নিজস্ব সংবাদদাতা • জগৎবল্লভপুর |
সাড়ে তিন বছরের মধ্যে দু’বার বদল হলেন তৃণমূলের প্রধান। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে জগৎবল্লভপুরের মাজু পঞ্চায়েতে। এখানে সিপিএমের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে ভোট দিয়ে সমর্থন জানান তৃণমূলের-ই একাংশ। এটি কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের পঞ্চায়েত। কংগ্রেসের একজন সদস্যও অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। বছর দুই আগে তৃণমূলের অন্তর্কলহে অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে গিয়েছিলেন তৎকালীন দলীয় প্রধান। সে সময়ে অনাস্থা প্রস্তাবটি এনেছিলেন তৃণমূলেরই একাংশ। সমর্থন করেছিল সিপিএম।
এই পঞ্চায়েতে মোট সদস্য সংখ্যা ১৬ জন। কংগ্রেস ও তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা যথাক্রমে ২ এবং ৭। সিপিএমের সদস্য ৬ জন। বিজেপির ১ জন। এ দিন সিপিএমের ৬ জন, তৃণমূলের ২ জন এবং কংগ্রেসের ১ জন অনাস্থার পক্ষে ভোট দেন। প্রধান-সহ তৃণমূলের ৫ সদস্য, কংগ্রেসের ১ জন এবং বিজেপির একমাত্র সদস্য ভোটাভুটিতে অংশ নিতে আসেননি।
মাজু এলাকা থেকে মনোনীত সিপিএমের জগৎবল্লভপুর জোনাল কমিটির সদস্য বৈদ্যনাথ বসু বলেন, “মাজু পঞ্চায়েতটিকে তৃণমূল দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছিল। দুর্নীতি ও স্বজন-পোষণ মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সমস্যাগুলির প্রতি সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই আমরা প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিই। তৃণমূল বা কংগ্রেস সদস্যদের একাংশ কেন সমর্থন করলেন, বলতে পারব না। এটা ওঁদের দলীয় ব্যাপার।”
অপসারিত প্রধান জয়ন্ত দাস দুর্নীতি ও স্বজন-পোষণের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “সিপিএমের একজন সদস্য পঞ্চায়েতে পর পর চারটি বৈঠকে গরহাজির ছিলেন। আইনানুযায়ী তাঁর সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাওয়ার কথা। সে কথা বিডিও-কে জানানো সত্ত্বেও তিনি অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটির দিন স্থির করলেন। এর প্রতিবাদেই আমরা ভোটাভুটিতে অংশ নিইনি। সুবিচার চেয়ে আমরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছি।”
অন্য দিকে তৃণমূলের মাজুর অঞ্চল সভাপতি আনন্দ ভট্টাচার্য বলেন, “যে আমাদের দলের যে দু’জন সদস্য সিপিএমের আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অন্য দিকে কংগ্রেসের মাজুর অঞ্চল সভাপতি অলিপ খান বলেন, “আমাদের দলের পঞ্চায়েত সদস্য বিবেক অনুযায়ী কাজ করেছেন। কিছু বলার নেই।”
সিপিএমের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে যে দু’জন তৃণমূল সদস্য ভোট দেন, তাঁদের একজন অমর বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০০৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে তিনিই প্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালের শেষে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন দলেরই পাঁচ জন সদস্য। ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেছিলেন সিপিএমের ছ’জন সদস্য। তার ফলেই প্রধান পদটি খোয়াতে হয় জয়ন্তবাবুকে। এ দিন জয়ন্তবাবু বলেন, “আমি যেটা ভাল বুঝেছি করেছি। আমার বিরুদ্ধেও দলের জেলা নেতৃত্বের নির্দেশ অমান্য করেই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল। কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
বিডিও সলমন হুসনি জানান, সিপিএমের একজন পঞ্চায়েত সদস্যের বিষয়ে যে আপত্তির কথা তৃণমূলের পক্ষ থেকে তাঁকে জানানো হয়েছেলি সে বিষয়ে সব কাগজপত্র তিনি মহকুমাশাসক (সদর)-এর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। বিডিও-র কথায়, “ভোটাভুটি স্থগিত করার নির্দেশ আমাকে দেওয়া হয়নি। আদালতেরও কোনও নির্দেশ ছিল না।” |