পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির পরে তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্টই উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একান্ত আলোচনায় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে সেই উদ্বেগের কথা তিনি জানিয়েছেন। ‘ভগ্নিসমা’ মমতার সঙ্গে আলোচনায় বসে সমস্যা মিটিয়ে ফেলার পরামর্শই হাসিনাকে দিয়েছেন বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী। সেই পরামর্শ যে তিনি শিরোধার্য করছেন, প্রকাশ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন হাসিনা।
শেখ হাসিনার সদ্যসমাপ্ত আগরতলা সফরে ত্রিপুরা তথা উত্তরপূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার শিল্প যোগাযোগের সম্ভাবনা অনেকটাই চাঙ্গা হয়েছে। কিন্তু তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আশঙ্কা কাটছে না। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সবিস্তার আলোচনা করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে মানিকবাবু বলেছেন, তৃণমূলনেত্রী হাসিনার ‘ভগ্নিসম’ বলেই তাঁর ধারণা। ফলে মমতার সঙ্গে বসে বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনায় বসতে কোনও সমস্যা থাকার কথা নয়। এক মাত্র আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান মিলতে পারে। শেখ হাসিনাও জানিয়েছেন, তিনিও সেটাই মনে করেন। |
প্রকাশ্যে অবশ্য মানিকবাবু তিস্তা চুক্তি সম্পর্কে বলেছেন, “জলবণ্টন চুক্তিটি হলে নিশ্চয়ই ভাল হবে। মতভেদদের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান পাওয়া যাবে বলে আমি আশাবাদী। তবে বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কী সমস্যা রয়েছে, আমার পক্ষে তা বলা সম্ভব নয়।” অন্য দিকে শেখ হাসিনা তাঁর ত্রিপুরা সফরে বার বারই ‘পানিবণ্টন ব্যবস্থা’ নিয়ে সরব হয়েছেন। অসম রাইফেলস-এর মাঠে গণ-সংবর্ধনার উত্তরে তিনি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেছেন, “আলোচনায় সব সমস্যার সমাধান হয়। গঙ্গা চুক্তির সময়েও আলোচনা করেই এগিয়েছি। ভবিষ্যতেও হবে।” মমতার সঙ্গে তিনি নিজে দেখা করবেন কি না, বা ভবিষ্যৎ-আলোচনার রূপরেখা কী হবে, তা খুব শীঘ্রই হাসিনা সরকার স্থির করবে বলে জানা গিয়েছে।
হাসিনার ত্রিপুরা সফরকে ‘রাজনৈতিক জয়’ হিসাবে দেখাতে চাইছেন না মানিকবাবু। ঠিক একই সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু সেটি বাতিল করে আগরতলাতেই আসেন মুজিব-কন্যা। মানিকবাবু সেই বিতর্ক এড়িয়ে গিয়ে শুধু বললেন, “বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার বিশেষ স্থান রয়েছে। এটা তো অহঙ্কারের কথা নয়, এতিহাসিক সত্য। মুজিবর রহমানের কন্যা যে আগরতলায় আসবেন, সেটাই তো প্রত্যাশিত।” শুধু হাসিনা-সফরের বিষয়টিই নয়, কোনও ক্ষেত্রেই তৃণমূল নেত্রীকে এখনই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চাইছেন না ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। মমতা সরকারের গত সাত মাসের কাজ সম্পর্কে তাঁর সাবধানী জবাব, “পশ্চিমবঙ্গের মানুষই এ ব্যাপারে শেষ কথা বলবেন। তবে এখনই পশ্চিমবঙ্গের নতুন সরকার সম্পর্কে শেষ কথা বলার সময় আসেনি।” পশ্চিমবঙ্গে ‘পরিবর্তনের’ হাওয়ায় বামপন্থীরা খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছে, এমনটা মনে করেন না মানিকবাবু। বাম ভোট কেন এত কমে গেল জানতে চাওয়ায় তাঁর জবাব, “সব সময় সাফল্য বা লাভক্ষতির হিসাব সংখ্যায় হয় না। এত ঝড় তোলা হল, কত কিছু বলা হল, তার পরেও পশ্চিমবঙ্গে ৪১ শতাংশ মানুষের সমর্থন আমরা পেয়েছি। এই বিরাট সংখ্যক মানুষ আমাদের কেন ভোট দিলেন, সেটাও তো ভাবতে হবে। রাজ্য থেকে বামেরা ধুয়ে মুছে গিয়েছে, এমন ধারণা তাই ঠিক নয়।” |