|
|
|
|
|
|
|
বেড়ানো... |
|
ম্যাচো মরিশাস |
বাংলা ছবির শু্যট। সেখানে এখন ফুরফুরে বসন্ত। হিরো-হিরোইনদের
মতো আপনিও দিন তিনেকের সফরে ঘুরে আসতে পারেন। লিখছেন সুদীপ ঘোষ |
‘ম্যাচো মুস্তাফা’ নাম না হয়ে ছবির নাম ‘কালা পাত্থর’-ও হতে পারত।
যেখানেই প্রেম, সেখানেই উথাল-পাথাল সমুদ্র আছড়াচ্ছে কালো প্রবাল পাথরের খড়খড়ে গায়ে। তার সঙ্গে বাঁই-বাঁই হাওয়া। প্রকৃতির নাটকীয় সব পরিস্থিতি। সূর্য ডুবছে, নীল-সবুজ সমুদ্র আর কালো প্রবাল মিলেমিশে যাচ্ছে। আর তার মধ্যে কোরিওগ্রাফার একটার পর একটা গানের সিচুয়েশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, এ পাথর থেকে ও পাথরে লাফিয়ে লাফিয়ে নায়ক হিরণ আর নায়িকা পূজাকে বোঝাচ্ছেন এক একটা সেট-পিস মুভমেন্ট কী করে তৈরি হবে।
কে বলে মরিশাস কেবল সফেদ বালির দেশ? এ তো উত্তর-দক্ষিণ সব দিকেই কেবল কালা পাত্থর আর রাগী ঢেউ! স্নানের জন্য সমুদ্রতটহাতে গোনা! অর্ধেক জায়গায় ফরাসি আর ইংরেজিতে বড় বড় লেখা ‘সাবধান! সমুদ্র বিপজ্জনক। এখানে স্নান করবেন না।’
বিপদ বলে বিপদ! “এক জায়গায় একটা পাথর সমুদ্রের ওপর ঝুলছে। আর ফুট বিশেক নীচে জল আছড়াচ্ছে। পাথরের ওপর পাশাপাশি দু’টো পা ফেলা যায় না। এদিকে ঢেউয়ের তেজ এমন যে অত ওপরেও ভিজিয়ে দিচ্ছে। সেখানে দাঁড়িয়ে ইমোট করতে হয়েছে। প্রেম পাবে কী, বুক তো ভয়ে ধুকপুক করছে। জীবনে এত রিস্ক নিয়ে কাজ করিনি,” বলছিলেন হিরণ।
কিন্তু এই রিস্কটা নেওয়ার দরকার কী ছিল? “কারণ এই ছবিটা আমার কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। অন্যরা নিজেকে প্রমাণ করার যতটা চান্স আগে পেয়েছে, আমি সেটা পাচ্ছি এখানে। তার জন্য যতটা দরকার দিচ্ছি।”
দিচ্ছেন যে তা সত্যি। এইট-প্যাক তৈরি করেছেন, মরিশাসের মতো দেশে গিয়েও সেদ্ধ মুরগি আর আপেল ছাড়া কিছু খাচ্ছেন না, ভোর চারটে থেকে সন্ধে আটটা পর্যন্ত ৪৫ কিমি বাই ৬৫ কিমির দেশটা চষে বেড়াচ্ছেন ইউনিটের সঙ্গে। আর এত সুন্দর দেশটাকে দেখা? “ওই স্পটে গিয়ে যতটুকু হল। তার বাইরে সময় কোথায়?” হিরণের বক্তব্য। |
|
হিরণ আর পূজা |
তা ঠিক। মরিশাসে শু্যট হয়েছে তিনখানা গান। দশটা দিন হাতে। এদিকে সারা দেশে ছড়িয়ে সাতখানা লোকেশান। আফ্রিকার বিরাট আয়তনের পুবে ভারত মহাসাগর ঘেরা ফুটকির মতো দেশ। একটাই শহর। পোর্ট ল্যুই। হলে কী হবে, উত্তর থেকে দক্ষিণে পৌঁছতেই তো গড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা লেগে যায়!
