ক্ষতিপূরণের মামলায় বারবার ডাকা সত্ত্বেও হাজিরা না দেওয়ায় বর্ধমানের পুলিশ সুপারকে ব্যক্তিগত ভাবে অতিরিক্ত ২০ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিল কাটোয়া আদালত।
শুক্রবার অতিরিক্ত জেলা জজ ও দায়রা বিচারক অতনু রায় শুধু এই নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ)-কেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য বলেন, “এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আবেদন করব।”
২০০২ সালের ১৭ মে পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রাজেশ্বরী ঘোষের (৯)। স্থানীয় আখড়া স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বিষ্ণুপুর মোড়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তার মা প্রতিমা ঘোষ কাটোয়া থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, পুলিশ তাঁর মেয়েকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই করেনি।
কাটোয়া আদালতের মোটর ট্রাইব্যুনালে মামলা শুরু হয়। ২০০৩ সালের ১৯ জুলাই ছাত্রীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় পুলিশ সুপারকে। যত দিন তা না দেওয়া হচ্ছে বছরে ৯ শতাংশ হারে সুদ দিতেও বলা হয়েছিল। পুলিশ টাকা না দেওয়ায় ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ফের মামলা করেন প্রতিমাদেবী। আদালত থেকে বারবার পুলিশ সুপারের কাছে সমন পাঠানো হয়। কিন্তু কোনও আইনজীবী নিযোগ করা হয়নি।
এর পরেও কেন পুলিশ সুপারের বেতন থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা কেটে নেওয়া হবে না, গত ২১ ডিসেম্বর তার ব্যাখ্যা চান বিচারক। ২ জানুয়ারি আদালতে এসে তাঁকে কৈফিয়ত দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ব্যস্ততার কথা জানিয়ে হুমায়ুন কবীর সে দিনও আদালতে যাননি। ৭ জানুয়ারি দু’টি চেক মারফত ক্ষতিপূরণ ও সুদ বাবদ ২,৭৫,৯৬৫ টাকা আদালতে জমা করেন তিনি। ৯ জানুয়ারি ফের তাঁকে হাজির হতে বলা হয়। সে দিন পুলিশ সুপার লিখিত ভাবে জানান, তিনি উচ্চ আদালতে যাবেন। তা সত্ত্বেও পরের দিন তাঁকে হাজির হতে বলা হয়েছিল। তিনি আসেননি।
বিচারক রায়ে জানান, ক্রমাগত আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় পুলিশ সুপারকে এক মাসের মধ্যে ২০ হাজার টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় প্রতি মাসে ১৮% হারে সুদ দিতে হবে। কাটোয়া আদালতের তালিকাভুক্ত সরকারি আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মৃত ছাত্রীর পরিবারকে আরও ৬৮৪ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। |