|
|
|
|
কয়েকটি সুপারির জন্য গাছে বেঁধে মারধর গৃহবধূকে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শামুকতলা |
চাল কেনার জন্য বাড়ির গাছের কয়েকটি সুপারি বিক্রি করেছিলেন এক বধূ। সেই ‘অপরাধে’ ৩ বছরের ছেলের সামনে তাঁকে গাছে বেঁধে অর্ধনগ্ন করে মারধর করা হল। তার পর গায়ে ঘষা হল বিছুটি পাতা। এই শাস্তি দিলেন বধূরই শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কবিতা দেবনাথ নামে ওই বধূর স্বামী ধনেশ্বর বর্মণ ঘটনার সময় গ্রামে ছিলেন না।
মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে জলপাইগুড়ির শামুকতলা থানার ছোট চৌকিরবস গ্রামে। অত্যাচারের সময়ে কবিতা জল চাইলে তাঁর মুখে এক জন প্রস্রাব করে দেন বলেও অভিযোগ। তাঁকে ‘চরিত্রহীন’ অপবাদও দেওয়া হয়। ওই ঘটনা দেখে প্রতিবাদে সরব হন গ্রামবাসীরা। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ গিয়ে ওই বধূকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে মায়ের সঙ্গে রয়েছে শিশুটিও। অভিযুক্তদের ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ জানায়, বুধবার সকালে কবিতা তাঁর শ্বশুর, শাশুড়ি, কাকা শ্বশুর, ভাসুর এবং এক জা-সহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। ধৃতেরা হলেন, বধূর শ্বশুর কুমুদ দেবনাথ, শাশুড়ি মানদা দেবনাথ, ভাসুর প্রদীপ দেবনাথ এবং জা আরতি দেবনাথ। আর এক অভিযুক্ত খুড়শ্বশুরকে পুলিশ খুঁজছে। আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনুপ জয়সোয়াল বলেন, “ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা কেউ রেহাই পাবে না।” |
|
শামুকতলা হাসপাতালে ছেলের সঙ্গে কবিতা। ছবি: রাজু সাহা। |
শামুকতলা থানার ওসি প্রবীণ প্রধান স্বীকার করেছেন, দীর্ঘদিন থেকে ওই বধূর উপরে অত্যাচার চলছে। বধূর অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁর স্বামীকে একসময় গ্রেফতারও করা হয়। জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন স্বামী। তিনি অবশ্য তারপরে ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে চলে গিয়েছিলেন। সেই থেকে শ্বশুরের ভিটের কোণে একটি ঘরে শিশু সন্তানকে নিয়ে একাই থাকতেন কবিতা। দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। সম্প্রতি কাজ না-মেলায় খাবার জুটছিল না। সে জন্য বাড়ির গাছের কয়েকটি সুপারি বিক্রি করেন তিনি। তা নিয়েই মঙ্গলবার রাতে অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ।
লিখিত অভিযোগে কবিতা জানান, তিনি শিশু সন্তানকে নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসেছিলেন। সেই সময়ে দরজা ভেঙে ঢুকে তাঁর গলায় গামছা বেঁধে উঠোনে নিয়ে গিয়ে পেটানো হয়। কোনওমতে পালিয়ে এক প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে আবার ধরে এনে তাঁকে একটি গাছে বাঁধা হয়। এর পরে শুরু হয় মারধর। শ্বশুরবাড়ির লোকজন কিল, চড়, ঘুষি, লাথি মারতে শুরু করেন। শরীরে বিছুটিপাতা লাগিয়ে জল ঢেলে দেওয়া হয়। তাঁর বিয়ের সব গয়নাও ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বুধবার সকালে শামুকতলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন কবিতা। তিনি বলেন, “শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাসুর আমার স্বামীকে আলাদা করে রেখেছে। শিশুপুত্রকে নিয়ে দিনমজুরি খেটে বেঁচে আছি। এখন আমাকে ভিটে ছাড়া করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। ক’দিন আগে পুলিশকে সেটা বলেছিলাম। কাজ হয়নি। মঙ্গলবার অবশ্য লোকজন হইচই করায় পুলিশ গিয়ে আমাকে বাঁচিয়েছে।” কবিতার বাপের বাড়ি বাংলাদেশে। তিন বছর আগে পুণ্ডিবাড়িতে কাকার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। কিছুদিন পরে শামুকতলার চৌকিরবসের ধনেশ্বর বর্মনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নানা অছিলায় তাঁর উপরে অত্যাচার শুরু হয়। কবিতার অভিযোগ, শ্বশুর-শাশুড়ির উস্কানিতে তাঁকে মারধর করতেন স্বামী। তখন তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। পুলিশ স্বামীকে গ্রেফতার করে। গত বছরের গোড়ায় জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ধনেশ্বর কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দেন। |
|
|
|
|
|