প্রায় দেড় কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির মামলায় পুলিশকে চার্জশিট দেওয়ার অনুমতি দিতে যাতে আর দেরি না-হয়, সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চাইবে রাজ্য শিক্ষা দফতর। দু’দিন ধরে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের পরে অফিসার-শিক্ষক-কর্মীদের এমনই আশ্বাস দিয়েছেন সুগত মারজিতের
নেতৃত্বাধীন কমিটি।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে সুগতবাবু বলেন, “ওই দুর্নীতি মামলার চার্জশিট দেওয়ার অনুমতি দিতে দেরি হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন অনেকেই তুলেছেন। আমরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে যাতে প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়, সেই চেষ্টা করছি। রাজ্য সরকারও এ ব্যাপারে তৎপর। কোন পদ্ধতিতে চার্জশিট পেশের বিষয়টি তাড়াতাড়ি হবে তা নিয়ে সর্বোচ্চ মহলে কথাবার্তা চলছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে তার জন্য বামেদের দায়ী করেন সুগতবাবু। |
পাশাপাশি, আন্দোলনের নামে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করা, পড়াশোনার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কমিটি। সুগতবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে প্রতিনিয়তই নজর রাখছেন। তাঁকে সবই জানানো হয়েছে। আশা করি দুর্নীতি মামলার চার্জশিট পেশের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগে প্রায় দেড় কোটি টাকা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন উপাচার্য অরুণাভ বসু মজুমদার। ২০০৯ সালের মার্চ মাসে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে রেজিস্ট্রার আগাম জামিনও নেন। মামলার তদন্ত শেষ করে তদন্তকারী অফিসার সীতারাম সিংহ রেজিস্ট্রার, প্রাক্তন উপাচার্যের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি চান। কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই অনুমতির ব্যবস্থা করতে পারেননি। বিধি অনুযায়ী, আগামী এপ্রিলের মধ্যে চার্জশিট পেশ না-হলে মামলাটি খারিজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এই অবস্থায় উপাচার্য সেই অনুমতি পাওয়ার জন্য নানা মহলে চিঠি লেখা শুরু করেন। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসমিতির একাধিক বৈঠক ভেস্তে যায়। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত কার্যকর না করার প্রতিবাদে গত ৯ নভেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে কর্মচারী সমিতি। অচলাবস্থা কাটাতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কর্মচারী সমিতি, শিক্ষক সমিতি-সহ অন্য প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং গৌতম দেব। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠনের আশ্বাস দিলে তাঁরা আন্দোলন স্থগিত করেন।
গত ৩ জানুয়ারি ওই কমিটির সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন। সুগতবাবু ছাড়া কমিটির
অপর সদস্য হলেন উচ্চ শিক্ষা দফতরের এক্সপার্ট কমিটির চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার। তাঁরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ, রেজাল্টে অতিরিক্ত নম্বর পাইয়ে দেওয়ার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর অনিয়ম, বেআইনি কাজের অভিযোগও পেয়েছেন। সে সব খতিয়ে দেখতে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ফের তাঁদের আসার কথা। |