ফের মানুষের ভুলেই ধাক্কা ব্রহ্মপুত্র মেল-মালগাড়ির
ফুলিয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি সাহেবগঞ্জে!
বুধবার ভোরে মালদহ ডিভিশনের সাহেবগঞ্জ-বারহাড়োয়া শাখায় যে ভাবে ব্রহ্মপুত্র মেলের একটি কামরা লাইনচ্যুত হল, তাতে মানুষের গাফিলতিকেই প্রাথমিক ভাবে দায়ী করছেন রেল-কর্তারা। সিগন্যাল ব্যবস্থা ঠিক ছিল কি না, দেখা হচ্ছে তা-ও।
ফুলিয়ার ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন এক রেলকর্মী। আর এদিনের ঘটনায় মৃত্যু হল পাঁচ যাত্রীর। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল মৃতদের ৪ জনের নাম জানিয়েছে। তাঁরা হলেন অসম রাইফেলসের বিজয় রায় (৩২), বারহারওয়ার বাসিন্দা গিরিজা দেবী (৫৫), মালদহের বাসিন্দা দীনেশ মহালদার ও নিরাটের বাসিন্দা নরেন্দ্র কুমার (৩১)। এ ছাড়া বছর পঁচিশের এক তরুণীও মারা গিয়েছে। জখমদের মধ্যে একই পরিবারের পাঁচ জন রয়েছেন। তাঁদের মালদহ রেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।
ফুলিয়ার ঘটনার জন্য একটি ট্রেনের চালককেই প্রাথমিক তদন্তে দায়ী করেছেন রেলের তদন্তকারীরারা। লাল সিগন্যাল উপেক্ষা করে তিনি ট্রেন চালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক তদন্ত বলছে, করণপুরাতো স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা মালগাড়ির চালক তাঁর দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করেননি। স্টেশনমাস্টার এবং কেবিনম্যানও তাঁদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
দুর্ঘটনার পর। ঝাড়খন্ডের সাহেবগঞ্জে। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
রেল সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে পাথর বোঝাই একটি মালগাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে চালক, সহকারী চালক এবং গার্ড মেন লাইনেই ট্রেনটি দাঁড় করিয়ে সাহেবগঞ্জ স্টেশনে চলে যান। বুধবার ভোরে আপ ব্রহ্মপুত্র মেল লুপ লাইন দিয়ে ওই এলাকা পার হওয়ার সময়ে মালগাড়িটি একশো মিটার পিছিয়ে এসে ব্রহ্মপুত্র মেলের ৯ নম্বর কামরায় ধাক্কা দেয়। মালগাড়ি হঠাৎ করে পিছিয়ে এল কী ভাবে? এখানেই মালগাড়ির চালকের গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁরা বলছেন, ওয়াগনগুলি অনেক ভারী। ঢালে থাকলে সেগুলি গড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই দাঁড়িয়ে থাকার সময় ওয়াগনগুলিকে চেন দিয়ে লাইনের সঙ্গে বেঁধে রাখার নিয়ম। কিন্তু মালগাড়ির চালক সম্ভবত তা করেননি। তা ছাড়া, তিনি মালগাড়ির ব্রেকের লিভার নামিয়ে যাননি। সেই কারণেই লুপ লাইন দিয়ে আসা ব্রহ্মপুত্র মেলের কম্পনে মালগাড়িটি গড়াতে শুরু করে বলে মনে করছেন কর্তারা।
করণপুরাতোর স্টেশনমাস্টার এবং কেবিনম্যানকেও এই ঘটনার জন্য দুষছেন রেল-কর্তারা। কেন? রেল সূত্রের খবর, কোনও লাইনে মালগাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখতে হলে তার সামনে এবং পিছনের পয়েন্ট দু’টি এমন ভাবে রাখতে হয়, যাতে ওই মালগাড়ি কখনওই অন্য লাইনে চলে যেতে না পারে। কিন্তু তা মানা হয়নি বলেই মনে করছেন রেল-কর্তারা। কিন্তু এখনকার সিগন্যাল ব্যবস্থায় পয়েন্ট ঠিকঠাক না থাকলে সিগন্যাল লাল হয়েই থাকার কথা। সেক্ষেত্রে ব্রহ্মপুত্র মেল সবুজ সঙ্কেত পেল কোথা থেকে, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

মালদহের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার হর্ষকুমার বলেন, “এক বা একাধিক ভুলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে আপাতত মনে করা হচ্ছে। চালক সম্ভবত ব্রেক খোলা রেখে চলে গিয়েছিলেন।” রেলের প্রাক্তন কর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুরও বলেছেন, “এই দুর্ঘটনা কখনওই এক জনের ভুলে হয়নি।” করণপুরাতো স্টেশনের ম্যানেজার রাজকুমার দাসের কথাতেও ওই গাফিলতির ইঙ্গিতই মিলেছে। মেন লাইনে মালগাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে ট্রেনের চালক প্রথমে তাঁকে ঘটনাটি জানান। ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ ট্রেনের চালক, সহকারী চালক এবং গার্ড চলে যান। রাজকুমারবাবু বলেন, “মেন লাইন আটকে থাকায় লুপ লাইনে ব্রহ্মপুত্র মেলকে যাওয়ার সিগন্যাল দিই। আচমকা প্রচণ্ড শব্দ শুনে বার হয়ে দেখি ব্রহ্মপুত্র মেলকে ধাক্কা দিয়েছে মালগাড়ি।” সাহেবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ঘটনার পৃথক তদন্ত শুরু হয়েছে। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের পক্ষ থেকে মৃতের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা, গুরুতর জখমদের ৫০ হাজার এবং সামান্য জখমদের ১০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার জেনারেল ম্যানেজারদের সম্মেলনে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা নিয়ে প্রথমেই সরব হন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে আগাগোড়া আক্রমণাত্মক ছিলেন রেলমন্ত্রী। কী ভাবে দুর্ঘটনা কমিয়ে শূন্যে নিয়ে আসা যায়, তা নিয়ে জেনারেল ম্যানেজারদের একটি রোডম্যাপ তৈরির নির্দেশ দেন তিনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.