সরকারি নির্দেশ মেনে নিজেদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসেব নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে জমা না দিলে পরের মাসের বেতন পাবেন না সরকারি কর্মী-অফিসাররা। কড়া নির্দেশ জারি করল নীতীশ সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী-সহ মন্ত্রীরা আগেই তাঁদের সম্পত্তির হিসেব জমা দিয়েছেন। সরকারি ওয়েবসাইটে তা প্রকাশও করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরই তা দিতে হবে। একই ভাবে রাজ্য সরকারের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির সব কর্মী-অফিসারকেও একই ভাবে সম্পত্তির হিসেব চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই নির্দেশের আওতায় আনা হয়েছে রাজ্যর সব শিক্ষককেও। এ বার তা রূপায়ণে নেমে কঠোর মনোভাব নিল সরকার। আইএএস এবং আইপিএস-দের ক্ষেত্রে ৩১ জানুয়ারি এবং অন্য কর্মীদের ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই নির্দেশ অনুযায়ী চলার জন্য বলা হয়েছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসার এবং কর্মচারিরা দফতরের প্রধানের কাছে তাঁদের সম্পত্তির হিসেব জমা দেবেন। এই হিসেব জনসাধারণের জানার জন্য সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। তবে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে তা না করলে পরের মাসের বেতন আটকে দেওয়া হবে।
মূলত সরকারি ক্ষেত্রে দুর্নীতি ঠেকাতেই নীতীশ কুমার দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই জনসাধারণকে হিসেব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথম দফায় মন্ত্রিসভা ও বিধায়কদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। তারপরে সরকারি কর্মী-অফিসারদের ক্ষেত্রেও তা বলবৎ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি বছরই এই রিটার্ন প্রকাশ করতে হবে। নীতীশের ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য: সাধারণ মানুষ এ বছরের সঙ্গে পরের বছরের হিসেবের তুলনা করে দেখতে পারবে। এ ছাড়াও প্রকাশিত হিসেবের সঙ্গে যদি বাস্তবের ফারাক থাকে তবে তা সব থেকে ভাল বুঝতে পারবে স্থানীয় মানুষই। সে ক্ষেত্রে তারা নাম গোপন রেখেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে পারবে।
এ ক্ষেত্রে কেবলমাত্র চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারিদের ছাড় দেওয়া হয়েছে। গত বছর এই বিজ্ঞপ্তি জারির পরে কয়েকজন আইএএস ও আইপিএস অফিসার তাঁদের সম্পত্তির হিসেব জমা দিতে নারাজ ছিলেন। এই নিয়ে কিছুটা বিতর্কও হয়। তাঁদের যুক্তি ছিল, নিয়ম অনুযায়ী এই অফিসাররা প্রতি বছরই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁদের সম্পত্তির হিসেব জমা করে থাকেন। তা হলে নতুন করে ফের রাজ্যকে কেন দিতে হবে? এই প্রশ্ন তুলে কয়েকজন অফিসার প্রথম দিকে তাঁদের সম্পত্তির হিসেব জমা দেননি। উপর তলার সরকারি কমর্চারিরা যদি এই নিয়ম না মানেন তা হলে নীচু তলায় যে অন্য রকম বার্তা যেতে পারে এটা বুঝেই শেষ পর্যন্ত গত বছর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে তাঁদের হিসেব জমা
করানো হয়।
এ বারেও একই নিয়ম কার্যকর করা হচ্ছে। প্রশাসনিক দফতরের প্রধান সচিব দীপক কুমার বলেন, “আইএএস এবং আইপিএস অফিসাররা ৩১ জানুয়ারি এবং অন্য সরকারি অফিসার ও কর্মচারিরা ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিজেদের সম্পত্তির হিসেব জমা করবেন।” তিনি বলেন, “প্রতিটি দফতরের প্রধানের কাছে সংশ্লিষ্ট কর্মচারিরা তাঁদের হিসেব জমা করবেন। গত বছরের মতো এবারেও একই পদ্ধতিতে এটা করা হচ্ছে।”
রাজ্যের এক জন সিনিয়র আইপিএস অফিসার বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারকে আমরা প্রতি বছরেই হিসেব দাখিল করি। কিন্তু রাজ্য সরকার গত বছর এই নিয়ম জারির পরে আমাদেরই কয়েকজনের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ ছিল। এবার হয়তো তেমন কিছু হবে না।” কোনও আইএএস বা আইপিএস যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পত্তির হিসেব জমা না দেন তা হলে তাঁর ক্ষেত্রেও কি মাইনে কাটা যেতে পারে? সরকারি এক সূত্রের কথায়, “এই নিয়ম সকলের ক্ষেত্রে একই ভাবে প্রযোজ্য হবে।” প্রশ্ন উঠেছে যে কাজ আয়কর দপ্তরের তা রাজ্য কেন করছে? তার জন্য বেতন আটকানোর ক্ষমতা রাজ্যের আছ কী না প্রশ্ন তা নিয়েও। সরকারি এক কর্তার বক্তব্য মামলা হলে দেখা যাবে। |