ভিডিও-বিতর্কে আন্দামান প্রশাসন
খাবারের টোপ দিয়ে জারোয়া-নাচ দেখলেন পর্যটকরা
বেড়াতে গিয়ে নিছক আমোদপ্রমোদের জন্য আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রাকে অসম্মান করার অভিযোগ উঠল আন্দামানে।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমের হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, খাবারের লোভ দেখিয়ে আন্দামানের লুপ্তপ্রায় জারোয়াদের নাচ দেখাতে বাধ্য করছেন কিছু পর্যটক। ওই ভিডিও দেখার পরেই বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে আন্দামান-নিকোবর প্রশাসনের কাছে ঘটনার রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় পর্যটন ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় প্রশাসনের একাংশ জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় আদিবাসী বিষয়ক মন্ত্রী কিশোরচন্দ্র দেও এ দিন বলেন, “খবরের কাগজে ঘটনাটি পড়েছি। আর ভিডিওতেও যা দেখা গিয়েছে, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক। রিপোর্ট চেয়েছি। সব দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
যদিও আন্দামান-নিকোবর প্রশাসনের দাবি, ওই ভিডিও ফুটেজ অন্তত ১০ বছরের পুরনো। ইচ্ছাকৃত ভাবে তা এখন সামনে আনা হচ্ছে। তাদের পাল্টা অভিযোগ, জারোয়াদের ভিডিও তুলে এবং তা প্রকাশ করে আইন ভেঙেছে সংবাদমাধ্যমই। লোকসভায় দ্বীপপুঞ্জের একমাত্র প্রতিনিধি বিষ্ণুপদ রায়ের দাবি, জারোয়ারা এখন মূল স্রোতে ফিরতে চাইছেন। সরকারের উচিত সেই চেষ্টাকে সম্মান করা। এই পরিস্থিতির মধ্যেই আগামী ২১ তারিখ আন্দামান যাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর এই সফর পূর্ব নির্ধারিত হলেও মন্ত্রক সূত্রে জানা যাচ্ছে, জারোয়াদের ঘটনা নিয়ে সেখানে আলোচনা হবে।
বিতর্কের সূত্রপাত ২০১০ সালে। একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অভিযোগ করে, আন্দামানে ‘হিউম্যান সাফারি’ চলছে। সেখানে জন্তু-জানোয়ারের মতো জারোয়াদের খোঁজে গভীর জঙ্গলে ঘুরছে পর্যটক দল। পরের ঘটনা ২০১১-র জানুয়ারি মাসে। দুটি বিদেশি সংবাদসংস্থা একটি ভিডিওয় দেখায়, দক্ষিণ আন্দামানের এক এলাকায় বেশ কিছু জারোয়াকে জোর করে নাচতে বলছে পর্যটক দল।
এ দিকে সুপ্রিম কোর্টের ২০০২ সালের নির্দেশ অনুযায়ী, জারোয়াদের এলাকায় যাওয়া ও জোর করে তাদের বাইরে আনা বেআইনি। এমনকী, মাঝপথে জারোয়াদের বসতি থাকার জন্য উত্তর ও দক্ষিণ আন্দামানের মধ্যে যোগাযোগের প্রধান জলপথ ‘আন্দামান ট্রাঙ্ক রোড’-এর ব্যবহারও বিশেষ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে প্রশাসন। কারণ জারোয়ারা বিশ্বের প্রাচীনতম উপজাতিদের অন্যতম এবং বর্তমানে লুপ্তপ্রায়। তারা জঙ্গলে থাকতেই স্বচ্ছন্দ। তাই শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, জারোয়াদের বিরক্ত করা যাবে না। তাদের এলাকায় যাওয়া এবং ছবি তোলাও পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
ভিডিও প্রকাশের পরেই বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রশ্ন তোলে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পর্যটকেরা এমন কাণ্ড ঘটানোর সাহস ও সুযোগ পেলেন কী করে। তথাকথিত সভ্যরা জারোয়াদের মানুষ বলেই ভাবছেন না, এমন অভিযোগও তোলেন মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা। এর পরেই ঘটনার প্রতিবেদক দাবি করেন, স্থানীয় পুলিশ ঘুষের বিনিময়ে বেআইনি ভাবে পর্যটকদের নিষিদ্ধ এলাকায় নিয়ে গিয়েছিল। পুলিশের উপস্থিতিতেই জারোয়াদের দ্বীপে নামেন পর্যটকেরা। তারা খাবার ও মিষ্টির লোভ দেখিয়ে পোশাক ছাড়াই আদিবাসীদের নাচতে বাধ্য করেন। সম্প্রতি ভিডিওটি দেশের কিছু সংবাদমাধ্যম দেখাতে প্রতিক্রিয়া তীব্র হয়। এর পরেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছে, কোথায় কী ভাবে ওই ভিডিও তোলা হয়েছে এবং কী ভাবে, কাদের সাহায্যে লোকজন জারোয়াদের ডেরায় গিয়েছিল তা খুঁজে বের করতে হবে।
আন্দামান-নিকোবর প্রশাসন যদিও তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করছে। আন্দামানের ডিজিপি এস বি দেওলের দাবি, ভিডিওটি ১০ বছর আগের। পুলিশের ঘুষ নেওয়ার অভিযোগও মানতে চাননি দেওল। তাঁর কথায়, “আইন ভেঙেছেন প্রতিবেদক নিজেই। তিনিই বেআইনি ভাবে জারোয়া এলাকায় গিয়ে তাদের নাচতে বাধ্য করেন, ভিডিও বানান। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ভিডিওটি দেখানোর জন্য দিল্লির দুটি সংবাদমাধ্যমকে নোটিস পাঠানো হবে বলেও আন্দামান-নিকোবর প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.