আর্থিক অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে কেতুগ্রামের শিবলুন এসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষককে সাসপেন্ড করল পরিচালন সমিতি। জিতেন্দ্রনাথ বিশ্বাস নামে ওই প্রধান শিক্ষককে তফসিলি জাতি ও উপজাতির পড়ুয়াদের অনুদানের টাকা আত্মসাতের দায়ে বছরখানেক আগেই কাটোয়া আদালত তিন বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল। উচ্চ আদালতে আবেদনের সুযোগ দিতে তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর হয়।
সম্প্রতি ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক রাজীবলোচন মণ্ডল প্রধান শিক্ষককে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, ১ জানুয়ারি থেকে তাঁকে সাসপেন্ড করা হল। ওই চিঠিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে সমস্ত দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতেও বলা হয়েছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি জানান, সাসপেনশন সংক্রান্ত কোনও চিঠি পাননি। তার পরে তাঁর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে কাটোয়ার সহকারী স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) গোলাম মর্তুজা বলেন, “পরিচালন সমিতি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সাসপেন্ড করেছে, বলে একটি চিঠি পেয়েছি। দু’পক্ষকেই ডেকে জানতে চাওয়া হবে।”
গত ৫ ডিসেম্বর স্কুল পরিচালন সমিতি ৮টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষককে ‘শো-কজ’ করে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি ছিল, সরকারি টাকার হিসেব পরিচালন সমিতির কাছে পেশ করেননি। মিড-ডে মিল নিয়ে পরিচালন সমিতির নামে যে সিদ্ধান্ত ব্যাঙ্কে জমা দিয়েছেন, সেটি জাল। পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সিপিএমের স্বপন ঘোষ বলেন, “বইয়ের টাকা আত্মসাত করার জন্য জিতেন্দ্রনাথবাবুকে আদালত সাজা দিয়েছিল, সে কথা তিনি বেমালুম চেপে যান। জিজ্ঞাসা করলে বিষয়টি অস্বীকারও করেছেন।” গত ১৯ ডিসেম্বর ৫৩ জন পরিচালন সমিতিকে চিঠি দিয়ে জানান, প্রধান শিক্ষক শংসাপত্র দেওয়ার জন্যও টাকা চাইছেন। ‘শো-কজ’-এর জবাবে প্রধান শিক্ষক দাবি করেন, তিনি বর্তমান পরিচালন সমিতির ‘কাছের লোক’ হতে পারেননি। সে কারণে তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। গত ৩০ ডিসেম্বর পরিচালন সমিতির বৈঠকে প্রধান শিক্ষককে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সম্পাদক বলেন, “আমরা প্রধান শিক্ষকের উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। সে কারণে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এ বার আমরা অডিট করিয়ে দেখব কত টাকা নয়ছয় হয়েছে।”
২০১০ সালের ১৯ নভেম্বর কাটোয়া মহকুমা আদালত ওই প্রধান শিক্ষককে তফসিলি জাতি ও উপজাতি পড়ুয়াদের টাকা আত্মসাতের দায়ে তিন বছর কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল। যদিও উচ্চ আদালতে আবেদনের সুযোগ দিতে তাঁর জামিন মঞ্জুর করে আদালত। পুলিশ জানিয়েছে, ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষে কেতুগ্রামের ওই স্কুলের তফসিলি জাতি ও উপজাতি পড়ুয়াদের জন্য ৮৯৫০ টাকা অনুদান আসে। তিনি ছ’জন পড়ুয়াকে টাকা না দিয়ে নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রেখে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক শাস্তি ঘোষণা করেন।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক জিতেন্দ্রনাথবাবু বাড়ি কাটোয়া শহরের মাধাইতলায়। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি শুধু বলেন, “আমি কোনও চিঠি পাইনি। আমার চেয়ে তো দেখছি আপনারা বেশি জানেন!” |