‘লড়াই’টা জমে গিয়েছে।
পুণ্যার্থীদের নিয়ে স্থানীয় এবং বহিরাগত পুরোহিতদের মধ্যে জোর টানাটানি চলছে সাগরমেলায়। শুক্রবার সেই টানাটানির মধ্যে পড়লেন নেপালের গুরবাহাদুর রানা।
কাঠমাণ্ডু থেকে সস্ত্রীক এসেছেন গুরবাহাদুর। এই প্রথম তাঁর সাগরে আসা। শুক্রবার বিকেলে স্নান সেরে পুজোর জন্য ধরেছিলেন রাঁচি থেকে আসা অরুণ মিশ্রকে। পুজো শুরু হবে, তখনই উদয় স্থানীয় তিন পুরোহিতের। তাঁদের দাবি, তিন নম্বর স্নানঘাটে বহিরাগত পুরোহিত পুজো করতে পারবেন না। জোর বচসা দু’পক্ষের। পিছু হটলেন রাঁচির পুরোহিত। পুজোয় বসলেন সাগরের বাসিন্দা আশিস মিশ্র।
অরুণ মিশ্র পুরো সময় দাঁড়িয়ে রইলেন এক ধারে। পুজো মিটতেই দক্ষিণা নিয়ে জোরাজুরি চলল কিছু ক্ষণ। প্রায় দেড়গুণ দক্ষিণা দিয়ে রেহাই মিলল কাঠমাণ্ডুর দম্পতির। ছাড় পেলেন না অরুণও। ‘বেপাড়ায়’ ঢুকে কাজ করার জন্য ‘কমিশন’ দিতে হল বহিরাগত পুরোহিতকে। |
ব্যাপারটা কী? জিজ্ঞেস করতেই এগিয়ে এলেন তিন পুরোহিত আশিস মিশ্র, রামকৃষ্ণ পণ্ডা এবং জগন্নাথ পণ্ডা। বললেন, “আমাদের এখানে সংগঠন রয়েছে। তাই আমরাই পুজো করি। বাইরের কেউ যজমান এনে দিলে কমিশনও দিই।” সংগঠনের প্রমাণ দিতে পকেট থেকে সচিত্র পরিচয়পত্র বার করেও দেখালেন।
গুরবাহাদুরের মতো এ দিন একই অভিজ্ঞতা হল পুরুলিয়ার ব্যবসায়ী সন্তোষ দাসেরও। ওখানে দাঁড়িয়ে তিনি গুরবাহাদুরের পুরো ঘটনাটিই দেখছিলেন। গুরবাহাদুর চলে যেতেই আশিসবাবুদের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁর প্রশ্ন, “আমারটা কত লাগবে?” চলল দরদস্তুর। সন্তোষবাবুর সঙ্গে আসা পারিবারিক পুরোহিত দূরেই দাঁড়িয়ে থাকলেন। পুজো শেষ করে যাওয়ার পথে সন্তোষবাবু বলেন, “অযথা সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তাই এখানকার পুরোহিতকে দিয়েই পুজো করালাম। মানত ছিল। আজ রাতেই গঙ্গাসাগর ছাড়তে হবে।”
দলবদ্ধ ভাবে শুধু স্থানীয় পুরোহিতেরাই নন, নাগা সন্ন্যাসী এবং ভিখারিরও ঘাঁটি গেড়েছেন সাগরমেলায়। ভরসন্ধ্যায় নাগা সন্ন্যাসীদের আখড়ার পাশে ঘুরছিলেন শক্তিগড়ের তপন সাহা। “বেটা, প্রসাদ লে,” বলে এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসী গাঁজার কল্কে এগিয়ে দিলেন তপনবাবুর দিকে। তপনবাবু খেলেন না। ভক্তিভরে প্রণাম করে এগোতে গিয়েও থামতে হল। ঘিরে ফেলেছেন আরও চার সন্ন্যাসী। হাত পেতে তাঁরা দক্ষিণা চাইলেন। তপনবাবুর পকেট থেকে খসল চার-চারটে পঞ্চাশ টাকার নোট। তাতে অবশ্য খুব আফশোস করছেন না তপনবাবু। তাঁর কথায়, “কী করব? পুণ্য করতে এসে শাপ নিয়ে ফিরব? নাগা সন্ন্যাসীদের অভিশাপ নাকি ফলে যায়। আমার আগের লোকটাকে তো কী না বলল! তার চেয়ে দু’শো টাকা খরচ করা অনেক ভাল।” গোটা সাগরমেলা জুড়েই এমন নানা ঘটনার ছড়াছড়ি। এ দিন মেলাপ্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আজ, শনিবার বেলা ১২টার পরে শুরু হবে পুণ্যস্নান। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাত পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষ পুণ্যার্থী এসেছেন সাগরে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম জানান, এ দিন দুপুরে কাকদ্বীপের লট-৮ জেটিঘাটের কাছে যানজটের সমস্যা হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পুণ্যার্থীর সংখ্যা আজ আরও বাড়বে ধরে নিয়ে সব ক’টি জেটিঘাটে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। |