|
|
|
|
ধুঁকছে ঢেকলাপাড়া |
রোগে মৃত্যু বন্ধ বাগানে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বীরপাড়া |
বন্ধ চা বাগানে ফের এক চা শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। চিকিৎসার অভাবে ওই রোগগ্রস্ত শ্রমিকের মৃত্যু হয় বলে দাবি করেছেন বাগানের শ্রমিকরা। জয়েন্ট লেবার কমিশনার মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, “ওই বাগানের শ্রমিকদের ছয় মাসের বকেয়া ভাতার টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাগানের শ্রমিক কী কারণে মারা গেল সেটি স্থানীয় প্রশাসন দেখছে।” আলিপুরদুয়ারের মহকুমাশাসক অমলকান্তি রায় বলেন, “ওই শ্রমিকের কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। বাগানের শ্রমিকদের সরকারি নানা প্রকল্পের কাজ দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের বাগানটির উপর নজর রাখার কথা বলা হয়েছে।” বাসিন্দারা জানান, ঢেকলাপাড়া বাগানের আপার লাইনের বাসিন্দা মৃত শ্রমিকের নাম প্রধান তাঁতি (৪৫)। বুধবার ভোরে নিজের বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত শ্রমিকের স্ত্রী ছাড়া পরিবারে আর কেউ নেই। বাগান বন্ধ হওয়ার পরে বীরপাড়ার কাছে একটি পাথর ভাঙার ক্র্যাসার কারখানায় শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। ৬ মাস আগে কারখানায় কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে তার পিঠের একটি হাড় ভেঙে যায়। দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি বাড়িতে ছিলেন। স্বামী অসুস্থ দেখে স্ত্রী দিনমজুরি করে কোনও মতে সংসার চালাতেন। ভাঙা হাড় নিয়ে দিনের পর দিন চিকিসা না করিয়ে বাড়িতে বসে থাকায় দেড় মাস ধরে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি। ডিসেম্বর মাসে বাগানে ক্যাম্প করতে আসা চিকিৎসকরা তাঁকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। তবে প্রধানবাবু হাসপাতালে যেতে রাজি ছিলেন না বলে বাগানের বাসিন্দারা দাবি করেছেন। গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর ৩ দিন আগে তাঁকে এক রাতের জন্য বীরপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে চিকিৎসকরা তাঁকে রেফার করেন। প্রধানবাবু এবং তাঁর স্ত্রী চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে রাজি নন বলে বাগানে ফিরিয়ে আনা হয়। বাগানের আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা বসন্ত তাঁতি বলেন, “হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য তাঁকে বহু বার বলা হয়েছে চরম অর্থাভাবের কারণে শুরু থেকেই তিনি চিকিৎসা করাতে চাইছিলেন না বলে মনে হচ্ছে। অনুদানের টাকা মিলেছে। এখন মানুষ দুবেলা খেতে পারছেন। টাকা ফুরিয়ে গেলে ফের অনটন শুরু হবে। বাগান না খুললে এই সমস্যার সমাধান হবে না।” ২০০২ সালের অগস্টে ঢেকলাপাড়া চা বাগান বন্ধ করে চলে যান মালিকপক্ষ। কাজ হারানোয় শ্রমিকদের ঘরে ঘরে এক সময় খাবারের অভাব শুরু হয়। অনাহার ও অর্ধাহারে ভুগে নানা অসুখ বিসুখে ইতিমধ্যে বহু মানুষ মারা গিয়েছেন। বহু শ্রমিক পরিবার নিয়ে নদীতে পাথর ভাঙার কাজ করছেন। দুবেলা পেট ভরে খাবার মিলছে না বলে অভিযোগ। আরএসপি চা শ্রমিক নেতা গোপাল প্রধান বলেন, “গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যু হল। বহু আবেদন নিবেদন করার পর ভাতার টাকা পেয়েছেন শ্রমিকরা। বাগানে নিয়মিত চিকিৎসা পরিষেবা-সহ সময়মতো ভাতা ও সরকারি অনুদান না দিলে শ্রমিকদের দুর্ভোগে পড়তে হবে।” |
|
|
|
|
|