গুদামের তালা ভেঙে সিন্দুক নিয়ে পালাল ডাকাতেরা
হাবরায় আইনশৃঙ্খলা প্রশ্নে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ
ফের ডাকাতির ঘটনা ঘটল উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায়। বৃহস্পতিবার রাতে হাবরা বাজারে একটি সর্ষের তেলের গুদামের তালা ভেঙে টাকাভর্তি সিন্দুক লুঠ করে পালাল এক দল দুষ্কৃতী। যাঁর গুদামে এই লুঠের ঘটনা ঘটেছে ভক্ত ঘোষ নামে ওই ব্যক্তি হাবরা বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের অন্যতম। এই ঘটনায় ব্যবসায়ীমহলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, মাস কয়েকের মধ্যে হাবরা এলাকায় পর পর চুরি, বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। হয়েছে ডাকাতিও। কিন্তু দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে পুলিশকে সে ভাবে তৎপর হতে দেখা যায়নি। পুলিশের নিষ্ক্রিতায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য ক্রমশ বাড়ছে।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, হাবরা বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বর্তমানে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী। মন্ত্রীর এলাকা হওয়া সত্ত্বেও আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে কোনও উন্নতি চোখে পড়েনি। যদিও হাবরা থানা সূত্রে বলা হয়েছে, বিভিন্ন চুরি, ডাকাতির ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
দুষ্কৃতীদের ধরার দাবিতে হাবরা থানার সামনে বিক্ষোভ ব্যবসায়ীদের। --নিজস্ব চিত্র।
জেলার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “পুলিশ কিছু করছে না এমন অভিযোগ ঠিক নয়। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশিতে নেমেছে পুলিশ। অন্য ঘটনাগুলিতেও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।”
পুলিশ ও ভক্তবাবুর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টা নাগাদ তাঁরা গুদাম বন্ধ করে পাশেই শ্রীপুরে বাড়িতে চলে যান। ছেলে শঙ্করবাবু বলেন, “শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ পাশের এক দোকানদারের কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। গুদামের শাটার ও দু’টি কাঠের দরজায় মোট সাতটি তালা লাগানো ছিল। দেখি সবকটি তালাই ভাঙা। ভিতরে ঢুকে দেখি টাকা রাখার সিন্দুক উধাও। সিন্দুকের তালা খুলতে না পেরে পুরো সিন্দুকটিই লুঠ করে নিয়ে গিয়েছে ডাকাতেরা।” পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে শঙ্করবাবুর দাদা জানিয়েছেন, সিন্দুকে প্রায় সাত লক্ষ টাকা ছিল। হাবরা বাজারের প্রতিষ্ঠিত এই ব্যবসায়ীর গুদামে ডাকাতির খবর ছড়িয়ে পড়তেই সেখানে ভিড় করেন অন্য ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি জ্যোতিপ্রিয়বাবুকেও জানানো হয়। মন্ত্রী বলেন, “জেলার পুলিশ সুপারকে বলেছি দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে। সম্ভবত দেগঙ্গা এলাকা থেকে দুষ্কৃতীরা এসে ওই কাণ্ড ঘটিয়েছে।” এলাকায় পর পর চুরি, ডাকাতির ঘটনা নিয়ে স্থানীয় মানুষ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার যে অভিযোগ তুলেছেন তা নিয়ে তিনি বলেন, “সব বিষয়েই পুলিশকে বলা হয়েছে রাজনৈতিক রং না দেখে দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে।” স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, হাবরা এলাকার বেশ কিছু দুষ্কৃতী এতদিন কারাগারে ছিল। সম্প্রতি তারা জামিনে ছাড়া পেয়েছে। ওই সব দুষ্কৃতী ও তাদের সঙ্গীরাই এ সব ঘটাচ্ছে। তা ছাড়া এই সব দুষ্কৃতীদের একাংশ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় রয়েছে।
বৃহস্পতিবারে গুদামে ডাকাতির ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা হাবরা থানায় গিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দুষ্কৃতীদের ধরতে আইসি-র কাছে দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন হাবরা পুরসভার চেয়ারম্যান তপতী দত্ত। হাবরা চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন সাহা বলেন, “হাবরা থানার আইসি-র কাছে আমরা মৌখিক দাবি জানিয়ে এসেছি।, শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে প্রকৃত দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার না হলে ব্যবসায়ীরা থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করবেন। তাতেও কাজ না হলে বৃহত্তর আন্দলনে নামা হবে।” তাঁর অভিযোগ, অপরাধ ঘটে যাওয়ার পরে পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের না ধরে অন্য লোকজনদের গ্রেফতার করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগেও স্থানীয় কামারথুবায় যশোহর রোডের ধারে একটি সিগারেটের গুদামে বড় ধরনের চুরির ঘটনা ঘটে। সিগারেট ও নগদ মিলিয়ে চুরির পরিমাণ ছিল প্রায় ৯ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া কয়েক মাস আগে হাবরা স্টেশন রোডে একটি সোনার দোকানে সন্ধেবেলায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চড়াও হয়ে দুষ্কৃতীরা ডাকাতি করে চম্পট দেয়। ওই ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সম্প্রতি স্থানীয় সপ্তপল্লিতে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। বোমাবাজি হয় জয়গাছি এবং বাণীপুর এলাকাতেও। জয়গাছি এলাকায় কিছুদিন আগে এক যুবককে খুন করতে দুষ্কৃতীরা তাঁর হামলা করে। গুলিও চালায়। হাবরার পায়রাগাছিতে ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা ঘটে। দু’টি বাড়িতে তালা ভেঙে ঢুকে দুষ্কৃতীরা প্রচুর মালপত্র, টাকা লুঠ করে। বাধা দিতে গেলে একজনকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। পালানোর সময় দুষ্কৃতীরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়।
একের পর এক চুরি, ডাকাতি, বোমাবাজির ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয় জনমানসে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। যদিও বৃহস্পতিবার গুদামে লুঠপাটের ঘটনাকে ডাকাতির বদলে চুরির ঘটনা বলেছে পুলিশ। হাবরা পুরসভার বিরোধী দলেনেতা ঋজিনন্দ বিশ্বাস বলেন, “হাবরার আইন শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে। আমাদের আশঙ্কা দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে দুষ্কৃীতের দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে।” তপতীদেবী বলেন, “শহরের বুকে বৃহস্পতিবার রাতে যে ঘটনা ঘটল তাকে কোনওভাবেই খাটো করে দেখা উচিত নয়। এ ভাবে চলতে পারে না। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে। সাম্প্রতিক যে সব ঘটনা ঘটেছে তাতে আইন শৃঙ্খলা নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ স্বাভাবিক।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.