পেঁচা-পায়রার ঠিকানা এখন ওয়াসিফ মঞ্জিল
লালবাগের ওয়াসিফ মঞ্জিল বা নিউ প্যালেসই ছিল মুর্শিদাবাদের নবাব বাহাদুর ওয়াসিফ আলি মির্জার (১৮৭৪-১৯৫৯) ঠিকানা। বছর দুয়েক আগে রাজ্য আইন বিভাগ ওই প্রাসাদ ও সংগ্রহশালা পর্যটন দফতরকে হস্তান্তর করার পর থেকেই তা তালাবন্দি অবস্থায়। সাধারণ দর্শনার্থীরা ঢুকতে পারেন না। এক সময়ে যারা নিয়মিত দেখভাল করতেন তাদেরও ভেতরে ঢোকার অনুমতি ছিল না। ফলে ওই প্রাসাদ এখন পেঁচা-পায়রার অবাধ বিচরণক্ষেত্র। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় সংরক্ষণের অভাবে ওই নবাব ব্যবহৃত পুরাবস্তু নষ্ট হতে বসেছে। ইতিহাসবিদ থেকে জেলার সাধারণ মানুষ ওই প্রাসাদ ও সংগ্রহশালা সংরক্ষণের দাবি তোলেন। ওই একই দাবি ওঠে নবাব বাহাদুরের উত্তরসূরীদের তরফেও। শেষ পর্যন্ত সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে সোমবার লালবাগ মহকুমা প্রশাসনিক কর্তা ও পর্যটন দফতরের প্রতিনিধিরা প্রাসাদ ও সংগ্রহশালা ঘুরে দেখেন। লালবাগের এসডিও চিরঞ্জীব ঘোষ বলেন, “নিয়মিত দেখভালের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। সংরক্ষণের জন্য প্রকল্প তৈরি করে রাজ্য পর্যটন দফতরের কাছে পাঠানো হবে বলে এদিন প্রাসাদ চত্বর ঘুরে দেখা হয়েছে।” আইন দফতর ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই প্রাসাদ পর্যটন দফতরকে হস্তান্তর করে। নবাবের উত্তরাধিকারী ওয়াসিফ আলি মির্জার নাতি সৈয়দ রেজা আলি মির্জার অভিযোগ, “রাজ্য পর্যটন দফতরের গাফিলতিতে নবাব বাহাদুরের ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র, চাঁদি-সোনা দিয়ে তৈরি হাতির মুকুট, মিশ্র ধাতুর তৈরি হাওদা, জরির কাজ করা বেগমদের শাড়ি, বেগমদের ব্যবহৃত দুর্মূল্য কাঠের পালকি, যা রয়েছে তা সবই নষ্ট হতে বসেছে।”
ছবি: গৌতম প্রামাণিক
বিশাল ঘর জুড়ে এলোমেলো ভাবে পড়ে রয়েছে নবাব বাহাদুর ওয়াসিফ আলি মির্জার ব্যবহৃত আসবাবপত্র। স্টোরকিপার সৈয়দা তারাৎ বেগমের অভিযোগ, “নবাবের ব্যবহৃত সামগ্রীর নিয়মিত দেখভাল হয়নি। অবহেলায় পড়ে থাকায় আলমারিগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” পুরাবস্তু সংরক্ষণ প্রসঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত ইতিহাসের শিক্ষক অনিরূদ্ধ রায় বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটা কোনও নতুন ঘটনা নয়। ওয়াসিফ মঞ্জিলের ওই সংগ্রহশালা ঐতিহাসিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ।”
ইতিহাস গবেষক লালবাগের রামপ্রসাদ পাল বলেন, “সংগ্রহশালায় বেশ কিছু সিপাহি বিদ্রোহের আমলের দুষ্প্রাপ্য চিঠিপত্র রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে নবাব ফেরাদুন খাঁ-এর সঙ্গে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পত্রালাপ। এ ছাড়া আলমারিতে রক্ষিত চিঠি থেকে হাসান আলি মির্জা এবং ওয়াসিফ আলি মির্জার সময় কালের অনেক অজানা ইতিহাস থেকে লর্ড ডালহৌসির সঙ্গে ফেরাদুন খাঁয়ের যে মতানৈক্যের কথাও জানা যায়।”
হাজারদুয়ারি মিউজিয়ামের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা পুরাতত্ত্ববিদ নয়ন চক্রবর্তী বলেন, “ওই সমস্ত পুরাবস্তু সামগ্রী অবহেলায় ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঘরের মধ্যে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অবিলম্বে তা সংরক্ষণের প্রয়োজন। প্রয়োজনে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের সংরক্ষণ দফতরের বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিতে পারে।”
রাজ্য পর্যটন দফতরের অধিকর্তা তথা রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পৃথা সরকার বলেন, “হস্তান্তরের সময়ে পর্যটন ও আইন দফতরের কর্তাদের উপস্থিতিতে যাবতীয় সামগ্রীর তালিকা তৈরি করে রাখা হয়েছে। ওই ঐতিহাসিক সামগ্রী সংরক্ষণের জন্যই আমরা একটি ঘরের মধ্যে সেগুলি যত্ন করে রেখে দিয়েছি।” ভবিষ্যতে সেগুলো কোন কাজে ব্যবহৃত হবে? তার অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.