন না বলে স্বাস্থ্য-কর্তারা জানিয়েছেন। উপরন্তু অনেক সময়ে জনসংযোগের অভাবে পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রের খবর তাঁরা মানুষকে দিতে পারছেন না। বাড়ি ফিরে যাওয়া শিশুর পরবর্তী চিকিৎসার দিকেও নজর থাকছে না।
অঙ্গনওয়াড়ি-প্রশিক্ষণে ঘাটতির কথা মেনে নিয়েছেন নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। তিনি বলেন, “এত দিন ব্যবস্থাই ছিল না। আমরা পাঁচটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র খুলছি। আশা করা যায়, শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।” সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পও (আইসিডিএস) ঢেলে সাজা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর: আপাতত সমস্যার সুরাহায় গ্রামের স্বাস্থ্য-সহায়িকাদের কাজে লাগানো হবে।
তবে শিশু-অপুষ্টি রোধে সামাজিক সচেতনতাও সমান জরুরি বলে মনে করেন জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্য-অধিকর্তা দিলীপ ঘোষ। তাঁর কথায়, “মা অপুষ্টির শিকার হলে সন্তান সুস্থ হবে না। তাই কম বয়সে বিয়ে বন্ধ করা বা মেয়েদের ঠিকঠাক খাওয়ানোর ব্যাপারে প্রচার চালানোটাও খুব দরকার।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.