পাঁচ রাজ্যের ভোট গ্রহণ পর্ব শুরু হতে বিশেষ বাকি নেই। তার আগে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদ এবং নির্বাচন কমিশনের মধ্যে বিতর্ক প্রকাশ্যে এসে পড়ল। যদিও কেন্দ্র ও নির্বাচন কমিশনের এই প্রকাশ্য মতান্তরের মধ্যে অন্য পরিকল্পনা দেখছে বিরোধী শিবিরের একাংশ।
কমিশন সূত্রে খবর, সংবাদমাধ্যমে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রীর সাম্প্রতিক একটি মন্তব্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি। সিবিআই-কে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার ব্যাপারে অণ্ণা হজারেদের দাবি প্রসঙ্গে সলমন বলেছিলেন, “নির্বাচন কমিশনও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কিছুটা হলেও কমিশনের উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কম বেশি সব প্রতিষ্ঠানের উপরেই সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকে।” সলমনের ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই কুরেশি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন। চিঠিতে তাঁর বক্তব্য, আইন মন্ত্রীর এহেন প্রকাশ্য মন্তব্য নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্ব সম্পর্ককে ধারণাকে লঘু করছে। জবাবে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে মনমোহন জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্ব প্রশ্নাতীত। এ ব্যাপারে কোনও সংশয় তৈরি হলে সরকার অবশ্যই তা নিরসনের জন্য পদক্ষেপ করবে। |
কমিশন ও কেন্দ্রের মধ্যে বিতর্ক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে, কুরেশি আজ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠানো হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার প্রতিপাদ্য সাধারণ বিষয়। সলমন খুরশিদের সাম্প্রতিক মন্তব্যের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই।” তাঁর কথায়, সংখ্যালঘু সংরক্ষণের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীকে যে নোটিস কমিশন পাঠিয়েছে তার জবাবও সলমন দিয়েছেন। কমিশন সেই জবাব এখনও খতিয়ে দেখেনি। জানা গিয়েছে, সলমন তাঁর জবাবে লিখেছেন, সংখ্যালঘু সংরক্ষণ নিয়ে তিনি কোনও ঘোষণা করেননি। প্রচারে গিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন মাত্র। এ ছাড়া ২০০৯ সাল থেকেই কংগ্রেসের ভোট ইস্তেহারে বিষয়টি আছে। আর তিনি যখন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন, তখন কোনও প্রার্থী সেখানে হাজির ছিলেন না। ঘটনা হচ্ছে, সেই সময়, তাঁর স্ত্রী, ফারুখাবাদের বিধায়ক লুই সেখানে হাজির থাকলেও আসন্ন নির্বাচনে তিনি এখনও মনোনয়ন দাখিল করেননি। ফলে আইনত লুইস এখনও প্রার্থী নন।
তবে বিজেপি, সমাজবাদী পার্টি-সহ বিরোধী শিবিরের একাংশের অভিযোগ, কেন্দ্র ও কমিশনের মধ্যে এই বিতর্ক সাজানো। কারণ, বসপা, সপা থেকে বারবারই বলা হচ্ছে, কমিশন কংগ্রেসের অঙ্গুলিহেলনে চলছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক কমিশনের ওপর প্রভাব খাটাচ্ছে বলে অভিযোগ। কিন্তু সেই সব অভিযোগের জবাব না দিয়ে একটি বিতর্ক তৈরি করে সবাইকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা দেখানো হচ্ছে যে আদতে আইনমন্ত্রক ও কমিশনের মধ্যে এখন ঘোর বিরোধ চলছে। সরকার তথা কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য, প্রকৃতপক্ষে সলমন ও কমিশনের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে। আরও একটি ঘটনার কথাও তুলে ধরা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার কুরেশি দিল্লির কাছে গুড়গাঁওতে একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যেখানে নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক তাতে সাড়া দেয়নি। বিদেশ মন্ত্রকও আপত্তি জানিয়েছে। এই বিষয়টি নিয়েও দু’পক্ষের বিরোধের ইঙ্গিত দিচ্ছে ওই মহল। |