|
তিলক চৌধুরী |
তাঁর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন অধ্যক্ষ। বলা হচ্ছে, রায়গঞ্জ ইউনির্ভাসিটি কলেজে বৃহস্পতিবার হামলাকারীদের প্ররোচিত করার পিছনে তিনি ‘সক্রিয়’ ভূমিকা নিয়েছেন।
রায়গঞ্জ শহরের এ হেন তৃণমূল নেতা তিলক চৌধুরীর বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ নতুন নয়। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে উত্তর দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যানকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাঁরই অফিসঘরে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল তিলকবাবু ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনার পরেও তিলকবাবু বিভিন্ন মহল থেকে প্রবল ভাবে সমালোচিত হন।
সম্প্রতি রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে সুপারকে হেনস্থা করার ঘটনাতেও অভিযুক্ত এই দাপুটে তৃণমূল নেতা। দল সূত্রের খবর, তিলকবাবু সে দিন সুপারের কাছে হাসপাতালের ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ দাবি করেছিলেন। পরে সেটা শুনে ও সুপার হেনস্থার ঘটনায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব তিলকবাবুকে ভর্ৎসনাও করেন। তার পরেও যে ওই তৃণমূল নেতার বিশেষ ‘পরিবর্তন’ হয়নি, তা এ দিন রায়গঞ্জ কলেজের বেনজির অধ্যক্ষ-নিগ্রহের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বলে মনে করছেন তৃণমূল কর্মীদেরই একাংশ। তৃণমূল সূত্রের খবর, তিলকবাবু-সহ রায়গঞ্জের নেতানেত্রীরা ঘটনার দায় ‘বহিরাগতদের’ উপরে চাপালেও তাঁদের সকলের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন দলের প্রদেশ নেতৃত্ব। ঘটনার সময় কলেজে তিলকবাবুর স্ত্রী তথা রায়গঞ্জ পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর কেয়া চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। ওই কলেজের অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকার এখনও আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাঁর কথায়, “তিলকবাবুকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে শ্রদ্ধা করতাম। তিনি দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে কলেজে ঢুকে এমন নোংরা রাজনীতি করবেন তা ভাবতেও পারছি না!”
জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলছেন, “এ দিন যা হল, তা খুবই দুঃখজনক। কিছু নেতার দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্য গোটা জেলায় আমাদের দলের ভাবমূর্তিই ক্ষতিগ্রস্ত হল। কারণ সাধারণ মানুষ এই ধরনের ঘটনা মেনে নেবেন না।” ওই কলেজে কিছুদিন পরেই বড় মাপের নির্মাণ কাজ হবে। তার বরাত কে পাবেন, তা নিয়েও অধ্যক্ষের সঙ্গে তিলকবাবুর অনুগামীদের সম্প্রতি বচসা হয় বলে কলেজ সূত্রেরই খবর।
এক সময়ে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির অনুগামী ছিলেন। আবার তৃণমূলের প্রতিষ্ঠার এক-দু’বছর পর থেকেই তিলকবাবু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী হয়ে পড়েন। দলের অনেকরই চোখে তিনি যত বড় সংগঠক, তার চেয়ে বেশি ‘সুযোগ সন্ধানী’। কর্মীদের একাংশের মতে, সেই কারণেই রাজ্য জুড়ে তৃণমূলের হাওয়া চললেও উত্তর দিনাজপুরে কংগ্রেসের ঘাঁটিতে দল তেমন দাঁত ফোটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনেও ভাল ফল হয়নি তিলকবাবুর সাংগঠনিক ব্যর্থতায়। এমনকী বিধানসভা ভোটের পরে পরেই রায়গঞ্জ পুর-নির্বাচনেও কংগ্রেসের ঘাঁটিতে তিনি কিছুই করতে পারেননি। স্বাভাবিক ভাবেই রায়গঞ্জ শহরের অবিসংবাদী তৃণমূল নেতা হওয়ার সুবাদে এই ব্যর্থতার দায় তিনি এড়াতে পারেননি। দলেরই এক নেতার কথায়, “উনি আজ পর্যন্ত তৃণমূলের জেলা অফিস তৈরি করতে পারেননি। একটা দোকানে অফিস চলে। ওঁর স্ত্রী দলের কাউন্সিলর। বিধানসভা ভোটের পরে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ‘বোর্ড অফ ডিরেকটরস’-এও ঢুকেছেন। উনি এবং ওঁর অনুগামীরা জেলার সমস্ত সরকারি পদে বসেছেন।” কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা বলেন, “আমি কারও নাম করছি না। এটুকু বলতে পারি, প্রিয়দার (প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির) অনুগ্রহে একজন স্কুল শিক্ষকতা পেয়েছেন। পেট্রোল পাম্প-সহ অনেক কিছুই আদায় করেছেন। আবার পছন্দসই পদ না-পেয়ে প্রিয়দার সম্পর্কে কটূক্তি করে তৃণমূলে গিয়ে জেলা নেতা হয়েছেন। মানুষ তো প্রশ্ন তুলবেনই!” জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত চাঁছাছোলা ভাষায় বলেছেন, “তিলক চৌধুরীর নেতৃত্বেই এ দিনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। শিক্ষাক্ষেত্রকে উনি কলঙ্কিত করেছেন! এ দিন প্রমাণিত হল, তিলকবাবু রায়গঞ্জ শহরে নিজের প্রভাব খাটিয়ে দুষ্কৃতীরাজ কায়েম করেছেন।” জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দের মন্তব্য, “ওঁর সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। সবাই তাঁকে চেনেন ও জানেন।” রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিত সাহার কটাক্ষ, “তৃণমূলের নেতাদেরই যদি এই অবস্থা হয়, তা হলে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ কী শিক্ষা নেবে?” তিলকবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর নেতৃত্বে তৃণমূল জেলায় ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে বলেই কংগ্রেসের একাংশ কুৎসা রটাচ্ছেন। তিনি রাজনীতি করতে নেমে ‘কোনও দাদার’ কাছ থেকে সুবিধা নেননি বলেও তিলকবাবুর দাবি। |