‘নীল দিগন্তে’ নাকি ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’? কেন্দ্র আর রাজ্যের মধ্যে এ বার গানের ‘লড়াই’!
এক দশকেরও বেশি সময় পরে রাজধানীর প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। ট্যাবলোর থিম, শান্তিনিকেতন। ইন্ডিয়া গেটের পাশ দিয়ে ট্যাবলো যখন যাবে, তার পাশে এক দল তরুণ-তরুণী বসন্ত উৎসবের সাজে নাচতে নাচতে এগোবেন। কোন গানের সঙ্গে নাচবেন? তাই নিয়ে রাজ্য সরকার ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দু’রকম মত।
রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী-বিদেশি অতিথির মঞ্চের সামনে দিয়ে ট্যাবলোটি পেরিয়ে যেতে সময় লাগবে মাত্র ৬৫ সেকেন্ড। ওই সময়টুকুই বাজবে গান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছা, বসন্ত-উৎসবের আমেজ ফুটিয়ে তুলতে ‘নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন লাগল’ গানটি বেছে নেওয়া হোক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটির বক্তব্য, ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’ বেশি মানানসই হবে। ‘আজি দখিন দুয়ার খোলা’ও তাঁদের পছন্দের তালিকায় ছিল। কিন্তু রাজ্য ‘নীল দিগন্তে’-ই অনড়। আজকেও বৈঠক হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আগামী সপ্তাহে ফের বৈঠক হবে। এনডিএ জমানা থেকে কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। পোখরানে পরমাণু বোমা পরীক্ষার পরের বছর ১৯৯৯ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে ‘পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব’ থিম করে ট্যাবলো করতে চেয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। এনডিএ সরকার তা অনুমোদন করেনি। সেই থেকে রাজ্য সরকার প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ
নেওয়াই বন্ধ করে দেয়। সেই অভিমানের পালা এ বারই শেষ হচ্ছে। পালাবদলের পরে আবার ইন্ডিয়া গেটের পাশ দিয়ে পার হবে পশ্চিমবঙ্গের ট্যাবলো।
মহাকরণ সূত্রের বক্তব্য, মমতা প্রথম থেকেই এই বিষয়ে উৎসাহ দেখিয়েছেন। প্রথমে তাঁর ইচ্ছা ছিল, ‘জঙ্গলমহল’ ও ‘দার্জিলিং’-কে ট্যাবলোয় তুলে ধরা। ক্ষমতায় এসে এই দু’টি এলাকার সমস্যা সমাধানেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য থিম হিসেবে চূড়ান্ত হয় ‘শান্তিনিকেতন’ই। ট্যাবলোর নকশা করেন শিল্পী বাপ্পাদিত্য চক্রবর্তী। সেটি কেন্দ্রের অনুমোদনও পায়। মমতা চান, ওই ট্যাবলোর সঙ্গে বাজুক ‘নীল দিগন্তে’। ওই গানের সঙ্গেই থাকুক শান্তিনিকেতনী শৈলীর নাচ।
ট্যাবলো নিয়ে এমনিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞ কমিটির মতই শেষ কথা। কিন্তু রাজ্যের প্রতিনিধিরা কমিটিকে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। তাতেই চাপে পড়েছেন কমিটির কর্তারা। কারণ কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এত খুঁটিনাটি বিষয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন, এমন অভিজ্ঞতা তাঁদের নেই। তবে ট্যাবলো নিয়ে মমতার সঙ্গে দ্বিমতের অভিজ্ঞতা তাঁদের আগেও হয়েছে। মমতা রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশতবর্ষে রেল মন্ত্রক রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ট্যাবলোর পরিকল্পনা করেছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রশ্ন ছিল, রেলের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কে কোথায়? মমতা সে বারও অনড় ছিলেন। শেষে খোদ প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনিকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। জিত হয় মমতারই।
এ বার রবীন্দ্রনাথ না হলেও, বিতর্কের কেন্দ্রে তাঁরই শান্তিনিকেতন। তথ্য-সংস্কৃতি দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “আগের সরকারের মতো নতুন মুখ্যমন্ত্রী গোঁসা করে লড়াই থেকে সরছেন না। বাম আমলে সেটাই হয়েছিল।” আশা, শেষ পর্যন্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কর্তারা সৌজন্যের খাতিরে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাই মেনে নেবেন। দিল্লিতে নিযুক্ত রাজ্যের আধিকারিকরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লি আসতে পারেন। এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি অবশ্য। |