|
|
|
|
রাত পোহালেই টুসু বিসর্জন |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
নবমী নিশির রাতে যেমন মা মেনকা মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাতে হবে ভেবে আকুল হন, তেমনি ঘরের মেয়ে টুসুকেও বিদায় দেওয়ার আগে পুরুলিয়া থেকে মানভূমের সব মানুষের মনের কথা ফুটে ওঠে এই গানে। তিরিশ দিন বাপের বাড়ি থেকে মকর সংক্রান্তির দিন ঘরের মেয়ে টুসু যাবে শ্বশুর বাড়ি। শ্বশুরবাড়ি কোথায়? জলের নীচের ঘরে। রাত পোহালেই বিসর্জন হবে মেয়ের। সেই ভাসানে মাতবেন পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার মানুষ। নদীর ধারে মেলা বসবে রঙীন।
আগে পৌষ মাসে সন্ধ্যাবেলায় গ্রামে গ্রামে শুরু হত টুসু বন্দনা। একমাস ধরে চলত সেই উৎসব। শেষের দিন রাত জাগত গ্রামের মানুষ। মকর সংক্রান্তির ভোরে আবালবৃদ্ধবনিতা দল বেঁধে যেত টুসুর ভাসানে। এমনই জানালেন লোক সংস্কৃতি গবেষকরা। পুরুলিয়ার লোক গবেষক ক্ষীরোদ মাহাতো জানান, লোক উৎসবের মধ্যে টুসু নিয়েই উন্মাদনা সবচেয়ে বেশি। হারানো টুসু গানের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এবার তাই বিষ্ণুপুরের যদুভট্ট মঞ্চে আয়োজন করা হয়েছে টুসু গানের প্রতিযোগিতা। ১৬টি গানের দল যোগ দিয়েছে। |
|
ছবি: প্রদীপ মাহাতো। |
তবে বিসর্জনের আগের সেই দিনগুলি ফিরে এসেছে দক্ষিণ বাঁকুড়ার রানিবাঁধ, সারেঙ্গা, হিড়বাঁধ, সিমলাপাল, বিষ্ণুপুরের হাটেবাজারে। কেনাকাটা হয়েছে প্রচুর। টুসুর চৌডলের বিক্রিও কম হয়নি। খাতড়ার হাটে টুসু বিক্রি করতে আসা ভারডিহা গ্রামের ললিতা সাইনি, সৌরভ সাইনি বলেন, “এ বছর বাজার ভালো।” শুধু কেনাবেচা বলে নয়, নদীর ধারে মেলাও বসছে এবার। কংসাবতী লাগোয়া রানিবাঁধের পরেশনাথ মন্দিরে, খাতড়ার পরকুলে, শিলাবতী নদীর পাশে সিমলাপালের আনন্দপুরে, পাত্রসায়রের চরগোবিন্দপুরে বসেছে মকরমেলা। বাঁকুড়ার মেলা জমে উঠলেও পুরুলিয়ার কাশীপুর, হুড়া, ঝালদা, বলরামপুর, তালতলার হাট তেমন জমেনি। টুসু গানের বইয়ের বিক্রিও পড়তির দিকে। স্থানীয় ঝুমুর গানের লেখক সুনীল মাহাতোর কথায়, “আগে ছোট ছোট পুস্তিকার মতো রঙীন গানের বই প্রকাশ হত। বিভিন্ন হাটে সেই গান গেয়ে গেয়ে বিক্রি হত বই। বেশ কয়েকবছর ধরে সেসব উধাও।” এখন টুসু গানের সিডির আধিপত্য বেড়েছে। কয়েক বছর আগে বাজারে টুসু গান গাইয়েদের যে দল দেখা যেত, এখন দেখা যায় না।
হয়তো বাইরের সংস্কৃতির প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্য, বাজার সংস্কৃতির আগ্রাসনও টুসুর স্বাতন্ত্র্যে প্রভাব ফেলছে। কিন্তু মানভূমের মানুষ তো টুসুকে ফসলের দেবী মনে করেন। কবি নির্মল হালদার বলেন,“পুরুলিয়ার মানুষ টুসুকে ভুলতে পারবেন না।” |
|
|
|
|
|