নিজস্ব সংবাদদাতা • বীরপাড়া |
দার্জিলিঙের পানিঘাটা চা বাগান ডিসেম্বর থেকে বন্ধ। সেখানে না-গিয়ে দার্জিলিং শহরের গোর্খা নারীমুক্তি মোর্চার নেতা সুমিতা রাই ডুয়ার্সের বন্ধ ঢেকলাপাড়া চা বাগানে গিয়ে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে এভার অভিযোগ করলেন আদিবাসী বিকাশ পরিষদের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকে। শুক্রবার বিরসাবাবু পুলিশ-প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করেছেন। বিরসাবাবু বলেন, “পাহাড় থেকে ডুয়ার্সে গিয়ে অশান্তির চেষ্টা হচ্ছে। অথচ পুলিশ-প্রশাসনের একাংশ নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে রয়েছে। ওই মহিলাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে শুনতে পাচ্ছি। এ চলতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রীকে সব জানাব।” পাশাপাশি, পরিষদের রাজ্য সভাপতির প্রশ্ন, ১০ বছর ধরে বাগান বন্ধ এর আগে বাগানে মৃত্যুর মিছিল চললেও আগে মোর্চা নেতারা ডুয়ার্সের কথা ভাবেননি কেন? তাঁর অভিযোগ, এখন নোংরা রাজনীতি করে অশান্তি ছড়ানোর ছক কষা হয়েছে। সে জন্য ফালাকাটায় বৈঠক করতে চলেছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ নেতারা। বৈঠকে ঢেকলাপাড়া বাগানের অশান্তি রোধ করতে নতুন করে আন্দোলনে নামার কথা ঘোষণা হবে বলে জানান সংগঠনের রাজ্য নেতা বৈরাগী মিনজ। তাঁর কথায়, “এদিন পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন কর। একজন মহিলা আত্মহত্যার হুমকি দিলেও তাকে কেন পুলিশ ছেড়ে দিল তা বুঝতে পারছি না। যে মহিলা নানা অশান্তি করার চেষ্টা করছে তাঁকে গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন পুলিশ-প্রশাসন?” ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কাসের নেতা বাবলু মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ওই বাগানটি নিয়ে নোংরা রাজনীতি সুরু হয়েছে। প্রশাসনকে তপর হওয়া উচি স্থানীয় নেতৃত্বকে আমি বিষয়টি দেখার জন্য বলেছি। বিকাশ পরিষদের থেকে বহিষ্কৃত নেতা জন বার্লার অনুগামী বাগানের এক নেতা শুক্রবার সকালে বাগানের গেটের কাছে লোকজনকে জড়ো করার কাজ করেছে বলে শ্রমিকরা দাবি করেন। বাগানের লাইনের বাসিন্দা সুভাষ তাঁতি বলেন, “বাগানে মিটিং হবে বলে বাগানের এক নেতা আমাদের গেটের কাছে আসতে বলেন তার নির্দেশে কাজ ছেড়ে এখানে এসে বিষয়টি জানতে পারি এটা মানা যায় না।” জন বার্লা অবশ্য বলেন, “ঢেকলাপাড়া বাগানে কে এসেছে কী করছে সে বিষয়ে আমার কাছে কোন খবর নেই। ভিত্তিহীন কথা বার্তা বলা হচ্ছে।” মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বিশ্বচাঁদ ঠাকুর অবশ্য পুলিশের পক্ষ পাতিত্বের অভিযোগ অস্বীকার করেন। এস ডি পি ও বলেন, “পুলিশ পৌঁছনোর পর ওই মহিলা তার সিদ্ধান্ত বাতিল করার কথা জানিয়ে দেন। সে জন্য স্থানীয় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। অশান্তি ছড়ানোর বিষয়ে অবশ্য থানায় কোন অভিযোগ জমা পড়েনি। পুরো বিষয়টি আমি খোঁজ নিচ্ছি।” মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায় জানান, ওই মহিলার উপর নজর রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, “কোনও অশান্তি যাতে কেউ বাগানে ছড়াতে না পারে তা দেখা হচ্ছে।” দার্জিলিঙের ফুটপাতে চাদর বিক্রেতা তথা মোর্চার নেত্রী বলে দাবি করে সুমিত্রা রাই কিছুদিন আগে ঢেকলাপাড়া চা বাগানে যা। কয়েকজন শ্রমিককে চাল, ডাল দিয়ে সাহায্য করে ১২ জানুয়ারির মধ্যে বাগান না চালু হলে কারখানার বন্ধ গেটের সামনে আত্মহত্যার হুমকি দেন। ঘটনা জানাজানি হতে মোর্চার বিরুদ্ধে ডুয়ার্সে গোলমাল পাকানোর চেষ্টার অভিযোগ ওঠে। মোর্চার সাধারণ সম্পাদক অবশ্য সুমিতাকে পাঠানোর কথা অস্বীকার করেন। সুমিতা বলেন, “আমি চা বাগানের শ্রমিকদের দুর্দশা দেখেছি।” পানিটাঘায় যাননি কেন? জবাবে সুমিতা জানান, সেখানে কোনও অভাব-অভিযোগ, অনাহার নেই। অথচ এদিনই বামেদের একটি প্রতিনিধি দল পানিঘাটা চা বাগানে গেলে মোর্চার চা শ্রমিক সংগঠনের অনেকেই নেতানেত্রীদের ভূমিকায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কেন কেউ ওই বাগান বন্ধের পরে সেখানে যাননি সেই প্রশ্নেও নেতাদের কড়া সমালোচনা করেছেন পানিঘাটার শ্রমিকদের অনেকেই। |