বিধানসভা ভোট ঘোষণার প্রাক্ মুহূর্তে নিউটাউনে জমি বণ্টনের যে সিদ্ধান্ত তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার নিয়েছিল, ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তা বাতিল করে দেয় হিডকো-র নতুন পরিচালন পর্ষদ। নতুন সরকারের সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে এ বার আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে জমিপ্রাপক সংস্থারা। এদের মধ্যে রয়েছে একটি পুরসভাও।
বস্তুত এমন দু’টি মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট ইতিমধ্যে স্থগিতাদেশও জারি করেছে। অর্থাৎ, ওই সব ক্ষেত্রে মামলার নিষ্পত্তি না-হওয়া পর্যন্ত নতুন সরকারের নির্দেশ কার্যকর করা যাবে না, সংশ্লিষ্ট জমি কাউকে দেওয়াও যাবে না। অন্য দিকে স্থগিতাদেশ পাওয়া মামলাগুলি নিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হিডকো। সংস্থার চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশিস সেন বলেছেন, “আমরা আপিলে যাব। সে জন্য আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।”
গত বছর ১ মার্চ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়েছিল। ঠিক তার আগের দিন, অর্থাৎ ২৮ ফেব্রুয়ারি হিডকো’র তৎকালীন চেয়ারম্যান তথা আবাসনমন্ত্রী গৌতম দেব সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠক ডেকে ১০২টি প্লট বিলির সিদ্ধান্ত নেন। তৃণমূল
অভিযোগ তোলে, জমির মাধ্যমে ‘দাক্ষিণ্য’ বিলিয়েছেন গৌতমবাবু। সরকার পরিবর্তন হলে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে হিডকো-র নতুন পরিচালন পর্ষদ ২৮ ফেব্রুয়ারির সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়।
২৮ ফেব্রুয়ারি গৌতমবাবুর নেতৃত্বে হিডকো’র বিগত পরিচালন পর্ষদের শেষ বৈঠকে নিউটাউনে মোট যে ১০২টি প্লট বিলি হয়েছিল, তার ৭৪টি-ই ‘চেয়ারম্যান কোটা’য়। ওই ১০২টি প্লটের মধ্যে ২-৬ কাঠার বসতজমি এবং ৫-২০ কাঠার অ-বসত জমি রয়েছে। অধিকাংশ প্রাপককে ‘অ্যালটমেন্ট লেটার’ পাঠিয়ে দেওয়া হয়, অনেকে জমির পুরো দাম অথবা প্রথম কিস্তির টাকা জমাও দিয়ে দেন। কিন্তু তার পরেই নতুন সরকারের সিদ্ধান্তে সব বাতিল হয়ে গিয়েছে।
এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের সেই নির্দেশের বিরুদ্ধেই মামলা শুরু হয়েছে। দু’টি ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ পাওয়ার পাশাপাশি একটি পুরসভা, দু’-তিনটি সমবায় ও জমিপ্রাপকের তালিকায় থাকা আরও কয়েকটি সংস্থা মামলার তোড়জোড় করছে। যে প্রসঙ্গে গৌতমবাবুর প্রতিক্রিয়া, “চেয়ারম্যানের কোটা সুপ্রিম কোর্ট নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। এ নিয়ে অতীতে হাইকোর্টে যত মামলা হয়েছে, তার একটাও টেকেনি।” প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রীর মন্তব্য, “ভোটের সূচি ঘোষণার আগের দিনের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে সরকার। তা হলে ওই সময়ে রেলমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী কী সই করেছেন, তা-ও দেখা দরকার। এমনকী, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর যা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে সবও তো দেখা উচিত ছিল!”
চেয়ারম্যানের কোটায় নিউটাউনে জমি পেয়েছিল ব্যাগ অ্যাডভাইসরি প্রাইভেট লিমিটেড নামে এক সংস্থা। তাদের অভিযোগ: হিডকো-র চেয়ারম্যান কোটায় বাণিজ্যিক প্লট দেওয়া সংক্রান্ত ২০০৮-এ প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে তারা চার্টার্ড অ্যাকাউট্যান্টদের একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির জমি চেয়ে আবেদন করে। নিউটাউনের অ্যাকশন এরিয়া টু-তে তাদের জন্য ১৫ কাঠা বরাদ্দ হয়, কাঠাপিছু ১৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা দরে। সংস্থার তরফে আদালতে বলা হয়েছে, হিডকো প্রথমে টাকা জমা নিতে চায়নি। পরে জানিয়ে দেয়, প্লটটি বাতিল করে দেওয়া হল।
এর পরেই কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে সংস্থাটি। তাদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অরুণাভ ঘোষ। হিডকো-র পক্ষে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র। অরুণাভবাবু জানান, দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে প্লট বাতিলের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন বিচারপতি সৌমিত্র পাল। একই ধরনের অভিযোগে আর একটি সংস্থা ‘গ্রোয়িং ডিল ট্রেডার প্রাইভেট লিমিটেড’ও হিডকো-র বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তারাও বিজ্ঞাপনের ভিত্তিতে আবেদন করে কুড়ি কাঠা জমি পেয়েছিল। আদালতে সংস্থাটির অভিযোগ: জমির দামের একাংশ মেটানো সত্ত্বেও তাদের জমি বাতিল করা হয়েছে। এদের হয়ে মামলাটি লড়ছেন অ্যাডভোকেট জেনারেলের ছেলে অভ্রজিৎ মিত্র। হাইকোর্ট এ ক্ষেত্রেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে। আগামী সোমবার মামলাটির পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা। |