রাজ্য কংগ্রেসের তরফে ‘রাজনৈতিক আক্রমণে’র প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বুধবারই মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “এটা সরকারি মঞ্চ। এখানে কোনও রাজনৈতিক কথার জবাব দেব না।”
তার ২৪ ঘন্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার সেই মহাকরণেই সাড়ম্বরে তৃণমূলে যোগ দেওয়ানো হল গনি খানের পরিবারের সদস্য শেহনওয়াজ কাদরিকে।
প্রত্যাশিত ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষত, দু’টি ঘটনা পিঠোপিঠি ঘটায়। প্রত্যাশিত ভাবেই প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী শিবিরের একাংশ। বিষয়টি ‘অন্য মাত্রা’ পেয়ে গিয়েছে এ দিনই রাজ্য মন্ত্রিসভার দু’নম্বর সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল ভবন থেকে কংগ্রেসকে ‘জবাব’ দেওয়ার সময় নির্দিষ্ট করে এ কথা বলায় যে, “রাজনৈতিক জবাব দেব বলেই তৃণমূল ভবন থেকে কথা বলছি। রাজ্যের মন্ত্রী হিসেবে নয়।” বস্তুত, পার্থবাবু বুধবার যা বলেছিলেন, এদিনও মোটামুটি তাই-ই বলেছেন। কিন্তু আলাদা করে ‘গুরুত্ব’ দেওয়া হয়েছে বক্তব্যের স্থান নির্বাচনে।
যা নিয়ে ‘কটাক্ষ’ করেছে তৃণমূলের ‘জোটসঙ্গী’ কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, “মহাকরণটাকে তো পার্টি অফিস বানিয়ে দেওয়া হয়েছে! ভালই হল, এরপর কংগ্রেসের যে সমস্ত মন্ত্রী মহাকরণে বসেন, তাঁরাও সেখান থেকে রাজনৈতিক কথাবার্তা বলতে পারবেন। সেখানে আশা করি কোনও বাধানিষেধ থাকবে না।”
তৃণমূল শিবিরের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, মহাকরণে কেন অথবা কেন নয়, মুখ্যমন্ত্রীর বুধবারের বক্তব্যের মধ্যেই তার জবাব নিহিত ছিল। মহাকরণ ‘সরকারি মঞ্চ’ বলার পাশাপাশিই মুখ্যমন্ত্রী ওইদিন বলেছিলেন, “যদিও কতগুলো জায়গায় বলার দরকার হয়। আমি জানি, কোনটার জবাব দেওয়া উচিত, কোনটার নয়।” সেই সূত্র ধরেই তৃণমূলের এক প্রথমসারির নেতার বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী তো বলেইছিলেন, কতগুলো জায়গায় বলার দরকার হয়। এ ক্ষেত্রে সেই প্রয়োজন ছিল বলেই মহাকরণে ঘোষণা করা হয়েছে।” যার প্রেক্ষিতে এক সিপিএম নেতা বলেছেন, “কোনটা রাজনীতি আর কোনটা রাজনীতি নয়, সব এখন মুখ্যমন্ত্রীই বলে দিচ্ছেন! শিক্ষা থেকে মহাকরণ সর্বত্রই তা দেখা যাচ্ছে।”
তৃণমূলের যে নেতা তথা বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এ দিন মহাকরণে শেহনওয়াজের পাশে হাজির ছিলেন, তাঁর অবশ্য সরাসরিই বক্তব্য, মহাকরণে সংবাদমাধ্যমকে একত্রে পাওয়া যাবে বলেই তার ‘সুযোগ’ নিয়েছেন তাঁরা। সুব্রতবাবুর কথায়, “মহাকরণে এ দিন আমাদের কাজ ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক ছিল। ফলে আমরা সেখানেই ছিলাম। তা ছাড়া মহাকরণে সংবাদমাধ্যমেরও সকলেই সব সময় উপস্তিত থাকেন। সেই সুযোগটা আমরা নিয়েছি। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, অনেক রাজনৈতিক দল বা সংগঠন মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী বা অন্যান্য মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিতে আসেন। তারপর তাঁরাও কিন্তু সেখানেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।”
প্রবীণ মন্ত্রীর আরও যুক্তি, “রাজনৈতিক দলগুলো তো সে জন্যই মেট্রো চ্যানেলে সভা করে। সেখানে পথচলতি লোকের সংখ্যা অনেক বেশি। এমনিতেই ভিড় হয়ে যায়। নইলে তো এস এন ব্যানার্জি রোডের মোড়েও সভা করা যেত!” পাশাপাশিই তাঁর বক্তব্য, “আমি কিন্তু ওখানে মন্ত্রী হিসেবে সাংবাদিক বৈঠকে হাজির থাকিনি। তৃণমূলের নেতা হিসেবেই ছিলাম। মন্ত্রী হলেও আমার অন্য ভূমিকাও তো আছে! দলের নেতা হিসেবেও আমি কথা বলি। বলতে পারি।” কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী মহাকরণে তিনি দলের নেতা হিসেবে কী করে ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’ জানান? সুব্রতবাবুর জবাব, “আমি যে কাজই করি, আইনত তো আমি মন্ত্রী। সে বাড়িতে থাকলেও তাই। আদালতের বিচারপতিরা তো বাড়িতেও বিচারপতিই থাকেন!” |