তা-ও যদি একমাত্র আগে থেকে ঠিক করা লোকেশনেই শু্যট হত। প্রযোজক রেম্যাক ফিল্মসের কর্ণধার পি পি তেওয়ারি তো তা-ও হতে দিচ্ছেন না। “কপি নয়, মৌলিক গল্প। গল্প ওরিজিনাল না হলে আমি ছবি প্রযোজনা করব না ঠিক করেছি। আর সেটাকে ঝকঝকে করতে কোনও আপস করব না,” বলছেন তিনি। নিজে চড়কির মতো ঘুরছেন দ্বীপটা জুড়ে, ইউনিটকেও ঘোরাচ্ছেন। দরকার পড়লে তাৎক্ষণিক প্ল্যান বদলও হচ্ছে। রাতের মিটিংয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে পরদিনের নতুন লোকেশন। এ যেন গানের সঙ্গে সঙ্গে মরিশাসের ট্যুরিস্ট ডকুমেন্টারিও।
কিন্তু মরিশাসে তো আগেও বাংলা ছবির শু্যটিং হয়েছে। আর হিন্দি ছবি তো এখানে জলভাত। অমিতাভ বচ্চন শু্যট করেছেন ক-ত! বলিউডই সবচেয়ে বড় বিনোদন এখনও। পোর্ট ল্যুইয়ের মাল্টিপ্লেক্সে ‘ডার্টি পিকচার’ এর বিরাট পোস্টার। এফ-এমে চলছে ‘ইউ আর মাই ছম্মক ছাল্লো’। তা হলে নতুন আর কী-ই বা দেখাবেন তিনি? “বাংলা ছবি এত ব্যাপকভাবে এখানে তোলা হয় নি। বাঙালি এ ভাবে এখনও মরিশাসকে দেখেনি,” বলছেন প্রযোজক।
আসলে নায়ক, প্রযোজক, পরিচালকসকলের জন্যই এই ছবিটা একটা চ্যালেঞ্জ। সাত কোটির ছবি! তার বেশিটাই খরচ হয়েছে ক্যামেরায়, লোকেশনে, সেটে। গানে। সমিধ মুখোপাধ্যায়ের সুর। শ্রেয়া ঘোষাল, সুনিধি চৌহান, মোনালি ঠাকুর, কুনাল গাঞ্জাওয়ালারা গেয়েছেন।
তাই বলে কি শুধুই শ্যুটিং? পার্টি নেই? অবশ্যই আছে। ১০ দিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর শনিবার রাতে পার্টিও হল। চলল সেই ভোর পর্যন্ত। কিন্তু রবিবারের হাফ ডে শ্যুটও বাদ গেল না। আর কাজ সেরে একটু ফ্রেশ হয়ে সোজা ফেরার ফ্লাইট ধরতে এয়ারপোর্টে। ঘুম? সে তো ফেরার প্রায় ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে ইন্সটলমেন্টে হয়ে যাবে। |
|
প্রবাল পাথরের প্রাকৃতিক সেতু। শ্যুটিং হয়েছে এমন সব জায়গাতেই
|
যেতে গেলে |
কলকাতা থেকে দুবাই হয়ে মরিশাস। এমিরেটসের বিমানে। মুম্বই হয়েও যাওয়া যায়। এয়ার মরিশাসের ফ্লাইট আছে। ভিসা: মরিশাসে পৌঁছে ভিসা পাওয়া যায়। থাকা: সব বাজেটের হোটেল। তবে তিনতারা রেটিং-য়ের কম হোটেলে থাকবেন না। সমুদ্রের একেবারে সামনে কেবল বহু-তারা হোটেলগুলো। বাকি সব ভিলা। গোটাটা ভাড়া নিতে হবে। ভাড়া অনেক। মাথায় রাখুন: কোথাও পৌঁছতে গেলে অনেকটা রাস্তা। নিজে ড্রাইভ করতে পারলে গাড়ি ভাড়া করে নিন। দেশটায় ঘুরতে কিন্তু ভালই খরচ। প্যাকেজ পাওয়া যায়। www.mauritius.net-এ লগ ইন করুন। তিন রাতের জন্য একজনের মোট খরচ আনুমানিক ৩৫,০০০ টাকা থেকে শুরু। সাইট-সিয়িংয়ের জন্য গাড়ি নিয়ে। বিমানভাড়া বাদে।
