‘পরিবর্তন’ মিলন মেলায়।
মঙ্গলবার আলোচনা চক্রে বলতে এসে দীর্ঘক্ষণ ফাঁকা হলঘরে বসে থাকতে হয়েছিল জেনারেল মোটরস-এর কর্তাকে। বুধবার অবশ্য আলোচনাচক্র শুরু হল নির্ধারিত সময়। হলঘরও ছিল প্রায় ভর্তি। আলোচনাচক্রে সামিল হতে গাড়িতে চাপিয়ে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম এবং রাজ্য শিল্প পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের আধিকারিক ও কর্মীদের নিয়ে আসা হয় এ দিন। তবে শিল্পমহলের প্রতিনিধিরাও অনেক বেশি সংখ্যায় আলোচনাচক্রে উপস্থিত ছিলেন।
এ দিনও দুপুর থেকেই মেলার মাঠে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিল্প-কর্তা, কর্মী ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি দফতরের কাজকর্ম সেখানেই সারেন তিনি। শিল্প সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, শিল্পোন্নয়ন নিগমের এমডি নন্দিনী চক্রবর্তী-সহ শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের পদস্থ কর্তারাও হাজির ছিলেন শিল্প সম্মেলনে।
সরকারি সূত্রের খবর, আলোচনাচক্রে শিল্প মহলের আশানুরূপ প্রতিনিধিত্ব থাকবে কি না, এই আশঙ্কায় এ দিন সকাল থেকেই শিল্পোন্নয়ন নিগম ও পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের অফিসে তৎপরতা শুরু হয়। মেলায় যোগ দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের তরফে বার্তা পাঠানো হয় আধিকারিক ও কর্মীদের।
বেলা দুটো থেকে পরপর তিনটি আলোচনা সভা হওয়ার কথা ছিল মিলন মেলা প্রাঙ্গণে। এমনিতেই মঙ্গলবারের চেয়ে বেশি সংখ্যক শিল্প সংস্থার আলোচনা অংশ নেওয়ার কথা ছিল। ফলে প্রতিনিধির সংখ্যাও বেশি ছিল।
উপরন্তু মেলার বিভিন্ন স্টলের প্রতিনিধি ও নিগম-কর্মীদের হাজিরার ফলে আলোচনার মধ্যেই বাড়তি চেয়ারের বন্দোবস্ত করতে হয় সেমিনার-হলে।
সকালে আইএসআই-এর অনুষ্ঠান সেরে দ্রুত মেলায় পৌঁছন শিল্পমন্ত্রী। সঙ্গী ছিলেন চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। মেলায় শিল্পমন্ত্রীর ‘মেক-শিফট’ অফিসে শুরু হয় দু’জনের বৈঠক। পরে যোগ দেন শিল্প সচিবও। মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন পূর্ণেন্দুবাবু। তারই রেশ টেনে এ দিনের বৈঠক বলে জানান শিল্পমন্ত্রী। পূর্ণেন্দুবাবু মন্তব্য করতে না চাইলেও শিল্পমন্ত্রী পরে জানান, রাজ্যের স্বার্থ সুরক্ষিত রেখেই হলদিয়া পেট্রোকেমের সমস্যার সমাধান করতে চান তাঁরা। তবে সংস্থাটি আগে যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সে জন্য উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শও পূর্ণেন্দুবাবুকে দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “শুধু শেয়ার নিয়েই কেন এত আলোচনা হচ্ছে? সংস্থাটি কী ভাবে সচল থাকে সেটাও তো গুরুত্বপূর্ণ।”
শিল্প সম্মেলনে ‘নামী-দামি’ শিল্পপতি কে এলেন, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন শিল্পমন্ত্রী। বরং অল্প সময়ের মধ্যে আয়োজিত এই মেলায় যে সাড়া মিলেছে তা অত্যন্ত ‘উৎসাহব্যঞ্জক’ বলে তাঁর দাবি। শিল্পমন্ত্রীর কথায়, “একজন ছোট শিল্পোদ্যোগীও আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।” শিল্পমন্ত্রী জানান, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রাজ্যে তেল শোধনাগার তৈরির প্রস্তাব দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অনুমোদন পেলে বিষয়টি নিয়ে তাঁরা এগোবেন। এ ছাড়া মুম্বইয়ের একটি বণিকসভা মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁকে আগামী মাসে তাদের বার্ষিক সভায় আমন্ত্রণ জানিয়েছে। রাজারহাটে ইনফোসিস-এর প্রস্তাবিত কেন্দ্রটি নিয়েও তিনি নারায়ণমূর্তির সঙ্গে এ দিন ফোনে কথা বলেন। পরে এ নিয়ে হিডকো-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেনও বাসুদেববাবুর কাছে কাজকর্মের অগ্রগতির খোঁজখবর নেন।
এ দিন সকালে মার্কিন সংস্থা ‘পি অ্যান্ড এইচ জয় মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট ইন্ডিয়া’ সংস্থার কর্তারা জানান, তাঁরা অন্ডালে বেঙ্গল এরোট্রোপলিসের শিল্পনগরীতে খনিজ শিল্পের যন্ত্র বানানোর জন্য একটি কারখানা গড়ছেন। লগ্নি হবে ১৩৩ কোটি টাকা, যা এ রাজ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম মার্কিন লগ্নি বলে দাবি তাঁদের। জোকায় একটি মেগা ফুড পার্ক গড়ছে টেকনো ইন্ডিয়া গোষ্ঠী। শিল্পমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি-র সঙ্গে এ দিন গাঁটছড়া বাঁধে তারা। টেকনো ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর কর্তা সত্যম রায়চৌধুরি জানান, সেখানে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে লগ্নি হবে অন্তত ১০০০ কোটি টাকা। শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে মেলার অফিসেই বৈঠক করেন বাটা ইন্ডিয়ার কর্তা রাজীব গোপালকৃষ্ণন এবং নির্মাণ শিল্পে যুক্ত হাইল্যান্ড গোষ্ঠীর কর্তা সুমিত ডাবরিওয়াল-ও।
ডানলপ সমস্যা নিয়ে সিটু এবং আইএনটিইউসি-র যৌথ প্রতিনিধিদল মেলাতেই শিল্পমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়। তাদের অভিযোগ, অবসর নেওয়া কিছু কর্মী প্রাপ্য বকেয়া পাননি। দ্রুত ওই কারখানা খুলতে রাজ্যের হস্তক্ষেপ দাবি করে তারা। পার্থবাবু জানান, কোনও শর্ত ছাড়াই ওই কারখানা খুলতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথা হলে রাজ্য প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবে। |