গোটা দিন পেরিয়ে গেলেও নবদ্বীপে তৃণমূল নেতা খুনে মূল অভিযুক্ত লোকনাথ দেবনাথের নাগাল পেল না পুলিশ।
তবে পূর্বস্থলীর সিপিএম নেতা প্রদীপ সাহা এবং এসএফআই সমর্থক সন্তু ভৌমিকের পরে খুন ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আরও তিন জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সোহরাবুদ্দিন মণ্ডল, হানিফ মণ্ডল ও সইফুদ্দিন মণ্ডল নামে ওই তিন জনই বর্ধমানের পূর্বস্থলী থানার রামকৃষ্ণপুরের বাসিন্দা। বুধবার কাটোয়া আদালতে তোলা হলে তাঁদের দু’দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। পূর্বস্থলী কলেজ এ দিন খোলেনি। নেতা খুনের প্রতিবাদে সমুদ্রগড় বাজার, পারুলিয়া মোড়, পূর্বস্থলী স্টেশন বাজার-সহ বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল বিক্ষোভ সভা করে। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে তারাও পাল্টা প্রচারে নামবে বলে জানিয়েছে সিপিএম। এ দিন নদিয়ার কৃষ্ণনগরে দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু দাবি করেন, “পুরোটাই সাজানো ঘটনা।” বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রেরও দাবি, “তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব ঢাকা দিতেই মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে।” সিপিএমের পূর্বস্থলী জোনাল কমিটির সম্পাদক সুব্রত ভাওয়াল জানান, দলই প্রদীপবাবুকে সব রকম আইনি সহায়তা দেবে।
মনোনয়ন জমা নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে সোমবার দুপুরে পূর্বস্থলী কলেজে সংঘর্ষে দুই টিএমসিপি এবং এক এসএফআই সমর্থক আহত হন। তাঁদের নদিয়ার নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। রাতে আহত সমর্থকদের দেখতে হাসপাতালে গিয়ে গুলিতে খুন হন তৃণমূলের পূর্বস্থলী অঞ্চল সহ-সভাপতি সজল ঘোষ (৩৬)। তৃণমূলের অভিযোগ, পূর্বস্থলী ২ লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রদীপ সাহার নির্দেশে পূর্বস্থলী কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র লোকনাথ সজলবাবুকে গুলি করে। ভর্তি থাকা এসএফআই সমর্থক সন্তুও সেই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন। লোকনাথ যে ওই রাতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, তা পারুলিয়া কুলকামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপবাবুর কথাতেই কার্যত পরিষ্কার। সকালে থানায় বসে ধৃত নেতা বলেন, “আমি কলেজের ঝামেলায় ছিলাম না। হাসপাতালের রাস্তাতেও যাইনি। যখন দলের লোকেদের কাছে শুনি, সন্তুকে দেখতে লোকনাথ হাসপাতালে যেতে চাইছে, নিষেধ করেছিলাম। রাতে শুনি, তার পরেও ও সিদ্ধান্ত বদলায়নি। তখনই বলেছিলাম, দলের নির্দেশ মানতে না চাইলে ও যেন এসএফআই ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেয়।”
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, খুনের পরে হাসপাতালেই সন্তুকে মারধর শুরু করেছিল তৃণমূলের লোকজন। বর্ধমানের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর জানান, প্রাথমিক ভাবে নিরাপত্তার কারণেই সন্তুকে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। নবদ্বীপ থানায় তৃণমূলের দায়ের করা অভিযোগে প্রদীপবাবু, লোকনাথ ও সন্তুরই নাম ছিল। নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “তদন্তে নেমে পুলিশ দুই ধৃত ছাড়াও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার ভিত্তিতে আরও তিন জনকে ধরা হয়েছে। খুনের সময়ে তারা ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছিল বলে আমরা জানতে পেরেছি।”
কিন্তু লোকনাথের কোনও হদিস নেই। পূর্বস্থলীর শ্যামবাটি গ্রামে তাঁর ঠাকুর্দা-ঠাকুমা থাকেন। গ্রামবাসী জানান, লোকনাথ মাঝে-মধ্যে গ্রামে আসে। দিন বারো আগেও কয়েক ঘণ্টার জন্য এসেছিল। গ্রামের শেষ প্রান্তে টিনের চাল দেওয়া ঝুপড়ি বাড়িতে বসে লোকনাথের ঠাকুমা হরিপ্রিয়া দেবনাথ বলেন, “ওর বাবা-মা থাকে বাংলাদেশে। নাতি আমাদের বলেছে, সে নবদ্বীপে থাকে। টিউশন পড়িয়ে নিজের খরচ চালায়। কিন্তু কোথায় থাকে তা কখনও বলেনি।” লোকনাথের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে দুই জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। |