বাম সরকারের নিয়মের গেরোয় বিপাকে রাজ্যের ট্রান্সফর্মার ব্যবসা
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের রাজত্বের ‘তুঘলকি’র মাসুল গুনতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে।
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে প্রণীত এক নিয়মের ফলে এ রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষুদ্রশিল্প সংস্থা তাদের তৈরি ট্রান্সফর্মার বিক্রি করতে পারে না পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের (ডবলিউবিএসইডিসিএল) কাছে। ক্ষমতা ‘পরিবর্তনে’র পরেও সে নিয়মের কোনও বদল হয়নি। রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন নিগম কিনছে ভিনরাজ্যের শিল্প সংস্থার তৈরি ট্রান্সফর্মার। ফলে, একদিকে এ রাজ্যের ট্রান্সফর্মার শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৪০ হাজার মানুষের রুজি-রোজগার কার্যত বন্ধ হতে বসেছে। অন্যদিকে ভ্যাট, উৎপাদন শুল্ক বাবদ রাজ্য সরকার প্রায় ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ট্রান্সফর্মার প্রস্তুতকারকরাই রাজ্যের ওই ক্ষতির কথা জানিয়েছেন।
ট্রান্সফর্মার কেনার সময় রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর থেকে দরপত্র (টেন্ডার) আহ্বান করা হয়। কিন্তু রাজ্যের ট্রান্সফর্মার প্রস্তুতকারী সংস্থার প্রতিনিধিদের বক্তব্য, গত পাঁচ বছর ধরে বিদ্যুৎ দফতর দরপত্র নেওয়ার সময়ে একটা ‘বিক্রয় নীতি’ মেনে চলেছে। সেই নীতির শর্ত অনুসারে, প্রস্তুতকারী সংস্থার বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ ন্যূনতম ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা হতে হবে। তবেই সেই সংস্থা ওই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে। দীপক সেনগুপ্ত বা অসিত কুমার বৈশ্যর মতো ট্রান্সফর্মার প্রস্তুতকারারী প্রশ্ন তুলছেন, “একটা ক্ষুদ্রশিল্প সংস্থার পক্ষে এই বিশাল অঙ্কের টাকার লেনদেন করা সম্ভব নয়। এটা একটা তুঘলকি নিয়ম।”
এর ফলে এ রাজ্যে ক্ষুদ্রশিল্পের আওতাভুক্ত ট্রান্সফর্মার প্রস্তুতকারকরা টেন্ডার প্রক্রিয়াতেই অংশ নিতে পারছেন না। সেই সুযোগে মূলত অন্ধ্রপ্রদেশের হায়দরাবাদের একটি বৃহৎ শিল্পসংস্থা বরাত পাচ্ছে এবং রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরকে ট্রান্সফর্মার বিক্রি করছে। মাঝেমধ্যে উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের একটি সংস্থাও বরাত পাচ্ছে। চলতি মাসেও রাজ্য বিদ্যুৎ দফতর প্রায় ১১ হাজার ট্রান্সফর্মার কেনার জন্য ১০১ কোটি টাকার দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এক ট্রান্সফর্মার প্রস্তুতকারকের মন্তব্য, “ওই টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয়।”
বিষয়টি রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং ক্ষুদ্রশিল্প মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার কাছেও পৌঁছেছে। মণীশবাবু বলেন, “বিষয়টি জানি। দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ওঁরা আমায় জানান, গুণগত কারণেই এখানকার সংস্থাদের না-দিয়ে বাইরে বরাত দেওয়া হয়।’’ তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থার জন্য বছরে বাধ্যতামূলক প্রায় ২০ কোটি টাকার লেনদেনের বিষয়টি মন্ত্রীর জানা নেই। ওই বিষয়ে তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন।
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আমি ট্রান্সফর্মার প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলব। মণীশবাবুর সঙ্গেও আলোচনা করব। কারণ, আমরা রাজ্যে শিল্পের প্রসার চাই। সেখানে চালু শিল্প, যেখানে অজস্র মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, তা বন্ধ হতে দেওয়া যায় না।” মানসবাবু জানান, তিনি শীঘ্রই ট্রান্সফর্মার প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা করবেন এবং ‘ভুক্তভোগী’ প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রীর কাছে সমস্যা মেটানোর আর্জি জানাতে যাবেন। মানসবাবুর কথায়, “ওই সংস্থাগুলি তো আমার দফতরের আওতায়। ওরা সমস্যায় পড়লে আমায় তো দেখতেই হবে!”
দীপকবাবু-অসিতবাবুদের অভিযোগ, সমস্যাটি তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশবাবু, শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু থেকে শুরু করে রাজ্যের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন। কিন্তু সরকারের তরফে কার্যকরী
ব্যবস্থা তো দূরস্থান, চিঠির কোনও উত্তরও দেওয়া হয়নি।
অসিতবাবু বলেন, “বাম সরকারের আমলে হায়দরাবাদের একটি বিশেষ সংস্থাকে একচেটিয়া ভাবে ট্রান্সফর্মার সরবরাহের বরাত পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা কেন হয়েছিল, তা-ও তদন্ত করে দেখার জন্য আমরা রাজ্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি।” দীপকবাবু বলেন, “আশ্চর্য হল, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বেশির ভাগ রাজ্যে বাইরের কোনও সংস্থার কাছ থেকে ট্রান্সফর্মার কেনা হয় না।
মূলত স্থানীয় সংস্থার কাছ থেকেই কেনা হয়।
ফলে পশ্চিমবঙ্গের সংস্থাগুলি ভিনরাজ্যেও ট্রান্সফর্মার বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে না। তাঁরা আরও জানান, গত দু’বছর বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহযোগিতায় কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্পের কাজে ট্রান্সফর্মার সরবরাহ করে তাঁদের সংস্থাগুলি টিকে ছিল।
সেই প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়ায় আপাতত তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.