আইপিএল ফাইভ-এ তাঁকে দেখা গেলেও যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিলেন ব্রায়ান লারা। তবে ব্যাট হাতে দুনিয়া শাসন করা সেই বাঁ হাতি রাজপুত্র আর নয়। অন্য কোনও ভূমিকায় উদয় হতে পারেন তিনি। বুধবার রাতে শহরের পাঁচতারা হোটেলে বসে স্বয়ং লারা আনন্দবাজারকে এই ইঙ্গিত দিলেন। বললেন, “হয়তো আমাকে দেখতে পাবেন আইপিএলে।” এর পর হেসে যোগ করছেন, “তবে ব্যাট হাতে আর দেখার আশা করে লাভ নেই। ওটা আর হবে না। আমার সঙ্গে কয়েক জনের কথাবার্তা চলছে। কোনও একটা ভূমিকায় আমি কোনও টিমের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। দেখা যাক।”
কোন টিম? কাদের সঙ্গে কথা চলছে? লারা এখনই সে সব ভাঙতে চান না। শুধু বলছেন, “আর একটু অপেক্ষা করে দেখুন না কী হয়।” এমন কোনও আইপিএল-জাদু কি তৈরি হতে পারে যে, আপনি আর সচিন তেন্ডুলকর একই সঙ্গে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে? লারা হেসে ফেললেন, “না, না। এখনই বলা যাবে না।” এর পর নিজেই বলতে শুরু করলেন, “সচিনকে নিয়ে এটা কী হচ্ছে বলুন তো? সব জায়গায় মিডিয়ার যেন একটাই প্রশ্ন। শততম সেঞ্চুরিটা ও কবে পাবে? ওর ওপর কী চাপ তৈরি হয়েছে সেটা আমি বুঝতে পারছি। আমার শুধু একটাই কথা বলতে ইচ্ছে করে। ধুর, যে লোকটা নিরানব্বইটা সেঞ্চুরি করেছে তার কাছে আর একটা সেঞ্চুরি কোনও ব্যাপার! আর এটাও আমি জানি যে, সচিনের কাছে চাপ নতুন কোনও ব্যাপার নয়।” |
গত আটচল্লিশ ঘণ্টা ধরে তিনি সৌরভের শহরে বসে। এবং বসে একান্তই ক্রিকেট-বহির্ভূত কারণে। ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোব্যাগোর প্রধানমন্ত্রী কমলাপ্রসাদ বিসেসার-সহ অভ্যাগত দলের সঙ্গে এসেছেন। লারা ত্রিনিদাদের স্পোর্টস অ্যাম্বাসাডর। নিজের দ্বীপের খুব ভাল বিপণন হওয়া দরকার বলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী গেলেন কলকাতা বন্দরে। মিলেনিয়াম ঘাট থেকে স্টিমারে করে। কথা ছিল লারাও স্টিমারে চড়ে আসবেন। শাড়ি-গহনায় একদম ভারতীয় সাজে আসা প্রধানমন্ত্রীর চোখে জল এসে যায় স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে যে, কত শত বছর আগে এই বন্দর থেকেই তাঁদের পূর্বপুরুষরা অজানা গন্তব্যের দিকে পাড়ি দিয়েছিলেন আর উঠেছিলেন গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। কিন্তু সেখানেও উপস্থিত জনতাকে আক্ষেপ করতে শোনা গেল লারা না আসায়। রাতে রাজভবনে নৈশভোজে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গেলেন লারা। তার আগে হোটেলের লবিতে বসে বলছিলেন আইপিএল খেলতে না পারার যন্ত্রণার কথা। “এক বার খেলার ইচ্ছে ছিল আইপিএল-টা। গত বার খুব চেষ্টাও করেছিলাম। কিন্তু আমাকে তো কেউ কিনলই না!” শুনে কে বলবে আজও ক্রিকেটের দু’টো সেরা কোহিনূর তাঁর দখলে। ৪০০ নট আউট আর ৫০১। একটা টেস্টের সর্বাধিক ব্যক্তিগত স্কোর। অন্যটা প্রথম শ্রেণির। ততক্ষণে হোটেলের লবিতে আবার তাঁকে ঘিরে ফেলেছে ক্রিকেট-জনতা। কেউ বাড়িয়ে দিচ্ছে অটোগ্রাফের খাতা। কেউ চায় রাজপুত্রের সঙ্গে ছবি তুলে রাখতে। কেউ এগিয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমের ওয়ান ডে জার্সি। একটা সই করে দিন। দেখে কে বলবে এই শহরে ক্রিকেটার লারার তেমন পারফরম্যান্স নেই। তিরানব্বইয়ে হিরো কাপ-সহ ওয়ান ডে খেলেছেন মাত্র তিনটে। গড় ৩৮.৬৬। সর্বোচ্চ ৮২। টেস্ট কখনও খেলেননি। আইপিএলের মতো ইডেন-জয় না করার আক্ষেপটাও কি কোথাও থেকে গেল? না হলে বুধবার রাতে হোটেলে দাঁড়িয়ে বলে ফেলবেন কেন, “এই শহরটার মধ্যে একটা অন্য রকম উষ্ণতা আছে। আজ বুঝলাম!” |