|
|
|
|
পিংলা জোনাল কমিটির সম্পাদক বদল সিপিএমে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
আগের একাধিক লোকাল ও জোনাল সম্মেলনে বিতর্কিতরা পুনর্নির্বাচিত হলেও সিপিএমের পিংল জোনাল কমিটির সম্পাদকের পদে রদবদল হল। নতুন জোনাল সম্পাদক হলেন নয়ন দত্ত। নয়ের দশকের গোড়ায় নয়নবাবু পিংলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন। রাজ্যে পালাবদলের পর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাতেই এখন সিপিএম ‘একঘরে’। দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একাংশ ‘নিষ্ক্রিয়’। ফলে এলাকায় দলের সম্মেলন করার মতো পরিস্থিতি নেই। কেশপুর-গড়বেতার জোনাল সম্মেলন ‘গোপনে’ মেদিনীপুর শহরেই হয়েছে। এ বার পিংলা জোনাল সম্মেলনও হল ‘গোপনে’ই । সম্মেলনস্থল সেই একই, সিপিএমের জেলা কার্যালয়ের অদূরে কৃষকভবনে। আগে পিংলা জোনাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন অনন্ত ধাড়া। কিন্তু, এ দিন তাঁর জায়গায় সম্পাদক করা হয়ে নয়ন দত্তকে।
পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী নয়নবাবুর বাড়ি গোবর্ধনপুরে। তিনি এ বারই পিংলা জোনালের অন্তর্ভুক্ত একটি লোকাল কমিটিরও সম্পাদক হয়েছিলেন। তার পরেও কেন জোনাল সম্পাদক হিসাবে তাঁকেই বেছে নেওয়া হল? কেন অনন্তবাবুকে বদলে দেওয়া হল? দলীয় সূত্রের খবর, পালাবদলের আগে থেকেই এলাকায় সংগঠন ধরে রাখার কাজ ঠিক মতো করতে পারছিলেন না অনন্তবাবু। দলের অন্দরেই তাঁকে সরানোর দাবি উঠেছিল। পরিস্থিতি দেখে শেষমেশ জোনাল সম্পাদক পদে ‘পরিবর্তন’ আনতে এক প্রকার বাধ্যই হলেন জেলা নেতৃত্ব। নতুন সম্পাদক নয়নবাবু আবার জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের অনুগামী বলেও পরিচিত। এক সময়ে অবশ্য দলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর খানিক ‘দূরত্ব’ও তৈরি হয়েছিল। পরে অবশ্য দীপকবাবুই তাঁকে পার্টির ‘মূলস্রোতে’ ফেরান।
বুধবার দুপুরে কৃষকভবনে পিংলা জোনাল কমিটির সম্মেলন হয়। সব মিলিয়ে ৯২ জন প্রতিনিধির উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও সবাই আসেননি। সিপিএমের এক জেলা নেতা বলেন, “৭৫ জন মতো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে পার্টির কাজকর্ম নিয়েই আলোচনা হয়। প্রতিনিধিরা তাঁদের কথা বলেছেন।” পিংলায় মোট ৫টি লোকাল কমিটি রয়েছে। দুজিপুর, মালিগ্রাম, গোবর্ধনপুর, জলচক ও পিংলা। এর মধ্যে ৩টি লোকাল কমিটির সম্পাদক পদেও এ বার রদবদল হয়েছে। মালিগ্রামে সেখ জব্বরের জায়গায় এসেছেন শক্তি পিছালি। গোবর্ধনপুরে ক্ষুদিরাম দোলুইয়ের জায়গায় এসেছিলেন নয়ন দত্ত। আগে জলচক লোকাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন মনোরঞ্জন বেরা। এ বার হয়েছেন জগন্নাথ ঘোড়ই। দুজিপুর ও পিংলায় অবশ্য লোকাল সম্পাদকের পদে রদবদল হয়নি। দুজিপুরে নিতাই ভট্ট ও পিংলায় কোমল খাটুয়াই সম্পাদক পদে থেকে গিয়েছেন। গত মাসে এই দুজিপুরেই লোকাল সম্মেলন করতে গিয়ে প্রবল বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল সিপিএমকে। সম্মেলনে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। স্থানীয় পার্টি অফিসের সামনে প্যান্ডেল করে লোকাল কমিটির সম্মেলন করার বন্দোবস্ত হয়েছিল। কিন্তু, সম্মেলন শুরু হতেই তৃণমূল মিছিল শুরু করে। পরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
দলীয় সূত্রে খবর, ওই ধরনের ঘটনা এড়াতেই জোনাল কমিটির সম্মেলনে ‘গোপনে’ মেদিনীপুর শহরে করার সিদ্ধান্ত হয়। এ দিন সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা সম্পাদক দীপক সরকার, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর দুই সদস্য সুভাষ দে এবং হরেকৃষ্ণ সামন্ত, জেলা কমিটির সদস্য বিশ্বনাথ দাস প্রমুখ। এ বার সব মিলিয়ে ১৭ জনের কমিটি হবে। এ দিন নতুন কমিটির তালিকা পেশ করেন অন্তরা ভট্টাচার্য। তবে আপাতত ১৩ জনের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি ৪ জনের নাম পরবর্তীতে আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক হবে বলে দলীয় সূত্রে খবর। কেন তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল, সংগঠন বাড়ানোর ক্ষেত্রে তাঁর কোনও ‘ত্রুটি’ সত্যিই ছিল কি না, সে সম্পর্কে অবশ্য অনন্তবাবুর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। নতুন সম্পাদক নয়নবাবু অবশ্য দীর্ঘ দিন ধরেই ঘরছাড়া। এ দিন সম্মেলনেও উপস্থিত ছিলেন না। |
|
|
|
|
|