|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসাত
সংস্কার কবে |
রুদ্ধ নগর |
সত্যজিৎ চক্রবর্তী |
বর্ষা নয়, শীতকাল। তবু এই শুকনো মরসুমেও বারাসতের রাস্তার দু’ধারের নর্দমার নোংরা জল উপচে পড়ছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে। শহরের অধিকাংশ নর্দমাই প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ও আবর্জনায় আটকে। নিকাশি ব্যবস্থার এই হাল ফেরাতে পুরসভা উদ্যোগী নয় বলে বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন।
দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় বারাসত পুর এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, টাকি রোড এবং যশোহর রোডের পাশের বড় নর্দমাগুলি ভরাট হয়ে সরু নর্দমায় পরিণত হয়েছে। যশোহর রোডের চাঁপাডালি মোড় থেকে কাজিপাড়া রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের নর্দমার উপর বাঁশের পাটাতন পেতে পান-বিড়ির দোকান থেকে হোটেল, সবই বসে। ওই পাটাতন সরিয়ে পুরসভার সাফাইকর্মীরা নর্দমা পরিষ্কার করেন না। দিনের পর দিন জমে থাকা আবর্জনা পচে কাদায় পরিণত হয়ে এবং সঙ্গে অসংখ্য প্লাস্টিক জমে নর্দমা ভরাট হয়ে উঠছে। কোথাও আবার দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় নর্দমা বুজে গিয়ে প্রায় সমতলে পরিণত হয়েছে, তৈরি হয়েছে হেলেঞ্চা, কলমির জঙ্গল।
|
|
পাশাপাশি, যশোহর রোডের ধারে বড় নর্দমা বুজে যাওয়ায় বারাসতের সরকারি আবাসনের জল বার হতে পারছে না। ওই জল জমা হচ্ছে আবাসনের ভিতরে ভবনগুলির পাশে। বাধ্য হয়ে আবাসনের বাসিন্দারা ইট বসিয়ে রাস্তা উঁচু করে যাতায়াত করছেন। ওই আবাসনের সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, “আবাসনের জল বাইরের যে নর্দমায় পড়ে, দীর্ঘ দিন তা পরিষ্কার করা হয়নি। ফলে আবাসনের ভিতরকার নর্দমাগুলিও জলে ভরে আছে। আর সেই জল উপচে ছড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। বারাসত পুরসভাকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাইরের নর্দমা সংস্কার
করেনি পুরসভা।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত বর্তমান পুরসভা এখনও পর্যন্ত নর্দমা সাফাইয়ে বিশেষ উদ্যোগী হয়নি। কোথাও সাফাই হলেও সেই সময় কাউন্সিলর বা পুরকর্মীরা উপস্থিত থাকেন না। ফলে কাজ ঢিমেতালে চলে বলে অভিযোগ। অন্য দিকে পুরসভার অভিমত, বাম আমলে পরিকল্পনাবিহীন ভাবে তৈরি নর্দমা আর অসচেতন এলাকাবাসীদের জন্যই বারাসত পুর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে নাজেহাল হতে হয় পুরকর্মীদের।
এলাকার বাসিন্দা দুলাল আইচ বলেন, “বারাসত পুরসভা অজুহাত দেখিয়ে নিকাশির সমস্যা ঢাকতে চাইছে। পুরসভা দায়িত্ব নিয়ে নর্দমা সাফাই করলে শীতকালে নর্দমায় জল জমত না। এর পরেও সংস্কার না হলে আগামী বর্ষায় সমস্যায় পড়তে হবে।” আর এক বাসিন্দা তন্ময় বিশ্বাসের কথায়: “বারাসতে এর আগে কোনও দিন শীতকালে ভরা নর্দমা দেখিনি। পুরসভায় সক্রিয় ওয়ার্ড কমিটি না থাকার জন্যই হয়তো সাফাইকর্মী ও সুপারভাইজারদের মধ্যে গাফিলতি দেখা যায়। পুরকর আদায়ের মতোই সাফাইয়ের কাজেও পুরসভা তৎপর হলে ভাল হয়।”
|
|
বারাসত পুরসভার ৩২টি ওয়ার্ডের প্রায় সর্বত্রই নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের রত্না ভট্টাচার্য বলেন, “যথেষ্ট সংখ্যক সাফাইকর্মী না থাকায় ওয়ার্ডের ভিতরের নর্দমা পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। নর্দমাগুলি সংস্কার না করলে নিকাশি সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হবে না। শহরের নর্দমাগুলির মাস্টার প্ল্যান তৈরি করে সব পরিষ্কার করতে হবে।” ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের কাজরী মৃধার কথায়: “পুরসভায় নানা রকম কাজ চলায় বেশি সংখ্যক সাফাইকর্মী মিলছে না। তবে প্রায় রোজই নর্দমা সাফাই করা হয়। সুপারভাইজারেরা সাফাইকর্মীদের কাজ দেখেন। তবে বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি না করা গেলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন।” আবার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৃণমূলের প্রদীপ ঘরামী বলেন, “সময়মতো নর্দমা পরিষ্কার করলেও জল জমে। নর্দমার গভীরতা সর্বত্র সমান না হওয়ায় জল সরছে না। তবে কোথাও জল জমার খবর পেলে সাফাইকর্মী পাঠিয়ে নর্দমা পরিষ্কার করাই। তবে নর্দমা সংস্কারের কাজটি পুরসভার। ইতিমধ্যেই কিছু বড় নর্দমা সংস্কার করা হয়েছে।”
|
|
বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে যত্রতত্র ময়লা, আবর্জনা না ফেলার নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছি। অসচেতন বাসিন্দারা যাবতীয় প্লাস্টিকের প্যাকেট নর্দমায় ফেলছেন। সকালে নর্দমা পরিষ্কার করলে বিকেলে তা ভরে ওঠে। বারাসত জেলা সদর শহর গড়ে ওঠার সময়ে পূর্বতন বামফ্রন্ট পরিচালিত পুরসভা পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থার পরিকাঠামো তৈরি না করাতেই এই সমস্যা। বর্তমানে শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এই সমস্যা চরমে উঠেছে।” তাঁর আরও বক্তব্য, “বছরে এক এক জন কাউন্সিলরকে নিকাশির জন্য দেড় থেকে আড়াই লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু, ২০১০-১১ আর্থিক বছরে পুরসভার ৩২টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরেরা সেই টাকা ব্যয় করতে পারেননি।”
যদিও আগের বোর্ডের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করে বারাসত পুরসভার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান ফরওয়ার্ড ব্লকের সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুর এলাকার সর্বত্র কাঁচা ও পাকা নর্দমা তৈরি করেছি। নিয়মিত সাফাইও করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে নিয়মিত সাফাইয়ের অভাবে শীতকালেও নর্দমায় জল জমে রয়েছে।”
|
ছবি সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|