|
|
|
|
১০০ দিনের কাজ |
হাল ফেরাতে মাটি কাটায় কাটছাঁট রাজ্যের |
নুরুল আবসার • কলকাতা |
প্রকল্পের অগ্রগতির হাল এক কথায় শোচনীয়। অথচ কেন্দ্রের টাকা পড়ে থাকছে। খরচ করা
যাচ্ছে না।
এই অবস্থায় বছরে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে কিছু বদল করল রাজ্য সরকার। গ্রামাঞ্চলে লোকেদের আরও বেশি করে এই প্রকল্পে অর্ন্তভুক্তির লক্ষ্যে মাটি কাটার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। অর্থাৎ, আগে যতটা মাটি কাটলে ন্যূনতম দৈনিক মজুরি (১৩০ টাকা) পাওয়া যেত, নতুন নিয়মে সেই টাকা মিলবে ৩০ ঘন ফুট কম মাটি কাটলে। শুধু তাই নয়, আগে নিয়ম ছিল কাজ করার ২১ দিনের মধ্যে মজুরকে পারিশ্রমিক দিতে হবে। নতুন নিয়মে কাজের
দিনই মজুরি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
পাশাপাশি কোনও মজুর নির্ধারিত পরিমাণ মাটি কাটছেন কি না, তা তদারকি করতেও বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েতকে।
এ বছর ১ জানুয়ারি থেকেই এই সব নিয়ম কার্যকর হয়েছে। নিয়ম পরিবর্তনের বিষয়টি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে চিঠি লিখে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তা জানিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পের খুবই খারাপ অবস্থা। চলতি আর্থিক বছরে এ পর্যন্ত গড়ে কাজ দেওয়া গিয়েছে মাত্র ১৯ দিন। শ্রমিকেরা যদি দৈনিক ন্যূনতম মজুরি অর্থাৎ ১৩০ টাকা পেতে পারেন এবং তা দিনের দিনই পেয়ে যান তা হলে এই প্রকল্পে গ্রামের মানুষকে আরও বেশি করে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে বলে মনে করেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “নতুন নিয়ম কী ভাবে কার্যকর হবে, তা বিশদে জেলাশাসকদের নিয়ে আলোচনা করেছি। তাঁদের দ্রুত সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বলা হয়েছে।”
ভৌগোলিক অবস্থা বিচার করে কোন এলাকায় কতটা মাটি কাটলে ন্যূনতম মজুরি পাওয়া যাবে, তা ২০০৬ সালে প্রকল্পটি চালু হওয়ার সময়েই নির্ধারণ করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এ রাজ্যেও সেই নীতি অনুসরণ করা হচ্ছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে রাজ্যে প্রকল্পটি চালানোর সময়ে পঞ্চায়েত-কর্তারা অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, দৈনিক ১৩০ টাকা পেতে যে পরিমাণ মাটি কোনও শ্রমিকের কাটা উচিত, তা তিনি পারছেন না। পঞ্চায়েত দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “এর ফলে শ্রমিকের রোজগার কমে যাচ্ছে। বহু জায়গায় তাই শ্রমিকেরা প্রকল্পটির প্রতি অনীহা প্রকাশ করেছেন। প্রকল্পটি পিছিয়ে পড়ার এটা একটা একটা অন্যতম প্রধান কারণ।”
এর পরে সমীক্ষা করে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। সমীক্ষায় বিভিন্ন জেলার মাটির রকমফের এবং সেখানকার শ্রমিকদের সক্ষমতা এই দু’টি বিষয় বিচার করেই মাটি কাটার পরিমাণ কমানো হয়েছে। কেন্দ্রের নিয়ম মেনেই মাটির গুণগত মান বিচার করে রাজ্যকে পাঁচটি এলাকায় ভাগ করা হয়েছে। নরম মাটির ক্ষেত্রে আগে যেখানে ১০০ ঘনফুট কেটে ৮০ ফুট দূরত্বে ফেললে পাওয়া যেত ১৩০ টাকা, সেখানে নতুুন নিয়মে মাটি কাটতে হবে ৬৯ ঘনফুট। আবার যে-সব অঞ্চলে মাটি খুব শক্ত সেখানে আগে ৯০ ঘন ফুট মাটি কেটে ৮০ ফুট দূরত্বে ফেললে মিলত ন্যূনতম মজুরি। এখন সেখানে কাটতে হবে ৬২ ফুট।
নতুন নিয়মে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে এই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরাই সুনিশ্চিত করবেন, যেন একজন মজুর দৈনিক ১৩০ টাকা রোজগার করার মতো মাটি কাটতে পারেন। শ্রমিককে ওই দিনই মজুরি দিয়ে দিতে হবে। |
|
|
|
|
|