শহরে লাইসেন্সপ্রাপ্ত সাইকেল-ভ্যানের সংখ্যা বিশ হাজারের বেশি নয়। কিন্তু কলকাতার পথে এই তিন চাকার ভ্যান চলছে এক লক্ষেরও বেশি। এই হিসেবেই শহরে সাইকেল-ভ্যানের দৌরাত্ম্যের ছবিটা স্পষ্ট।
সস্তায় মাল বহনের জন্যই এই ভ্যান জনপ্রিয়। কিন্তু শহরের ব্যস্ততম বহু এলাকা এর দাপটে ক্রমেই গতি হারাচ্ছে। মধ্য কলকাতার প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা জুড়ে সম্পূর্ণ অবৈধ এই যান চলছে দিনভর। বাড়ছে যানজট। অথচ, পুলিশ প্রায় নির্বিকার। অবৈধ সাইকেল-ভ্যানের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি পুলিশ কবুলও করছে। এগুলি হামেশাই দুর্ঘটনার কারণও হয়ে দাঁড়ায়। সব থেকে আতঙ্কে থাকেন শৌখিন গাড়ির চালকেরা। তাঁদের ঝকঝকে গাড়ির রং চটাতে সাইকেল-ভ্যানের জুড়ি নেই।
যে কোনও সময়ে যে কোনও রাস্তায় ভ্যানগুলির দেখা মেলে। সন্ধে ছ’টার পর থেকে স্ট্র্যান্ড রোড ধরে হাওড়ামুখী মালবোঝাই ভ্যানের মিছিল দেখলে তাদের প্রকৃত সংখ্যাটা আন্দাজ করা যায়। হাওড়া সেতুর উপর যানজটে সব গাড়ি আটকে যায় শুধুমাত্র সাইকেল-ভ্যানের জন্য। |
শহরের পথে গতি আনতে ২০০৫ সালে কলকাতা থেকে টানা-রিকশা তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তার পরে টানা-রিকশার সংখ্যা কমলেও তা বন্ধ হয়নি। পুলিশের বক্তব্য ছিল, যে সব টানা-রিকশা রাস্তায় দেখা যায়, সেগুলির লাইসেন্স ফুরোয়নি। কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সম্প্রতি জানান, শহরে টানা-রিকশা থাকবে। কিন্তু মালবাহী ভ্যানের সংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে, তাতে মনে হবে, শুধু সাইকেল-ভ্যানেরই সব রাস্তায় চলার ছাড় আছে। জওহরলাল নেহরু রোড, যেখানে সাইকেলও নিষেধ, সেখানেও ভ্যান চলে দাপিয়ে।
তবে কলকাতায় লাইসেন্সহীন সাইকেল-ভ্যানের সংখ্যা ঠিক কত, তার হিসেব দিতে পারেনি পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্যা স্বীকার করে বলেন, “ধরপাকড়ের পরেও যে সাইকেল-ভ্যানের দৌরাত্ম্য কমেছে, তা বলা যাবে না।” দিলীপবাবু জানান, পুরসভা কেবল ২০ হাজার সাইকেল-ভ্যানকে লাইসেন্স দিতে পারে। বড়বাজার, চাঁদনি চক, রাজাবাজার বা শিয়ালদহ অঞ্চলে মালবাহী ভ্যানগুলির দাপট দেখলেই বোঝা যায়, অবৈধ ভ্যান কী হারে বাড়ছে। পুলিশকর্তার দাবি, তাঁরা নিয়মিত লাইসেন্সবিহীন সাইকেল-ভ্যান বাজেয়াপ্ত করেন। পরে সেগুলি নিলামে বিক্রি হয়। প্রতিটি সাইকেল-ভ্যানে পুরসভার ছাপ মারা একটি প্লেট থাকে। সেটিই লাইসেন্স। ভ্যান ধরার পরে পুলিশ সেই প্লেট পুরসভায় পাঠায়। পুরসভা তা বৈধ বলে জানালে ওই ভ্যানটি ছেড়ে দেওয়া হয়। মেয়র এই সংখ্যাতত্ত্বে ঢুকতে রাজি নন। তিনি বলেন, “যাঁদের লাইসেন্স আছে, তাঁরাই শুধু পুর-এলাকায় সাইকেল-ভ্যান চালাতে পারবেন। নতুন করে লাইসেন্স দেওয়া হবে না।” কলকাতাই একমাত্র মহানগর, যেখানে সাইকেল-ভ্যানের মতো ধীর গতির যান চলে। এবং তা যানজট সৃষ্টি করে পরোক্ষে বায়ুদূষণের কারণ হয়ে ওঠে। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত ইতিমধ্যেই বায়ুদূষণ সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলায় কলকাতায় সাইকেল-ভ্যানের দৌরাত্ম্য কমানোর আর্জি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “রাজ্যে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু যে সমস্ত ব্যবস্থা নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবর্তন আনে, তার কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।” বায়ুদূষণ কমাতে সাইকেল-ভ্যান নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিতেই হবে বলে মত সুভাষবাবুর। |