দক্ষিণ কলকাতা: গড়িয়া, সোনারপুর
সুরাহা কবে
জলবৎ নয়
রাস্তার পাশ দিয়ে গিয়েছে পরিশোধিত পানীয় জলের লাইন। কিন্তু অনেক গ্রামেই এখনও পৌঁছয়নি জলের পাইপলাইন। ফলে বারুইপুর-আমতলা রোড সংলগ্ন সোনারপুর এবং বারুইপুর গ্রামীণ এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাকে এখনও প্রতি দিনের পানীয় জল সংগ্রহের জন্য কয়েক কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সমস্যার সমাধানের জন্য বিভিন্ন স্তর থেকে আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কাজ কিছুই এগোয়নি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বারুইপুর-আমতলা রোড সংলগ্ন কল্যাণপুর, ধোপাগাছি, দীঘিরসান, কোচপুকুর, পীরখালি, টংতলা, জুলপিয়া সমেত বিভিন্ন এলাকায় পরিশোধিত পানীয় জল সরবরাহ করা হয় বজবজের নোদাখালির পরিশোধিত জলপ্রকল্প থেকে। এই প্রকল্পটিতে গড়ে প্রতি দিন ৩৪ মিলিয়ন গ্যালন জল উৎপাদন হওয়ার কথা। সেখানে প্রতি দিন ৩০ মিলিয়ন গ্যালন জল উৎপাদন হয়।
ফলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই ঘাটতি নিয়েই প্রতি দিন আটটি ব্লকের পুরো এলাকায় এবং দুইটি ব্লকের আংশিক এলাকায় নোদাখালি থেকে জল সরবরাহ করা হয়। যে আটটি ব্লকের পুরো এলাকা এই জলপ্রকল্পের আওতায় রয়েছে তার মধ্যে পড়ে বারুইপুর এবং সোনারপুরের গ্রামীণ এলাকাও। স্থানীয় বাসিন্দা মনসুর মিস্ত্রির কথায়: “শীতের থেকেও বেশি কষ্ট হয় গরমে। বাড়ি থেকে মেন রোডের দূরত্ব প্রায় দু’কিলোমিটার। এতটা পথ হেঁটে খাবার জল আনতে হয় রোজ।”
জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, নোদাখালি প্রকল্প শুরুর সময়ে চারশো বাসিন্দা পিছু একটি করে স্ট্যান্ড কল দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল জেলার জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগ। কিন্তু সেই পরিকল্পনাকে এড়িয়ে পূর্বতন জেলা পরিষদের পরিচালকেরা বাড়ি বাড়ি জলের লাইন পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। ফলে উৎপাদনের ঘাটতি সত্ত্বেও পরিশোধিত জলের চাহিদা আরও বেড়ে যায়।
যাদবপুরের প্রাক্তন সাংসদ সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী বলেন, “আমি যতটুকু জানি, পূর্বতন জেলা পরিষদের এই বিষয়ে যে পরিকল্পনা ছিল তার কিছু বাদ দিয়েছে বর্তমান জেলা পরিষদ। অথচ, সাড়ে তিন বছরে নতুন কোনও পরিকল্পনা নিতে পারেনি তারা।” প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষমতায় এসে বর্তমান জেলা পরিষদ নতুন কোনও সংযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। জেলা পরিষদের যুক্তি, নতুন করে জল সরবরাহের সংযোগ দিলে নোদাখালি প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়বে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু গ্রামে পাইপলাইন পাতা হয়েছে বছর দুই। কিন্তু জলের সংযোগ এখনও দেওয়া হয়নি।
বারুইপুর-আমতলা রোড সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের এই সমস্যার সমাধান নিয়ে কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, যদি কোনও দিন নোদাখালির মতো আরও একটি নতুন জলপ্রকল্প নির্মাণ করা যায় তা হলে এই সমস্যার সুরাহা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের তরুণ রায় এই সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, “নোদাখালি জলপ্রকল্পটিতে কিছু ত্রুটি রয়ে গিয়েছে। তার জন্যই মানুষের এই দুর্ভোগ। এই ধরনের আর একটি প্রকল্পের প্রয়োজন রয়েছে।” তবে জেলা জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অবনী মণ্ডল বলেন, “আগামী মার্চের মধ্যেই বারুইপুর-সোনারপুর গ্রামীণ অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকায় এই সমস্যার সুরাহা হয়ে যাবে বলে আশা করছি।”

ছবি: পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.