দিঘাকে ‘গোয়া’ করেই থেমে থাকতে চান না তিনি। দিঘা-মন্দারমণিকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে চায় তাঁর সরকার। শুক্রবার বিকেলে দিঘায় ‘সৈকত উৎসব’-এর উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “বাঙালি ঘুরতে বাইরে যায়। এ বার বাংলার বাইরে থেকে মানুষ আসবেন এ রাজ্যের পাহাড়, জঙ্গল, সাগরে। পর্যটন থেকে রাজস্ব-আয় বাড়বে। সিনেমার স্যুটিং করতেও আর বাইরে যেতে হবে না।” তাঁর কথায়, “বলেছিলাম দিঘাকে গোয়া করব। এখন বলছি, তার চেয়েও এগিয়ে ভাবতে চায় সরকার।” |
বৃহস্পতিবারই ঝাড়গ্রামে জঙ্গলমহল উৎসবের সমাপ্তি দিনে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়ার ঝিলিমিলি, জয়পুর জঙ্গল, শুশুনিয়া পাহাড়, পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়কে ঘিরে পর্যটন-সার্কিট গড়ার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ঝাড়গ্রাম থেকে সরাসরি সে দিন বিকেলেই দিঘায় পৌঁছন মমতা। সন্ধ্যায় মন্দারমণিও ঘুরে আসেন। সেখানে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রতিনিধি, প্রশাসনিক আধিকারিক, হোটেল-লজের পরিচালকদের সরাসরিই বলেন, “সৈকতে বেআইনি নির্মাণ বরদাস্ত করবে না সরকার। পরিবেশ ও উপকূল-বিধি কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে।” মন্দারমণিতে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। সৈকতের পরিবেশ ধ্বংস যে আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র গড়ার পথে বাধাসেটাই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী রাত্রিবাস করেন দিঘায় বিদ্যুৎ দফতরের বাংলোয়। শুক্রবার দুপুরে তাঁর প্রথম কর্মসূচি ছিল জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক। বৈঠকটি হয় ওডিশা-সীমানায় দত্তপুরে মৎস্য দফতরের গেস্ট হাউসে। হাজির ছিলেন মুখ্যসচিব সমর ঘোষ-সহ একাধিক আমলা ও সেচমন্ত্রী মানস ভুইয়া, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম-সহ আট-আট জন মন্ত্রী। ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের দুই সাংসদ শিশির ও শুভেন্দু অধিকারী, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। |
দিঘায় সৈকত উৎসবের উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। |
উন্নয়নের নানা প্রকল্প-পরিকল্পনা নিয়ে মন্ত্রী, সচিব, জেলাশাসক, এসডিও, বিডিও-দের সঙ্গে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। দিঘা উপকূলের ভাঙন রোধে পরিবেশ, সেচ, পর্যটন, নগরোন্নয়ন দফতর মিলে সুসংহত পরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে।
প্রশাসনিক বৈঠক শেষে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ উৎসব-মঞ্চে পৌঁছন সপার্ষদ মুখ্যমন্ত্রী। অভিনেত্রী পাওলি দামও তখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। প্রদীপ জ্বেলে চার দিনের উৎসবের উদ্বোধন করেন মমতা। উৎসব উপলক্ষে আলোকমালায় সেজেছে দিঘা। আয়োজন হয়েছে ওয়াটার স্পোর্টসের। সৈকতে টেন্টের ব্যবস্থাও হয়েছে। দু’মাসের প্রস্তুতিতে উৎসবের যে আয়োজন হয়েছে, তাতে তিনি যে ‘খুশি’, নিজের বক্তৃতায় তা জানিয়ে দেন মমতা। তাঁর বক্তৃতার সময়ে উৎসব-মঞ্চ ঘিরে হাজার কুড়ি মানুষের ভিড় বক্তৃতা শেষেই পাতলা হতে শুরু করে। মুখ্যমন্ত্রী যদিও রাত্রিবাস করছেন সৈকত শহরেই। আজ, শনিবার ফিরবেন কলকাতায়। |