‘প্রথা’ ভেঙে বাম সভাধিপতিদেরও ডাকলেন সুব্রত
ঞ্চায়েতমন্ত্রী হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উল্টোপথে হাঁটলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়! মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বামফ্রন্টের জনপ্রতিনিধিরা ডাক পাচ্ছেন না। সম্প্রতি গঙ্গার পশ্চিম পাড়ের সৌন্দর্যায়ন নিয়ে পুরমন্ত্রীর ডাকা এক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র। কিন্তু সেখানে ব্রাত্য ছিলেন হাওড়ার সিপিএম মেয়র। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় কিন্তু সেই ‘প্রথা’ থেকে সরে এলেন বুধবার।
বছরখানেকের মধ্যে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন ধরে নিয়ে মঙ্গলবার মহাকরণে ১৮টি জেলার জেলাশাসকদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন সুব্রতবাবু। পঞ্চায়েতমন্ত্রী হিসাবে তাঁর ‘অগ্রাধিকার’ কী, এক-দুই-তিন করে তা তুলে ধরেছিলেন জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তাদের কাছে। এ দিন তিনি বৈঠক করলেন কলকাতা-লাগোয়া ৬ জেলার সভাধিপতিদের সঙ্গে। এর মধ্যে চারটি জেলার জেলা পরিষদ বামেদের দখলে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গ্রামোন্নয়নের কাজে আমলারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে জেলা পরিষদেরও যে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে, তা বুঝেই এ দিনের বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে ডাকা হয়েছিল দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সভাধিপতিকে। এঁদের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সভাধিপতি তৃণমূলের শামিমা শেখ এবং নদিয়া সভাধিপতি সিপিএমের মেঘলাল শেখ ছিলেন না। পূর্ব মেদিনীপুরের সভাধিপতি তৃণমূলের গাঁধী হাজরা অবশ্য বৈঠকে ছিলেন। সুব্রতবাবু বলেন, “গঙ্গাসাগর মেলার জন্য শামিমা থাকতে পারেননি। নদিয়ার সভাধিপতি কেন ছিলেন না, তা আমি বলতে পারব না।” কিন্তু আপনি তো নজির তৈরি গড়লেন? সরাসরি প্রশ্ন এড়িয়ে পঞ্চায়েতমন্ত্রীর জবাব, “আমি কী চাইছি, তা ওঁদের জানা দরকার। কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা আমার জানা দরকার। আমি পঞ্চায়তরাজ নিয়ে ওঁদের সঙ্গে কথা বললাম। তেমন কোনও নির্দিষ্ট বিষয় ছিল না।”
পঞ্চায়েতমন্ত্রীর এই ভূমিকায় খুশি সিপিএমের জেলা সভাধিপতিরা। যেমন, উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাধিপতি সিপিএমের ভরত দাস বলেন, “নতুন সরকার এই প্রথম এ রকম বৈঠক করল। বেশ কিছু ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তবে বৈঠকে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলাশাসক এবং অন্যান্য দফতরের কর্তাদের ডাকা উচিত ছিল। কারণ, প্রশাসনিক কর্তারা ছাড়া সমন্বয়ের কথা হতে পারে না।” হাওড়ার সিপিএম সভাধিপতি মীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই প্রথম নতুন সরকার উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠকে জেলা সভাধিপতিদের ডাকল। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক দিক। এর আগে, পঞ্চায়েতমন্ত্রী জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আমরা মন্ত্রীকে বলেছি, জেলাশাসক এবং সভাধিপতি এঁদের নিয়ে পৃথক ভাবে বৈঠক করলে সমন্বয়ের অভাব থাকবেই। উন্নয়নমূলক বহু কাজে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে আমাদের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক রয়েছে। জেলাশাসকদের সঙ্গে আমাদের বসিয়ে মন্ত্রী যাতে আগামী দিনে বৈঠক করেন, সেটা দেখা উচিত।”
বৈঠকে প্রশাসনের সঙ্গে জেলা পরিষদের সমন্বয়ের কথা বলেছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী। আলোচনায় বেশ কিছু সমস্যার কথাও উঠে এসেছে। ভরতবাবু বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, একাধিকবার টেন্ডার করেও সেই কাজ কোনও ঠিকাদার শুরু করতে পারেনি। এ জন্য জেলার বিভিন্ন কাজ আটকে রয়েছে।” তাঁর কথায়, একশো দিনের কাজের দু’টি ভাগ রয়েছে। একটি ভাগে রয়েছেন যাঁরা কাজ করেছেন। অন্য ভাগে যাঁরা আবেদন করেছেন, অথচ কাজ দেওয়া যায়নি। এঁদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা আছে। সেই ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইন্দিরা আবাস যোজনা নিয়েও আলোচনা হয়। ভরতবাবু বলেন, “ওই যোজনায় টাকা কম। সেই টাকা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।”
মীনাদেবী জানান, একশো দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্প, ইন্দিরা আবাস যোজনা প্রকল্প প্রভৃতিতে এ রাজ্য বেশ পিছিয়ে রয়েছে। রাজ্যকে আবার ওই সব প্রকল্পে উপরের দিকে উঠে আসতে হলে সভাধিপতিদের এগিয়ে আসতে হবে। তাঁর কথায়, “উন্নয়নের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে আমরা প্রস্তুত। তবে, প্রশাসনে সমন্বয় করে চলতে হবে। তার অভাব রয়েছে।” আগে প্রতি তিন মাস অন্তর পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের কর্তারা জেলা প্রশাসন এবং সভাধিপতিদের নিয়ে যে বৈঠক করতেন, সেটা ফের চালু করা দরকার বলে পঞ্চায়েতমন্ত্রীর কাছে তাঁরা প্রস্তাব রেখেছেন।
বৈঠকে ‘খোলামেলা’ আলোচনা হওয়ায় খুশি পঞ্চায়েতমন্ত্রী। তিনি জানান, আগামী সপ্তাহে আরও ৬টি জেলার জেলা সভাধিপতিকে নিয়ে মালদহে বৈঠক হবে। তার পরের সপ্তাহে বাকি ৬টি জেলার সভাধিপতিকে নিয়ে বৈঠক হবে উত্তরবঙ্গের কোনও জেলায়। তিন ভাগে এই বৈঠক শেষ হলে এ মাসের শেষে সব জেলা পরিষদের সভাধিপতিদের নিয়ে একসঙ্গে বৈঠক করা হবে।
নতুন মন্ত্রী। নতুন বছরের শুরু। তাই সৌজন্য পর্ব মিটতেই সভাধিপতিদের হাতে বিবেকানন্দের বই ‘উপহার’ হিসাবে তুলে দেন পোড় খাওয়া মন্ত্রী সুব্রতবাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.