মমতার ‘জোড়া বার্তা’ দীপা আর মৌসমকে
দীপা দাশমুন্সি এবং মৌসম বেনজির নূর বৃহস্পতিবার দুই কংগ্রেস সাংসদের উদ্দেশে ‘জোড়া বার্তা’ গেল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে।
রায়গঞ্জের কলেজে এ দিনের ঘটনায় তৃণমূলের নেতাদের একাংশ প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত বলেই অভিযোগ। ঘটনা ‘কাঙ্ক্ষিত’ নয় জানিয়েও তৃণমূলের ছাত্রনেতা শঙ্কুদেব পন্ডা যে ঘটনায় অভিযোগের আঙুল তুলেছেন রায়গঞ্জের সাংসদের বিরুদ্ধে। তাঁর কথায়, “স্থানীয় কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সির কথায় ছাত্র সংসদের নির্বাচন চালানোর চেষ্টা করছিলেন অধ্যক্ষ।” দীপার নাম না-করলেও মমতার ‘আস্থাভাজন’ নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, “তৃণমূল নয়, রায়গঞ্জের সাংসদের মদতপুষ্ট ছেলেরাই গোলমাল করেছে।”
তৃণমূলের অভিযোগ প্রসঙ্গে দীপা বলেন, “সমস্ত ঘটনার ভিডিও ফুটেজ রেখেছি। ফিরহাদ হাকিমকে ওঁর অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে!” আজ, শুক্রবারই রায়গঞ্জ পৌঁছচ্ছেন দীপা। তাঁর দাবি, “অধ্যক্ষের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগই নেই। গত ১৫ দিন ধরে আমি রায়গঞ্জের বাইরে। আমার কথা শুনে অধ্যক্ষের কাজ করার প্রশ্নই ওঠে না।”
ক’দিন আগেই প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির নিজের জায়গা কালিয়াগঞ্জে কলেজ-ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জিতে দখল করে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন। এই অবস্থায় জেলায় দীপার খাসতালুক রায়গঞ্জে কলেজ-নির্বাচন ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই দুই শিবিরে দড়ি টানাটানি শুরু হয়ে যায়। দু’পক্ষই এই কলেজটি দখল করতে মরিয়া। বৃহস্পতিবারের ঘটনা তারই ফল বলে মনে করা হচ্ছে। তাঁর সম্পর্কে আনা তৃণমূলের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রসঙ্গ তুলে দীপা এ দিন বলেন, “ক’দিন আগেই পুলিশ ও অধ্যক্ষকে সঙ্গে নিয়ে ওরা কালিয়াগঞ্জ এবং ইসলামপুর কলেজের ছাত্র সংসদ দখল করেছে। সেই ভূত ওরা এখানেও দেখছে!”
দীপার পাশাপাশিই তৃণমূলের তরফে এ দিন ঈষৎ ‘খোঁচা’ দেওয়া হল কংগ্রেস সাংসদ মৌসমকেও। মালদহে প্রয়াত গনি খানের পরিবারে তৃণমূলের ‘বীজ বপন’ হল এ দিন। মালদহের ‘অবিসংবাদী’ কংগ্রেস নেতার ভাগ্নী শেহনওয়াজ কাদরি আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দিলেন। তাঁকে দ্রুত দলের সাধারণ সম্পাদকও করে দেওয়া হল। মহাকরণে মমতার কাছে শেহনওয়াজকে নিয়ে যান তৃণমূলের নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফিরহাদ এবং দলের সাংসদ সুব্রত বক্সী। যে ঘটনাপ্রবাহে এটা স্পষ্ট যে, শেহনওয়াজকে দলে নিয়ে এবং চটজলদি পদ দিয়ে মমতা কংগ্রেসের সঙ্গেই গনি পরিবারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও ‘বার্তা’ পাঠালেন। যার লক্ষ্য অবশ্যই মৌসম।
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে মহাকরণে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে প্রয়াত কংগ্রেস
নেতা গনি খানের ভাগ্নি শেহনওয়াজ কাদরি। ছবি: দেবাশিস রায়
মৌসম অবশ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চাননি। গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের টিকিট চেয়েও পাননি শেহনওয়াজ। পেয়েছিলেন মৌসম-ঘনিষ্ঠ সাবিনা ইয়াসমিন। যিনি আপাতত রাজ্যের মন্ত্রী। সাবিনার বিরুদ্ধে মালদহের মোথাবাড়ি কেন্দ্রে শেহনওয়াজ নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়ান এবং হেরে যান। তাঁর তৃণমূলে যোগদানের ঘটনা কি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’? মৌসমের জবাব, “একেবারেই না! প্রথমত, উনি কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন না। উনি কোন দলে যোগ দিলেন, তা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও বিষয়টিকে ‘গুরুত্ব’ দিতে চাননি।
মমতা কেন কংগ্রেস সম্পর্কে ‘আক্রমণাত্মক’ অবস্থান নিচ্ছেন?
