আমন ধান কাটা আর বোরো ধানের চারা লাগানোর মাঝে সময় মেলে মাস দু’য়েক। এই সময়ের মধ্যেই ধানের জমিতে সর্ষে চাষ ক্রমশ জনপ্রিয় উঠছে কালনা মহকুমায়। লাভজনক এ চাষের নাম ‘পয়রা ক্রপিং’।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আমন ধান কাটা হয় অক্টোবরের গোড়ায়। অন্য দিকে, জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হয় বোরো ধানের চারা পোঁতার কাজ। বছর আটেক আগেও কোনও চাষাবাদ না করে চাষিরা এই সময় জমি ফেলে রাখতেন। পরিস্থিতি এখন বদলেছে। চলতি বছরে পাঁচ ব্লকের সাতশো হেক্টর জমিতে পয়রা ক্রপিং পদ্ধতিতে সর্ষে চাষ হয়েছে। চাষিরা জানিয়েছেন, আমন ধান পাকার সময় অপেক্ষাকৃত উঁচু ভিজে জমিতে সর্ষের বীজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে ধান কাটার আগেই জমিতে আঙুলের উচ্চতায় সর্ষে গাছ মাথা তুলে দাঁড়ায়। ধান কাটার পরে তিন থেকে চার বার সেচের ব্যবস্থা করা হয় জমিতে। বোরো ধানের বীজ পোঁতার আগেই জমি থেকে কেটে ফেলা হয় পাকা সর্ষে। |
এই ধরনের চাষে খরচও যৎসামান্য। ধানের জমিতে যেহেতু আমন ধানের জন্য রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয়, তাই সর্ষে চাষে আর আলাদা করে সার প্রয়োগ করতে হয় না। জলও লাগে কম। খেত মজুরের প্রয়োজন হয় কেবল জমি থেকে সরষে তোলা ও ঝাড়াইয়ের ক্ষেত্রে। ভরা শীতের মরসুমে হওয়ায় রোগের প্রকোপও এতে কম।
কালনা ২ ব্লকের সর্ষে চাষি খোরশেদ শেখ বলেন, “গত তিন বছর ধরে আমি আমনের জমিতে সর্ষে চাষ করছি। গতানুগতিক পদ্ধতিতে সর্ষে চাষের থেকে খরচ অত্যন্ত কম। প্রতি বারই লাভ হয়।” মন্তেশ্বরের এক চাষি বাবুলাল সরেনের কথায়, “বছর আটেক আগে কৃষি দফতরের লোকেরা এই চাষ নিয়ে মাঝেরগ্রাম এলাকার কয়েক জন চাষিকে বোঝান। চোখের সামনে ওদের সাফল্য দেখে আমরাও উৎসাহ পাই।” বর্তমানে গোটা ব্লক জুড়েই পয়রা ক্রপিং পদ্ধতিতে সর্ষে চাষ হচ্ছে। এই জনপ্রিয়তার আঁচ পোঁছেছে কৃষি দফতরেও। মহকুমা কৃষি আধিকারিক স্বপনকুমার মারিক বলেন, “প্রতি বছরই মহকুমার পাঁচ ব্লকে পয়রা ক্রপিং পদ্ধতিতে চাষের এলাকা বাড়ছে। এতে আলাদা করে জমি তৈরির ব্যাপার থাকে না।” মহকুমা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক নিলয় করের কথায়, “পয়রা ক্রপিং পদ্ধতিতে সর্ষের চাষ করতে গেলে চাষিদের সময় জ্ঞান নিখুঁত হতে হবে। কারণ, ঠিকঠাক শীত না পেলে সর্ষে গাছে জাব পোকার সংক্রমণ দেখা দিতে পারে।” |