নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
চারটি স্কুলবাস চালানোর পাশাপাশি একটি বাস হাতে রাখেন মালিক। যাতে কোনও বাস খারাপ হলে পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছতে অসুবিধা না হয়। তাঁর সেই ‘রিকভারি বাস’-এর ভাবনাই কাজে লাগল বুধবার। দুর্ঘটনায় কয়েক জন ছাত্র-ছাত্রীর চোট লাগলে ওই বাস পাঠিয়েই তাদের দ্রুত নিয়ে যাওয়া হল স্কুলে। স্থানীয় এক বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে আহত চার পড়ুয়াকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এ দিন সকালে বালির দু’নম্বর জাতীয় সড়কে জয়পুর বিল এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, পৌনে ১১টা নাগাদ বালির দিক থেকে জাতীয় সড়ক ধরে একটি ছোট স্কুলবাস ডানকুনি কোল কমপ্লেক্স এলাকার ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ‘মেথডিস্ট’-এ যাচ্ছিল। বাসটিতে মোট ৩৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ছিল। পাশেই একটি দশ চাকার ফাঁকা লরিও ডানকুনির দিকে যাচ্ছিল। অভিযোগ, জয়পুর বিলের কাছে জাতীয় সড়কের ডিভাইডারের মাঝের কাটা অংশ দিয়ে আচমকাই লরিটি ফের বালির দিকে ঘুরে যায়। সেই সময়ে লরির ধাক্কায় স্কুলবাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারের কাটা অংশ দিয়েই উল্টো দিকের লেনে চলে যায়। উল্টো দিকের লেন দিয়ে তখন ধূলাগড়-করুণাময়ী রুটের একটি যাত্রী-বোঝাই বাস বালি ব্রিজের দিকে আসছিল। ওই বাসের চালক কাজী নজরুল বলেন, “হঠাৎ দেখি একটা ছোট বাস লরির ধাক্কা খেয়ে আমার বাসের সামনে। কোনও মতে বাস দাঁড় করালাম। ছোট বাসটা আমাদের বাসের সামনে ধাক্কা মেরে পাশের জঙ্গলে ঢুকে গেল।”
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সাদা রঙের ছোট স্কুলবাসটি রাস্তার পাশে কাঁটাতারে ঘেরা জাতীয় সড়কের জমিতে জঙ্গলে ঢুকে গিয়েছে। বাসটির সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত। খবর পেয়েই বাসমালিক পাঠিয়ে দেন কাছেই রাখা সেই ‘রিকভারি’ বাস। তাতে চাপিয়েই আতঙ্কিত ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। ধাক্কার চোটে পুরো দুমড়ে গিয়েছিল ধূলাগড়-করুণাময়ী রুটের বাসটির সামনের অংশও। ওই বাসের এক মহিলা যাত্রীকে নিবেদিতা সেতু টোল প্লাজার অ্যাম্বুল্যান্সে করে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকেও প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অরূপ মান্না বলেন, “উল্টো দিকের লেনের বাসটির সঙ্গে ধাক্কা না-লাগলে ওই স্কুলবাসটি উল্টে যেত। তাতে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটত। ফাঁকা বাসটা চলে আসায় তাড়াতাড়ি ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পেরেছিলেন স্কুলবাসের চালক।” বাসমালিক, বালির বাসিন্দা নারায়ণচন্দ্র পাল বলেন, “সব সময়েই একটা রিকভারি বাস রাখি, যাতে আমাদের কোনও বাস খারাপ হলে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া যায়। আজ সেটাই কাজে লাগল।”
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, মোট ১০ জন ছাত্রছাত্রীর চোট লেগেছিল। তারা স্কুলে পৌঁছনোর পরে চার জনের চোট গুরুতর মনে করে ডানকুনিরই একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে প্রত্যেককেই প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। চালকের থেকে ঘটনার খবর পেয়েই সেখানে ছুটে যান নারায়ণবাবুও।
স্কুলের ফাদার নর্টন ইমানুয়েল বলেন, “প্রত্যেকেরই সামান্য চোট লাগে। সবাই স্কুলও করেছে। একাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়ার পায়ে চোট লেগেছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।”
এ দিন দুর্ঘটনার পরে দশ চাকার লরিটি পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয় লোকেরা সেটিকে ধরে ফেলেন। পুলিশ ওই লরির চালককে গ্রেফতার করেছে। |