নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
শেষ ফোন এসেছিল মঙ্গলবার। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ স্ত্রী সন্তোষীদেবীকে ফোন করে শিলিগুড়ির ব্যবসায়ী বিজয় কিল্লা জানিয়েছিলেন তিনি বাড়ির পথে। ফিরছেন খুব তাড়াতাড়ি। তার পর থেকে তিন দিনের অপেক্ষা। শুক্রবার রাত অবধি ফেরেননি বিজয়বাবু। মুক্তিপণের দাবিতে কোনও ফোন না আসায় উদ্বেগ বেড়েছে আরও।
বিজয় কিল্লা ও তাঁর দাদা প্রদীপের শিলিগুড়ির সেবক রোডে একটি রোলিং মিল রয়েছে। বিজয়বাবু মূলত মিলের কাজ দেখাশুনো করতেন। বাইরে লোহার নিলাম-সহ অন্য দিকগুলি দেখতেন তাঁর দাদা। পুলিশের ধারণা, মঙ্গলবার রাতে কারখানা থেকে বাড়ি ফেরার পথেই অপহৃত হন বিজয়বাবু। বুধবার তাঁর পরিবারের তরফে ভক্তিনগর থানায় অপহরণের অভিযোগ করা হয়। ওই দিনই ইসলামপুর থেকে উদ্ধার হয় বিজয়বাবুর গাড়িটি। পুলিশ প্রথমে উত্তর দিনাজপুর এবং লাগোয়া বিহারে তল্লাশি শুরু করে। তল্লাশি চালানো হয় বিজয়বাবুর পরিবারের তরফেও। পুলিশ জানায়, তদন্তে পুলিশকে বিভ্রান্ত করতেই গাড়িটি বিহার লাগোয়া ইসলামপুরের দিকে ফেলে রাখা হয়েছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খোঁজখবর শুরু হয়েছে অসমেও। সম্প্রতি রোলিং মিলে কিছু নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। সেখানে বিভিন্ন এলাকার শ্রমিক, মিস্ত্রিরা কাজ করছিলেন। তাঁদের সম্পর্কেও খোঁজখবর নেওয়া চলছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বিজয়বাবুর দফতরের কর্মীদেরও।
|
বিজয় কিল্লা |
বিজয়বাবু ও প্রদীপবাবু পরিবার নিয়ে একসঙ্গেই থাকেন শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড়ার নেহরু রোডে। এই তিন দিন উদ্বেগে-আতঙ্কে রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি পরিবারের কেউ। বিজয়বাবুর ছেলে অনুপ ব্যবসার কাজকর্ম দেখাশুনো করেন। তিনি প্রায় বাকরুদ্ধ। মেয়ে পিঙ্কি বিবাহসূত্রে গুজরাতে থাকেন। স্ত্রী সন্তোষীদেবী ঘটনার পর থেকেই ঘনঘন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বাড়ির পুরুষেরা বিভিন্ন এলাকায় ছোটাছুটি করছেন। খোঁজ চলছে বন্ধুবান্ধব মহলেও। তবে শুক্রবার রাত অবধি মেলেনি কোনও সন্ধান। বড় ভাই প্রদীপও ঘটনার পর থেকে দিশেহারা। তিনি বলেন, “ভাই কোনও দিনও কোনও ঝামেলায় জড়াত না। কী যে হল কিছুই বুঝতে পারছি না। নিলাম-সহ বাইরের ব্যবসার কাজ আমিই দেখি। ভাই তো শুধু কারখানা দেখত। বিভিন্ন এলাকায় খুঁজছি। জানি না ভাইয়ের কী অবস্থা।”
এ দিকে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবসায়ীর খোঁজ না মিললে উত্তরবঙ্গের আইজি অফিসের সামনে ধর্না, বিক্ষোভের হুমকি দিল সিপিএম। দলের ২ নম্বর লোকাল কমিটির সম্পাদক সঞ্জয় তিব্রুয়াল জানান এ দিন তাঁরা শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত জাভালগিকে এ বিষয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। সিপিএম নেতাদের অভিযোগ, শহরের ব্যবসায়ী এলাকায় রোজ কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। তাই ব্যবসায়ী অপহরণের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
লাগোয়া জলপাইগুড়ি জেলার ভক্তিনগর এলাকায় প্রচুর কারখানা রয়েছে। একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটও রয়েছে। সেখানে পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
সিপিএম কাউন্সিলর কমল অগ্রবাল, রামেশ্বর প্রসাদ, শালিনী ডালমিয়ারা বলেন, “পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছি। শহরের আতঙ্ক ছড়ালে ব্যবসায় ক্ষতি হয়।” এ দিন দুপুরে আইজি (উত্তরবঙ্গ) সঞ্জয় সিংহ দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। আইজি বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। দুই জেলার পুলিশ তদন্ত করছে। কিছু সূত্র আমাদের হাতে এসেছে।” |