কয়লা-পরিস্থিতিতে নজর
ভবিষ্যতে মাসুল বাড়তেই পারে, ইঙ্গিত বিদ্যুৎমন্ত্রীর
বাস্তব পরিস্থিতিটা যে কী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে শেষ পর্যন্ত তা স্বীকার করে নিতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎমন্ত্রীর মণীশ গুপ্তের কথায় এই ইঙ্গিত স্পষ্ট। নতুন বছর থেকে কয়লার দাম যে ভাবে চড়েছে, তাতে আগামী দিনে বিদুৎ-মাসুল বাড়তে পারে বলেই এ দিন আভাস দিয়ে রেখেছেন মণীশবাবু।
বিদ্যুৎমন্ত্রী এ দিন যাদবপুরে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ-মাসুল এখনই বাড়ছে না ঠিকই। কিন্তু কয়লার দাম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনের খরচ বাড়তে বাধ্য। এবং তা সামাল দিতে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ-মাসুল বাড়ানো ছাড়া বিশেষ উপায় থাকবে না বলে মন্ত্রী মনে করেন।
পরে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মণীশবাবু বলেন, “কয়লার মূল্যবৃদ্ধি স্থগিত রাখতে আমরা কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছি। হাইকোর্টে এ নিয়ে জনস্বার্থ-মামলা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতের নির্দেশে খুব সম্প্রতি ইউনিটপিছু ৪৪ পয়সা মাসুল বাড়ানো হয়েছে। এই সব কারণে এখনই বিদুৎ-মাসুল বৃদ্ধির প্রশ্ন নেই।” বিদ্যুৎমন্ত্রীর কথায়, “কেন্দ্র এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। দেখা যাক, তারা কী বলে। আমরা পরিরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি।” মন্ত্রী এখনই মাসুলবৃদ্ধির পক্ষপাতী না-হলেও রাজ্যের বিদ্যুৎ-কর্তাদের একাংশের মতে, কয়লার মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে চলতি মাস থেকেই ইউনিটপিছু অন্তত দেড় টাকা মাসুল বাড়ানো জরুরি। নচেৎ রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।

মণীশ গুপ্ত
ক্ষমতায় বসেই নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের উপরে তিনি বাড়তি করের বোঝা চাপাবেন না। ফলে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলো ক্রমশ রুগ্ণ থেকে রুগ্ণতর হলেও বিদ্যুৎ-মাসুল বাড়েনি। একের পর এক বাস রাস্তা থেকে উঠে যাচ্ছে, লোকসানের ভারে নাভিশ্বাস উঠছে সরকারি পরিবহণ নিগমগুলির। তবু বাসভাড়া বাড়েনি। মেরামতির অভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। তবু টোল ট্যাক্স বসেনি। পুরসভাগুলোর আর্থিক অবস্থা ক্রমে খারাপ হচ্ছে। কিন্তু মহাকরণ জানিয়ে দিয়েছে, জল-কর নেওয়ার প্রশ্ন নেই। এমনকী, দুধের দাম না-বাড়ায় সরকারি সংস্থা মাদার ডেয়ারি আর্থিক সঙ্কটে হাবুডুবু খাচ্ছে।
কিন্তু ঠেলায় পড়ে, বা বলা ভাল, বাস্তব পরিস্থিতিকে মেনে নিয়ে এখন নিজেদের ঘোষিত নীতি থেকে কিছুটা সরে আসতে চাইছে কংগ্রেস-তৃণমূল পরিচালিত সরকার। অন্তত দু’টো ক্ষেত্রে তারা মাসুলবৃদ্ধি বা কর আরোপের কথা ভাবছে।
একটি হল বিদ্যুৎক্ষেত্র, যেখানে ভবিষ্যতে মাসুলবৃদ্ধির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি মণীশবাবু। অন্য দিকে পূর্ত দফতর রাজ্যের জাতীয় সড়কগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ‘টোল ট্যাক্স’ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাদার ডেয়ারি নিজের মতো করে আয় বাড়ানোর ব্যবস্থা করেছে। বাসভাড়া, জলকর কিংবা পঞ্চায়েতের কর সম্পর্কে সরকারের ঘোাষিত নীতি অবশ্য এখনও অটুট।