হনিমুনের জন্য দারুণ জায়গা। সেরা সময়: অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি। ওখানে তখন মৃদু-ঘামহীন বসন্ত। |
|
|
কাসেলায় বাঘ-সিংহের খুনসুটি |
হরিণের মাংসের স্টেক |
|
মিস করবেন না |
১। কাসেলায় সিংহদের সঙ্গে হাঁটা: মরিশাসের একেবারে মধ্যিখানে কাসেলা। প্রাকৃতিক জঙ্গলের মধ্যে একপাশে ছোট্ট চিড়িয়াখানা। আর বাকি জায়গা দু-ভাগ করে, একদিকে বাঘ, সিংহ, চিতার আস্তানা। তাদের মধ্যে ট্রেনার আপনাকে নিয়ে যাবেন। তারা আপনাকে ঘিরে বসবে, চাইলে আপনার পাশে-পাশে পোষা কুকুরের মতো কয়েক পা হাঁটবেও। অন্য পাশে আছে সাফারি জেব্রা, উটপাখি, নীলগাই, বুনোশুয়োর চলে আসবে একেবারে সাফারি-গাড়ির সামনে। ওয়াইল্ডলাইফ-অ্যাডভেঞ্চারের এমন পর্যটকবান্ধব সাবধানী প্যাকেজ সহজে মিলবে না। খরচ: সিংহের সঙ্গে হাঁটতে মাথাপিছু ৩৩২৫ মরিশান টাকা। শুধু সাফারি নিলে: মাথাপিছু ৫৭৫ মরিশান টাকা।
২। গ্রঁ বে-তে হরিণের মাংস: মরিশাসের হটস্পট হল গ্রঁ বে। নাইটক্লাব, ক্যাসিনো, সব এখানে। সারা সপ্তাহ চুপচাপ। উইকএন্ডে জেগে ওঠে। তবে সমুদ্রের ধারঘেঁষে ছোট্ট রেস্তোরাঁগুলো সারাক্ষণ খোলা। যে কোনও সমুদ্র শহরে যেমন, এখানেও তেমন পাওয়া যায় কুড়মুড়ে স্কুইড ভাজা, অক্টোপাসের ঝাল, বেক করা ঝিনুক, শার্ক ফিন স্যুপ। কাঁকড়া আর গলদা চিংড়ি তো আছেই। স্পেশাল হল কৃষ্ণসার হরিণের মাংসের নানা পদ। মানে সলমন খান যা মেরে বিতর্কে জড়িয়েছেন তার মাংসের গ্রিল কিংবা স্টেক! সব ধরনের পদ নিলে দু’জনে খেয়ে শেষ করতে পারবেন না। একটাই সমস্যা। রাত দশটার পর সব রেস্তোরাঁ বন্ধ। দু’জনের ডিনারের খরচ: ১৫০০ মরিশান টাকা (মরিশাসে তৈরি হোয়াইট রাম নিয়ে)।
৩। ত্রোবিশ-এর সমুদ্রতট: রুপোলি বালি। হাল্কা ঢেউ। স্বচ্ছ সমুদ্রটা দেখলে গ্লিসারিন সাবানের কথা মনে পড়ে। ডেকচেয়ার পাতা। শুয়ে আছেন মেম-সাহেবরা। যেন একঘর গোয়া। সমুদ্রস্নান, নইলে স্রেফ সান-বেদিং। অ্যাডভেঞ্চার চাইলে স্পিডবোট থেকে প্যারাসেলিং, ওয়াটার-বাইকিং, স্নরক্লিং-ও পাবেন। তবে এগুলো করার আগে দরাদরি করে নিন। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল জলের তলায় সাবমেরিন সাফারি। সাফারির মোটামুটি খরচ: মাথাপিছু ৫০০০ মরিশান টাকা।
১ মরিশান টাকা= ১.৮০ ভারতীয় টাকা (আনুমানিক)
|
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|