তৃণমূলের একাংশের মতে, ‘চাপ’ দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ সাহায্য আদায় করার জন্য। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে তা পুরোপুরি অস্বীকার করা হয়েছে। শাসক শিবিরের একাংশের মতে, এ সবই হল আগামী পঞ্চায়েত ভোটে দু’পক্ষ যে জোট বেঁধে লড়বে না, তারই মঞ্চ তৈরির পটভূমি। নইলে রাজনীতির সমীকরণে কংগ্রেস-তৃণমূল ‘স্বাভাবিক মিত্র’। দু’পক্ষের সেই মিত্রতার ফলেই রাজ্যে সাড়ে তিন দশকের বাম শাসনের অবসান হয়েছে। সে দিক দিয়ে উভয়েরই উভয়কে ‘প্রয়োজন’। আবার উভয় পক্ষই জানে, এক পক্ষের ‘জোর’ না-কমলে অন্য পক্ষ ‘লাভ’ করতে পারবে না। ফলে সে দিক দিয়েও দু’পক্ষের একে অপরকে ‘কোণঠাসা’ করার চেষ্টা অব্যাহত। তবে রাজনৈতিক দিক দিয়ে তৃণমূল নিঃসন্দেহে কেন্দ্র এবং রাজ্যে অনেকটাই ‘সুবিধাজনক’ অবস্থানে। রাজ্যে সরকার চালাতে তাদের কংগ্রেসকে দরকার নেই। কিন্তু কেন্দ্রে কংগ্রেস তাদের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।
ইন্দিরা ভবনের নামবদল এবং রাজ্যে ধান-পাটের সহায়ক মূল্য নিয়ে গত ক’দিন ধরে দুই শিবিরের ‘কাজিয়া’ তুঙ্গে। মমতা তথা রাজ্য সরকারকে আক্রমণের পুরোভাগে রয়েছেন দীপা-মৌসম। ফলে এ দিন রায়গঞ্জ এবং মালদহের দু’টি ঘটনাই রাজ্য-রাজনীতিতে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। কোনও ঘটনাতেই অবশ্য মমতা নিজে প্রকাশ্যে ছিলেন না। এমনকী, রায়গঞ্জের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী ‘রং না-দেখে’ দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রশাসনকে। কিন্তু একই সঙ্গে একাধিক জায়গা থেকে তিনি যে ‘খবর’ নিয়েছেন, তা বলছে গত তিন দিন ধরে কলেজের অধ্যক্ষের ‘মদতে’ ছাত্র পরিষদের লোকজন গোলমাল করছিল। এ দিন তৃণমূলের ছাত্রদের কলেজে আটকে রাখা হয়েছিল। তাদের ছাড়াতে গিয়েই তৃণমূলের লোকজন ‘আক্রান্ত’ হন।
বুধবারই ধর্মতলার প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে তৃণমূল তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন দীপা। তৃণমূলকে ‘সিপিএমের বি-টিম’ বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন তিনি (প্রসঙ্গত, মমতার সঙ্গে বিবাদে না-জড়াতে চাইলেও কংগ্রেস হাইকম্যান্ড মনে করছে, ইন্দিরা ভবনের ঘটনায় রাস্তায় নেমে রাজ্যের কংগ্রেস তাদের অস্তিত্ব ‘প্রমাণ’ করতে পেরেছে)। মমতা সে দিন ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। এটা বোঝাতেই যে, তিনি কংগ্রেসের ওই নেতানেত্রীদের কোনও ‘গুরুত্ব’ দিতে চান না। তবে ময়দানে নামিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ, মন্ত্রী মদন মিত্রদের।
এ দিন তাঁদের সঙ্গেই যোগ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও। ধান-পাটের সহায়ক-মূল্য নিয়ে কংগ্রেসের তোলা অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিবৃতি দিয়ে জ্যোতিপ্রিয় বলেছেন, ‘ধর্মতলার ওই ভাষণ সিপিএমকে তুষ্ট করার রাজনীতি। আগামী লোকসভা ভোটে দীপা দাশমুন্সি বুঝতে পারবেন, কত ধানে কত চাল’!
পার্থবাবু এ দিন ফের বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়নের যে গাড়ি ছোটাচ্ছেন, সিপিএম এবং কংগ্রেস তার বিরোধিতা করছে। কিন্তু এ ভাবে তাঁকে রোখা যাবে না।” ধর্মতলার সভা থেকে রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও আক্রমণ করেছিলেন সরকারকে। তাঁর নাম না-করে পার্থবাবু বলেন, “সরকারের মন্ত্রী হয়ে রাজপথে দাঁড়িয়ে সেই সরকারের সমালোচনা করেও মন্ত্রিত্ব আঁকড়ে-থাকা শোভনীয় নয়। যাঁরা মনে করছেন, মমতা ভুল করছেন, তাঁরা ইস্তফা দিয়ে মমতার ছবি ছাড়া ভোটে জিতে আসুন না! দেখবেন, জামানত জব্দ হচ্ছে।”
মানসবাবু কটাক্ষ ফিরিয়ে দিয়ে বলেছেন, “ভারতবর্ষ গণতান্ত্রিক দেশ। আমি তো কারও মুখ সেলাই করতে বা হাত-পা শিকলে বেঁধে রাখতে পারব না!” আর প্রদীপবাবুর কথায়, “ আমরা চক্রান্তের অংশীদার নই। কোনও চক্রান্তও করছি না। শুধু দুটো বিষয় নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছি। কোনও সঙ্ঘাতে যেতে চাইনি।” কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তীর বক্তব্য, “উন্নয়নের গাড়ি কেমন চলছে, তা যাদবপুর বিদ্যাপীঠ এবং রায়গঞ্জ কলেজের ঘটনায় মানুষ দেখতে পেয়েছেন।”
এই পরিস্থিতিতে প্রধান বিরোধী দল যা বলতে পারে, তা-ই বলেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর কথায়, “এটা পারিবারিক কলহ। ওঁরাই মিটিয়ে নিন। মেটাতে না-পারলে ফ্যামিলি কোর্টে যাবেন! আমরা কী বলব?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.