উত্তর কলকাতা
বরাহনগর
শতবর্ষে আশ্রম
শুরু দু’টি অনাথ বালকের দায়িত্ব নিয়ে। এখন দু’হাজার ভবিষ্যতের সার্থক রূপদানে ব্রতী বরাহনগরের ৩৭ গোপাললাল ঠাকুর রোডের উপর বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম। বেলুড় মঠ অনুমোদিত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের একটি শাখা এটি। প্রাথমিকে ৮০০ এবং উচ্চ বিভাগে ১২০০ ছাত্রকে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাদানে নিয়োজিত এই আশ্রম। পাশাপাশি রয়েছে সামাজিক কাজকর্ম। ১৯৫৪-তে উচ্চ বিদ্যালয়ের শুরু। ১৯৫৮-তে বহুমুখী বিদ্যালয় রূপে সূচনা। ১৯৬১-তে পুরনো প্রথার উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারী অমিতাভ বাগচী এবং ১৯৯৯-এ মাধ্যমিকে প্রথম হওয়া সুমন কর্মকার আশ্রমের দুই কৃতী ছাত্র। এ ছাড়াও প্রতি বছর প্রথম কুড়ির তালিকায় থাকে আরও উজ্জ্বল মুখ।
আশ্রমের সম্পাদক স্বামী জ্ঞানলোকানন্দ বলেন, “আশ্রমের শতবর্ষ উদ্যাপনে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থসাহায্যে আলমবাজার রেল কলোনি বস্তির ১০০ শিশুর জন্য ‘গদাধর অভ্যুদয় প্রকল্প’, প্রমোদনগর কলোনির গর্ভবতী মা ও সদ্যোজাত শিশুদের জন্য ‘বিবেকানন্দ স্বাস্থ্য প্রকল্প’, দমদম ক্যান্টনমেন্টের এক নম্বর রেল বস্তির যুবকদের স্বনির্ভরতার সাহায্যে ‘অখণ্ডানন্দ সেবা প্রকল্প’ শুরু হয়েছে। এ ছাড়াও বস্তিতে বস্তিতে চলবে স্বাস্থ্য সচেতনতা শিবির। পশ্চিমবঙ্গের ন’টি জেলার নব্বইটি স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মূল্যবোধ ও ব্যক্তিত্বের বিকাশের বার্তা পৌঁছতে তিন ঘণ্টার কর্মশালারও আয়োজন করা হয়েছে।”
শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মের ১৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে মিশনের স্কুলমাঠে সম্প্রতি হয়ে গেল ‘শ্রীরামকৃষ্ণ মেলা’। এখন চলছে মিশনের শতবর্ষ উদ্যাপন। শুরু হল বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপনেরও। আশ্রম বিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচালিত সাংস্কৃতিক উৎসব, শিক্ষামূলক প্রদর্শনী-সহ বিভিন্ন সেবামূলক অনুষ্ঠানও হচ্ছে সাত দিনের উদ্যাপনে।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রথম অধ্যক্ষ স্বামী ব্রহ্মানন্দের (রাখাল মহারাজ) মন্ত্রশিষ্য গোপাল ঠাকুর ও যোগীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১২-তে আলমবাজারে পাঁজাদের বাড়িতে দু’টি অনাথ বালকের দায়িত্ব নিয়ে শুরু করেন এই ‘ব্রহ্মানন্দ বালকাশ্রম’।
কিন্তু অনুশীলন সমিতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাঁরা গ্রেফতার হলে আশ্রম পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেয়।
ওঠো, জাগো, লক্ষ্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত থেমো না। স্বামীজির এই বাণী মেনেই হাজারো সমস্যায় এগিয়েছে আশ্রম। কয়েক বছর বাদে আশ্রম সরে যায় ‘লালকুঠি’ নামে একটি বাড়িতে। সেখানে নানা অসুবিধার জন্য আশ্রম উঠে আসে বরাহনগরের জয়কৃষ্ণ মিত্রের কালীবাড়ি-সংলগ্ন বড় একটি এক তলা বাড়িতে। অবশেষে সুষ্ঠু পরিচালনভার পেতে ১৯২৪-এ আশ্রম বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনের শাখা রূপে স্বীকৃতি পায়। ১৯২৮-এ নড়াইলের জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায় ও তাঁর পরিবারের দান করা ১০ বিঘা জমিতে স্থায়ী ভাবে বর্তমান ঠিকানায় উঠে আসে বরাহনগর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম।


ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.