জঙ্গলমহলে শান্তি-উন্নয়ন
স্থানীয়দের ক্ষমতায়নই পথ, মত নেতার
শান্তি আপাতত অতীত। ‘উন্নয়ন’-এরও নানা প্রকল্প ঘোষণা করছে সরকার। তার পরেও অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী শান্তি নিয়ে সংশয় রয়েছে। উন্নয়নের গুচ্ছ-প্রকল্পও ঘোষণায় যতটা, ততটা বাস্তবে নয় বলে ইতিমধ্যে অভিযোগ উঠেছে। জঙ্গলমহলের শান্তি-উন্নয়ন ঠিক কোন পথেসে নিয়ে রয়েছে নানা মত।
জঙ্গলমহলে সামাজিক-রাজনৈতিক কাজকর্মের সঙ্গে দীর্ঘ দিন জড়িয়ে রয়েছেন প্রবীণ বামপন্থী নেতা, পিসিসি-সিপিআই (এমএল)-এর সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ রানা। একদা গোপীবল্লভপুরের বিধায়ক এবং অধুনা ঝাড়খণ্ড আন্দোলন সমন্বয় মঞ্চের অন্যতম আহ্বায়ক সন্তোষবাবু শান্তি-উন্নয়নের জন্য স্বশাসনই সর্বাগ্রে প্রয়োজন বলে মনে করেন। সেই সঙ্গে কুর্মি-মাহাতোদের আদিবাসী স্বীকৃতি, বনের উপর এলাকাবাসীর গোষ্ঠীগত অধিকার স্বীকার, উপযুক্ত কৃষি-পরিকাঠামো গড়ে তোলা এবং এলাকায় গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফেরানোর দাবিও জানিয়েছেন সন্তোষবাবুরা। ৬ মাস আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্বশাসন-সহ এই পাঁচ-দফা ‘প্রাথমিক-পদক্ষেপ’-এর দাবিসনদ পাঠিয়েছিলেন সন্তোষবাবুরা। কিন্তু সরকারের তরফে আলোচনার সময়টুকুও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ওই পাঁচ-দফা দাবির ভিত্তিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সমন্বয় মঞ্চ।
সন্তোষ রানা
সন্তোষবাবুর বক্তব্য, “পূর্বতন বাম সরকার পঞ্চায়েতের হাতে যে ধরনের ক্ষমতা দিয়েছে তা যথেষ্ট নয়। তার মধ্যে অসম্পূর্ণতা রয়েছে। প্রকৃত উন্নয়নের জন্য পশ্চিমবঙ্গের অধীনে থেকে জঙ্গলমহলের স্বশাসন চাই। নির্বাচনের মাধ্যমে স্বশাসিত সংসদ গঠন করা প্রয়োজন। সেই স্বশাসিত সংস্থার মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন করতে হবে। সরকারি গেজেটেড পদ বাদে অন্য চাকরিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য পদ-সংরক্ষণ থাকাটাও বাঞ্ছনীয়। জঙ্গলমহলের প্রশাসনের সর্বস্তরে স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে।” প্রবীণ এই নেতার কথায়, “যত টাকাই বরাদ্দ করা হোক না কেন, কলকাতা থেকে আমলাতান্ত্রিক নীতিনির্ধারণ করে কখনও উন্নয়ন বা কোনও পরিকল্পনা রূপায়ণ সম্ভব নয়। যে ভাবে মাটির সঙ্গে যোগাযোগহীন ভাবে জঙ্গলমহল উৎসবের আয়োজন হচ্ছে, উন্নয়নের ক্ষেত্রেও সেই একই কারণে বিশৃঙ্খল-অবস্থা।”
তাঁর বক্তব্য, জঙ্গলমহলকে আদিবাসী অধ্যুষিত বলা হলেও এলাকার (তিন জেলাপশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার ২৩টি ব্লক ও ঝাড়গ্রাম পুরসভা) জনসংখ্যার মাত্র ৩৫ শতাংশ আদিবাসী। জনসংখ্যার অন্য ২৫ শতাংশ হল কুর্মি বা মাহাতোরা। ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত কুর্মিরা আদিবাসী হিসেবে গণ্য হতেন। স্বাধীনতালাভের পর কুর্মিরা এখন ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর) শ্রেণিভুক্ত। সন্তোষবাবুর প্রস্তাব, “পিছিয়ে থাকা কুর্মিদের ফের আদিবাসী হিসেবে গণ্য করা হোক। তা হলে জঙ্গলমহলের আদিবাসী জনসংখ্যা ৬০ শতাংশ হবে। তবেই জঙ্গলমহলকে প্রকৃতপক্ষে আদিবাসী অধ্যুষিত বলা যাবে।”
যৌথ বন-পরিচালন ব্যবস্থার আওতায় জঙ্গল-লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দাদের দিয়ে বন দফতরের উদ্যোগে বন-সুরক্ষা কমিটি গড়ে জঙ্গলের রক্ষণাবেক্ষণ করানো হয়। অথচ বনজ সম্পদ বিক্রির লভ্যাংশ বাবদ মাত্র ২৫ শতাংশ টাকা দেওয়া হয় জঙ্গল-রক্ষার দায়িত্বে থাকা গ্রামবাসীদের। সংশ্লিষ্ট জঙ্গলের উপরে এলাকাবাসীকে ‘গোষ্ঠীগত অধিকার’ (কমিউনিটি রাইটস্) দেওয়ারও দাবি করেছেন সন্তোষবাবু। তাঁর অভিযোগ, “২০০৬ সালের কেন্দ্রীয় বন-আইনে এই ব্যবস্থার কথা বলা হলেও রাজ্যে তা কার্যকর হয়নি।”
সন্তোষবাবু মনে করেন, জঙ্গলমহলে কৃষিকে প্রধান গুরুত্ব দিয়ে উপযুক্ত কৃষি-পরিকাঠামো গড়ে তোলাও প্রয়োজন। পরিকাঠামো বলতে শুধু সেচ নয়, সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থার মাধ্যমে চাষিদের ন্যায্য দামে উন্নত মানের বীজ ও সার সরবরাহ করার পাশাপাশি উপযুক্ত দামে চাষির কাছ থেকে ফসলও কিনতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে ভর্তুকি দিতেও হতে পারে। তবে সন্তোষবাবু বিদেশের উদাহরণ দিয়ে বলেন, “কৃষিকে বাঁচাতে গেলে সরকারকে ভর্তুকি দিতেই হবে।”
সবশেষে, জঙ্গলমহলে সমস্ত রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলি যাতে স্বাধীন ভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম করতে পারে ও নিজেদের মত প্রচার করতে পারে সেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরির উপরে জোর দিয়েছেন প্রবীণ এই নেতা। তিনি বলেন, “কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ তা বেছে নেওয়ার অধিকার মানুষকে দিতে হবে। সিপিএম এক সময়ে অন্য কাউকে ভোট দিতে দিত না। মাওবাদীরাও একদলীয় শাসনে বিশ্বাসী। এক-দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার প্রবণতা রয়েছে তৃণমূলের একাংশের মধ্যেও। শান্তিস্থাপন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিন্তু এমন প্রবণতা ভাল নয়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.