সম্পাদকীয় ২...
দাওয়াই
ছাত্র রাজনীতি কাহাকে বলে? পশ্চিমবঙ্গবাসী সাম্প্রতিক কালে তাহা বিলক্ষণ বুঝিয়া গিয়াছেন। রক্তপাত। সংঘর্ষ। চরম বিশৃঙ্খলা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একের পর এক অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটিবার পরে টনক নড়িয়াছে। পরিস্থিতি পরিবর্তনের জন্য কিছু কাজকর্ম শুরুও হইয়াছে। রাজ্যের বিভিন্ন কলেজের ছাত্র ইউনিয়নে একটি অভিন্ন নির্বাচনী বিধি চালু করিবার কথা ভাবা হইতেছে। উদ্দেশ্যটি সাধু। দাওয়াইটি যথেষ্ট নহে। কারণ, রোগের সংক্রমণ অনেক গভীরে। ছাত্র ইউনিয়নের নির্বাচনে প্রার্থীদের হাজিরা খাতায় কড়াকড়ি করিয়া বিশেষ লাভ নাই। বিষবৃক্ষটিকে সমূল উপড়াইতে হইবে। বিষবৃক্ষটির নাম দলীয় রাজনীতি। বিগত বেশ কিছু কাল ধরিয়াই বিভিন্ন কলেজ এবং বিদ্যালয় দলতান্ত্রিক রাজনীতির আখড়া হইয়া উঠিয়াছে। ছাত্র-স্বার্থ নামে একটি ‘শিখণ্ডী’ খাড়া করিয়া দল-স্বার্থসিদ্ধির আপ্রাণ প্রতিযোগিতা চলিতেছে। এই ক্ষেত্রে শাসক এবং বিরোধী পক্ষ একাকার। বিভিন্ন ফেস্টুন ও লিখনে শিক্ষাঙ্গনের মুখ ঢাকিয়া গিয়াছে। প্রতিবাদ করিবার উপায় নাই। বাহুবল লইয়া শাসক ও বিরোধী যে যাহার গড় সামলাইতে ব্যস্ত। তৎসহ, গড় দখলে তৎপর। এই পরিস্থিতিতে লিংডো কমিশনের সুপারিশ হাজিরা খাতাটির শোভাবর্ধন করিতে পারে, কাজের কাজ কত দূর করিবে, সন্দেহ বিস্তর।
পরিত্রাণের একটি উপায় আছে। সহজ উপায়। ছাত্র ইউনিয়ন-এর ভিতর দলীয় রাজনীতি ঢুকিবে না। প্রয়োজনে আইন করিয়া এই অনুপ্রবেশটি নিষিদ্ধ করিতে হইবে। এই ধরনের বন্দোবস্তের ভিতর গণতান্ত্রিক অধিকার ইত্যাদি ক্ষুণ্ণ হইবার কোনও শঙ্কা নাই। কোনও শিক্ষার্থী ইচ্ছা করিলে যে কোনও দলকে সমর্থন করিতে পারেন। অভিরুচি থাকিলে দলীয় কাজকর্মও করিতে পারেন। তাঁহার মস্তিষ্কে এই কথাটি পৌঁছানো প্রয়োজন যে শিক্ষাঙ্গনের ভিতর সেই রাজনৈতিক তকমাটি চলিবে না। ছাত্র-স্বার্থেই চলিবে না। প্রশ্ন উঠিবে, ছাত্র-স্বার্থ কী? গণতন্ত্রের সুখ্যাত মার্কিন অভিধাটির শরণার্থী হওয়া যায়। ছাত্রদের, ছাত্রদের জন্য এবং ছাত্রদের দ্বারা যাহা কিছু, তাহাকেই ছাত্র-স্বার্থের অনুকূল বলিয়া বর্ণনা করা যায়। দলীয় রাজনীতির ছায়া এবং ক্ষেত্রবিশেষে দলীয় কর্তাব্যক্তিদের প্রতাপ ইহার একটি শর্তও পূরণ করে না। দলীয় স্বার্থ পূরণ করে, নিঃসন্দেহে। কলেজ দখলে থাকিলে ছাত্র-যুব চেতনাকে উদ্বুদ্ধ করা যায়। সেই বিচিত্র উদ্বোধনের কারণ ও ফলাফল বঙ্গবাসী জানেন। তাহার নাম ভোট। এক্ষণে প্রশ্ন, দাওয়াইটি প্রয়োগ করা হইবে কি? পরিস্থিতি ইহা দাবি করে, কিন্তু প্রশাসন কী করিবে? বিরোধীরাই বা কী করিবেন? বর্তমানে বিরোধী এবং মাত্র কিছুকাল পূর্বেই একাধিক্রমে প্রায় সাড়ে তিন দশক ক্ষমতায় আসীন বামফ্রন্টের শাসনপর্বেই শিক্ষার রাজনীতিকরণ ক্রমশ ন্যক্কারজনক দশায় পৌঁছাইয়াছিল। বামফ্রন্টের তদানীন্তন রণনীতিকারদের পুরোধা, প্রয়াত অনিল বিশ্বাস মহাশয়ের সক্রিয় আগ্রহে রাজ্য জুড়িয়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের ঢেউ উঠিয়াছিল। বিষবৃক্ষটি সেই সময়েই রোপিত হয়। অতঃপর তাহা ডালপালা মেলিয়াছে। কালক্রমে ফলও ফলিয়াছে। বিষময় ফল। ছাত্র-যুব চিত্তে রাজনৈতিক চেতনা প্রসারের দায়ে পঠনপাঠন শিকায় উঠিবার দশা হইয়াছে। প্রশাসন চক্ষু বুজিয়া থাকিয়াছে, কিছু বলে নাই। রাজনীতি বড় বালাই। চৌত্রিশ বৎসরান্তে ক্ষমতায় পরিবর্তন আসিয়াছে। শিক্ষার অবস্থা সেই তিমিরে। বরং, অন্ধকার আরও গভীরতর হইবার পথে। আলো আনিতে হইলে কঠোর দাওয়াই প্রয়োজন। তাহার জন্য দলীয় স্বার্থের দোহাই পাড়িলে চলিবে না। কলেজ পঠনপাঠনের জন্য। তাহাই সর্বোত্তম ছাত্র-স্বার্থ। দলীয় রাজনৈতিক চেতনা বরং শিক্ষাঙ্গনের বাহিরেই অপেক্ষা করুক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.