|
|
|
|
রামপুরহাট কলেজ |
অভিযোগের তদন্তে আসিনি, বলল পরিদর্শকদল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট |
কলেজ-কাণ্ডে ফের বিড়ম্বনায় রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার রামপুরহাট কলেজের অধ্যক্ষ শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের টিএমসিপি এবং ছাত্র পরিষদের হাতে হেনস্থা হওয়া ইস্তক আশিসবাবু দাবি করে আসছিলেন, ওই অধ্যক্ষ আর্থিক ‘দুর্নীতি’তে জড়িত এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তদন্তকারী দল আসবে ওই অভিযোগের তদন্তে। তদন্তকারী দলের মুখোমুখি হওয়ার ‘ভয়েই’ অধ্যক্ষ অসুস্থ হওয়ার ‘নাটক’ করেছেন বলেও দাবি ছিল বিধায়কের। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের যে পরিদর্শক দলটি শুক্রবার কলেজে এসেছিল, তার সদস্যেরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কারও কোনও অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা তদন্তে আসেননি। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘রুটিন কাজ’। অধ্যক্ষের সঙ্গে পরিদর্শক দলের দীর্ঘক্ষণ বৈঠকও হয়েছে। |
|
পরিদর্শক দলের মুখোমুখি অধ্যক্ষ। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম। |
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ‘স্ট্যাটুটারি ইনস্পেকশন টিম’-এর আহ্বায়ক তথা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ সমূহের উপ-পরিদর্শক সুজিত চৌধুরী এ দিন কলেজ চত্বরে দাঁড়িয়েই বলেন, “কারও অভিযোগ পেয়ে আমরা এ দিন কলেজে কোনও তদন্তে আসিনি। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত কর্মসূচির মধ্যেই পড়ে।” রামপুরহাট কলেজের পরিচালন সমিতির সরকার মনোনীত প্রতিনিধি আব্দুল মোকিদ গত বছর নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রাজ্যের শিক্ষাসচিব-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ করেছিলেন। এ দিন পরিদর্শক দলের বক্তব্য শুনে আশিসবাবুর প্রতিক্রিয়া, “আমরা জানি, ওই দলের সদস্যেরা দুর্নীতির তদন্ত করতেই এসেছে। তাঁরা যা বলছেন, তা তাঁদের অভিমত। তবে এ ব্যাপারে আব্দুল মোকিদের সঙ্গে কথা বলা ভাল। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে উনিই অভিযোগ করেছিলেন।”
আব্দুল মোকিদের আবার দাবি, তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই দলটি কলেজে এসেছে। এ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ শিবাশিসবাবুর কটাক্ষ, “আমাকে যাঁরা পরিদর্শক দলের মুখোমুখি না হওয়ার জন্য ‘নাটক করছি’ বলছিলেন, তাঁরা এ বার নিশ্চয় বুুঝতে পারলেন, আমি কোনও কিছু থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি না। কোনও নাটকও করিনি।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, নানা বাধা ও জটিলতায় কলেজের উন্নয়নের পৌনে ২ কোটি টাকা এখনও খরচ করা যায়নি। এটাকেই কোনও কোনও মহল থেকে দুর্নীতি বলে প্রচার করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার কলেজে এসএফআই-টিএমসিপি মারামারি হয়। অধ্যক্ষ-হেনস্থার ঘটনার সূত্রপাত সেখান থেকেই। দু’পক্ষ পরস্পরের ১১ জনের (এসএফআই ৪, টিএমসিপি ৭) বিরুদ্ধে অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগ করেছিল। অধ্যক্ষ পুলিশের কাছে সেই অভিযোগ পাঠালে তার ভিত্তিতে মামলা হয়। সেই প্রেক্ষিতে কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সফিউল ইসলাম, সহ-সভাপতি অভিষেক পারিয়া-সহ অভিযুক্ত এসএফআই নেতা-সদস্যেরা এ দিন রামপুরহাট আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাঁদের জামিন মঞ্জুর হয়।
টিএমসিপি-র যে ৭ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ওই সংগঠনের কলেজ ইউনিটের প্রাক্তন সভাপতি, অধ্যক্ষ-হেনস্থায় অভিযুক্ত অমিত ঘোষালও রয়েছেন। অমিত-সহ বাকি অভিযুক্তেরা এখনও আত্মসমর্পণ করেননি। বীরভূম জেলা টিএমসিপি সভাপতি সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রস্তুতি নিতে দেরি হওয়ায় এ দিন সময়মতো ওদের আদালতে হাজির করানো যায়নি। সোমবার ওদের আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করা হবে।” সত্যজিৎবাবুর কথা থেকে স্পষ্ট, দলীয় বিধায়ক যতই অমিতদের ‘স্বঘোষিত টিএমসিপি’ বলুন না কেন, সংগঠন কিন্তু তাঁদের পাশেই রয়েছে। এ সবের মধ্যেই এ দিন থেকে স্বাভাবিক ভাবে কলেজ চালু হয়েছে। তবে অধ্যক্ষের আবেদন মেনে কলেজ চত্বরে পুলিশ মোতায়েন ছিল। অধ্যক্ষ-হেনস্থার ঘটনায় এখনও কেউ ধরা পড়েনি। জেলার পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেছেন, “আমরা ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং সংবাদপত্রের ছবি দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।” কলেজ চত্বরে আপাতত কিছু দিন পুলিশ থাকবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। |
|
|
|
|
|