|
|
|
|
বিয়ে রোখা মেয়েদের ডাক রাষ্ট্রপতির |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বাঁকুড়া |
পুরুলিয়ার উত্তরা, দীপালি ও সুনীতাদের সঙ্গে বাঁকুড়ার পাঁচ বিদ্রোহিণীও রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। স্কুল পড়ুয়া এই নাবালিকারা বাড়ির অমতে নিজেদের বিয়ে রুখে দেয়। আর এই সাহসিকতার জন্যই রাষ্ট্রপতি মঙ্গলবার তাঁদের ডেকে পাঠিয়েছেন। সেই ডাক পেয়ে তাই খুশি হেলনা শুশুনিয়ার প্রিয়াঙ্কা কর্মকার, দামড়া পাড়ার সাইতুন খাতুন, কেশিয়াডোবার অষ্টমী সরেন, কালাপাথরের সুন্দরী হাঁসদা, ও কুমিদ্যার মন্দিরা দাস মোদকেরা। সকলেই বাঁকুড়া ১ ব্লকের বাসিন্দা। এই লড়াইয়ে ওদের কেউ স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের সাহায্য পেয়েছে। কেউ বা পাশে পেয়েছে আত্মীয়দের।
শুক্রবার বাঁকুড়া জেলাশাসকের সঙ্গে তারা দেখা করে। জেলাশাসককে তারা বলে, “এখন বিয়ে করবো না। আমরা আরও পড়াশোনা করতে চাই।” জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি বলেন, “বাল্য বিবাহ আমাদের সমাজের একটা ব্যাধি। ওরা সেই ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই করে বিরাট সাহসিকতার নজির তৈরি করেছে।” জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক নীলিমা দাস চৌধুরী বলেন, “এই পাঁচটি মেয়ে শুধু এই জেলার নয়, সারা দেশের কাছে ওরা দৃষ্টান্ত। উৎসাহ দিতেই রাষ্ট্রপতি ওদের ডেকেছেন।” |
|
ছবি: অভিজিৎ সিংহ। |
রাজগ্রাম বিবেকানন্দ হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া প্রিয়াঙ্কা কর্মকাররা তিন ভাই-বোন। বাবা মিষ্টির দোকানের কর্মী। তার কথায়, “মাধ্যমিক পরীক্ষার পরেই বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছিল। আমি রাজি হইনি। বাবা মানতে চায়নি। স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর দিদিরা বাবাকে বোঝান। বাবা তাঁদের কথা মেনে নেন।” বাদুলাড়ার সাইতুন খাতুনও স্থানীয় স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সাহায্য নিয়ে নিজের বিয়ে ভেঙেছে। সে বাদুলাড়া সম্মিলনী হাই মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। সে বলে, “গত বৈশাখ মাসে বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছিল। আপত্তির কথা কানেই তোলেনি। স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর দিদিরা বিয়ে আটকান।”
কালাপাথর হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুন্দরীর কথায়, “খুব অল্প বয়েসে দিদি সুকুরমনির বিয়ে হয়েছিল। বছর তিনেক আগে বাবা আমারও বিয়ে ঠিক করে। বাবা আমার আপত্তি না শুনলেও দিদি প্রতিবাদ করায় মেনে নেয়।” অষ্টমীর বিয়ে ঠিক হয়েছিল বছর দুই আগে। তখন সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত। সে বলে, “বাবা জোর করে বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করায় আমি পুলিশের কাছে যাব বলে ভয় দেখাই। কাকিমাও বাবাকে বোঝায়। শেষে বাবা রাজি হয়।” সে এখন কেঞ্জাকুড়া হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। কুমিদ্যার মন্দিরা’রা পাঁচ বোন। তিন জন শারীরিক প্রতিবন্ধী। বাবা মিষ্টির দোকানের কর্মী। ২০১০ সালে মন্দিরা যখন স্থানীয় এমএসকে’র ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত, তখন তার বিয়ে ঠিক হয়। বেঁকে বসে মেয়ে। তার কথায়, “মাসি আপত্তি করায় বিয়ে আটকায়।” এখন সে ওই স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বৃত্তটা ক্রমশ বড় হচ্ছে। |
|
|
|
|
|