প্রণবের সঙ্গেই দায়িত্ব জয়রামকে
মমতার সঙ্গে তিক্ততা কাটাতে উদ্যোগী হাইকম্যান্ড
তৃণমূলের সঙ্গে দলের রাজ্য শাখার তিক্ততা গত কয়েক দিনে যে ভাবে বেড়েছে, এ বার তাতে রাশ টানতে চায় কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন না-করলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পর্ক যাতে ভাঙনের মুখে গিয়ে না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করাই এখন সনিয়া গাঁধীর লক্ষ্য।
পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি তাঁর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেল, অম্বিকা সোনি, জয়রাম রমেশ এবং সর্বোপরি রাজ্যের বর্ষীয়ান নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। রাহুল গাঁধীর সঙ্গেও প্রদেশ কংগ্রেসের কিছু নেতার কথা হয়েছে। অম্বিকা সোনি আজ বলেন, “ভুললে চলবে না, মমতা আমাদের এক জন গুরুত্বপূর্ণ শরিক। তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা এবং দীর্ঘ আন্দোলনের সাহায্যেই পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটানো সম্ভব হয়েছে। জোট রাজনীতিতে সব সময় মতপার্থক্য থাকে। কিন্তু এমন কোন বিষয় আছে, যা আলোচনার মাধ্যমে মেটানো যায় না! কংগ্রেস হাইকম্যান্ড কখনই চায় না যে মমতা ইউপিএ থেকে বেরিয়ে যান।”
কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের এই অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে মমতাও কৌশলগত ভাবে নিজের অবস্থান বদল করছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। যার উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে, গত কাল পর্যন্ত কংগ্রেস সম্পর্কে কড়া মন্তব্য করলেও আজ জঙ্গলমহল সফরে যাওয়ার আগে বা পরে তিনি এ ব্যাপারে কিছু বলেননি।
মহাকরণে দাঁড়িয়ে কংগ্রেসের মন্ত্রী মনোজ চক্রবর্তীর সরকার-বিরোধী মন্তব্যও উপেক্ষা করার কৌশল নিয়েছেন মমতা। মনোজবাবুর ওই সমালোচনার পরে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৃণমূলের অনেকেই মমতার কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন। জোট রাজনীতিতে শরিক দলের কোনও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট দলের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করা দস্তুর হলেও নিয়ম অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রিসভার যে কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মমতা কিন্তু বিষয়টি অবজ্ঞা করার পথেই হেঁটেছেন।
তবে তৃণমূল সূত্রে এ-ও বলা হচ্ছে, এর অর্থ এই নয় যে কংগ্রেস সম্পর্কে তৃণমূল নেত্রী মনোভাব বদলে গিয়েছে। কংগ্রেসের প্রতি তিনি এখনও যথেষ্ট রুষ্ট। কিন্তু কৌশলগত ভাবে তিনি সময় কিনতে চাইছেন। দেখে নিতে চাইছেন উত্তরপ্রদেশে ভোটের ফল কী দাঁড়ায়। সংসদের বাজেট অধিবেশনের পরেই তিনি তাঁর পরবর্তী রণকৌশল ঠিক করবেন।
পাশাপাশি, মমতা সম্পর্কে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের মনোভাবও যে রাতারাতি বদলে গিয়েছে এমন নয়। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ থেকে পেনশন বিল একের পর এক বিষয়ে মমতা যে ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন, তাতে তাঁরা অসন্তুষ্ট। কিন্তু কৌশলগত কারণেই এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি তাঁরা।
তার মূল কারণ উত্তরপ্রদেশের ভোট। দেশের সব চেয়ে বড় রাজ্যে কংগ্রেসকে নিজের পায়ে দাঁড় করানোর চেষ্টায় নামা রাহুল এখনই মুলায়মের সঙ্গে জোটের কথা ঘোষণা করতে রাজি নন। উল্টে দলীয় বৈঠকে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, মুলায়মকে সরকার গড়ার জন্য সমর্থন দিলে পাঁচ বছর পরে কংগ্রেসের লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হবে না তো?
ফলে ভোটের পর মুলায়ম ইউপিএ-তে এসে যাচ্ছেন, আর মমতাকে বের করে দেওয়া হবে, এই প্রচারের আপাতত বিরোধিতা করতে শুরু করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এক শীর্ষ কংগ্রেস নেতা বলেন, “মুলায়ম তো এখনও সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করছেন! মুলায়মের সমর্থন পাওয়া মানে মমতাকে বাদ দেওয়া, এটা কেন ভাবা হবে?”
তা হলে ইন্দিরা ভবন প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেসের আন্দোলনের পাশে কেন দাঁড়ালো হাইকম্যান্ড। কারণ এটাই যে গোটা বিষয়টির সঙ্গে ইন্দিরা গাঁধীর নাম এবং কংগ্রেসের সর্বস্তরের নেতা-কর্মী- সমর্থকদের আবেগ জড়িত। পাশাপাশি দীপা দাসমুন্সি, অধীর চৌধুরী, মৌসম বেনজির নুর এবং প্রদীপ ভট্টার্চাযকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব এটাও চেয়েছেন যে, রাজ্যে দল তার সাংগঠনিক শক্তি কিছুটা বাড়িয়ে নিক।
কিন্তু যাবতীয় মতবিরোধ সত্ত্বেও কী দিল্লি, কী কলকাতা, আপাতত মমতার সঙ্গে চলাটাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। সেই কারণেই জয়রাম রমেশ আজ বলেন, “মতপার্থক্য হতেই পারে। আলোচনার মাধ্যমে সেগুলির মীমাংসা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী এবং দলনেত্রী, দু’জনেই সেটা চান। রাজ্য কংগ্রেস তার নিজস্ব আন্দোলন নিশ্চয়ই করবে। তৃণমূলকেও তা মেনে নিতে হবে। আবার কংগ্রেসও এমন সংঘাতে যাবে না, যাতে শেষ হাসি সিপিএম হাসে।”
২৩ জানুয়ারি কলকাতায় নেতাজি রিসার্চ ইনস্টিটিউটে একটি অনুষ্ঠানে জয়রামের যোগ দেওয়ার কথা। তার দু’দিন আগেই কলকাতা পৌঁছে জঙ্গলমহল সফর করবেন তিনি। বৈঠক করবেন মমতার সঙ্গেও। কারণ কংগ্রেস হাইকম্যান্ড মনে করছে, এখন থেকে প্রণববাবুর পাশাপাশি জয়রামও মমতার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। যাতে এই পারস্পরিক তিক্ততার অবসান হয়।

মমতাকে কটাক্ষ করলেন কারাট
যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএমকে দায়ী করছেন বলে কটাক্ষ করলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। তিনি বলেন, “সব কিছুর জন্য সিপিএমকে দায়ী করে লাভ নেই। যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই মমতা সিপিএমকে দায়ী করছেন। কংগ্রেস কিছু করলেও সিপিএমের নাম উঠে পড়ছে।” কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের আঁতাঁত নিয়ে সম্প্রতি মমতা যা বলেছেন, সে প্রসঙ্গে কারাট বলেন, “সবাই জানে, সিপিএম তথা বামফ্রন্টকে উৎখাত করতে তৃণমূল হাত মিলিয়েছিল কংগ্রেসের সঙ্গে। সেটা মাত্র সাত মাস আগের ঘটনা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.