রাজ্যের বিদ্যুৎক্ষেত্রের ছবিটা বাস্তবিকই সঙ্কটজনক। বিদ্যুৎ দফতরের এক অফিসার বক্তব্য: মাসুল বাড়াতে না-দিলে রাজ্যকে বিদ্যুতে প্রচুর ভর্তুকি দিতে হবে। সেই ক্ষমতা সরকারের নেই। রাজ্যের সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থা, অর্থাৎ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের কাছে কয়লা বাবদ কোল ইন্ডিয়ার পাওনা প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। কয়লার সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির দরুণ বকেয়ার বোঝা আরও বাড়বে। এবং তখন প্রাপ্য না-পেলে কোল ইন্ডিয়া কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে। তাতে রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়াটা বিচিত্র নয়। আর তেমন পরিস্থিতিতে গৃহস্থ গ্রাহক তো বটেই, কল-কারখানাতেও কতটা বিদ্যুৎ জোগানো যাবে, সে সম্পর্কে কর্তারা যথেষ্ট সন্দিহান।
বিদ্যুৎ-কর্তাদের অনেকের মতে, গত ফেব্রুয়ারিতে কোল ইন্ডিয়া যখন কয়লার দাম বাড়ায়, তখনই ‘ফুয়েল সারচার্জ’ হিসেবে মাসুল কিছুটা বাড়ানো দরকার ছিল। অথচ নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেই প্রস্তাবটি নাকচ করে দেয়। বছরের শুরুতে ফের কয়লার দাম বাড়ল। এই দু’দফা বৃদ্ধি ধরে জ্বালানি-খরচের হিসেব কষে ওঁরা মনে করছেন, মাসুল চলতি মাস থেকেই ইউনিটপিছু অন্তত দেড় টাকা বাড়ানো জরুরি। না-হলে নিগমের উৎপাদন ব্যাপক মার খাবে। শুধু তা-ই নয়, নিগমের উৎপাদন কমলে বাজার থেকে চড়া দামে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের সস্তায় দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠবে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থারও।
মহাকরণ সূত্রের খবর, রাজ্য প্রশাসনের ‘মাথা’রা দেরিতে হলেও বিপদটা এখন বুঝতে পারছেন। তাই ট্রাইবুন্যালের নির্দেশ মেনে বণ্টন সংস্থাকে স্থগিত রাখা বর্ধিত মাসুল (ইউনিটপিছু ৪৪ পয়সা) আদায়ের অনুমতি দিয়েছে সরকার। পূর্বতন বাম আমলের ওই মাসুলবৃদ্ধি কার্যকর হওয়ার বছরখানেকের মধ্যে ট্রাইবুন্যালের নির্দেশেই তা স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। এ বার গ্রাহকদের থেকে কিস্তিতে সেই বকেয়া আদায় করা হবে। তাতে বণ্টন সংস্থার লোকসানের বহর কিছুটা হলেও কমবে বলে বিদ্যুৎ-কর্তাদের আশা।
অন্য দিকে কয়েকটি রাস্তার হাল নিয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং মুখর হয়েছিলেন। তার পরে তৈরি হয়েছে আলাদা নিগম, যারা এখন ওই সব সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের ভার বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়ার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন এক পূর্ত-কর্তা। তিনি এ-ও বলেন, রাস্তাগুলোয় চলাচলকারী যান থেকে ‘টোল ট্যাক্স’ আদায়ের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। সেই টাকায় রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ যেমন হবে, তেমন পূর্ত দফতরেরও অতিরিক্ত কিছু আয় হবে।
আবার রাজ্য সরকার দুধের দাম বাড়ানোর অনুমতি না-দেওয়ায় সরকারি সংস্থা মাদার ডেয়ারি নিজের মতো ব্যবস্থা করে নিয়েছে। স্বল্পমূল্য দুধের উৎপাদন কমিয়ে তারা বাজারে এনেছে নতুন ব্র্যান্ডের বেশি দামের দুধ। মানুষ তা-ই কিনছে। “এতে আমরা অন্তত বেসরকারি দুধ কোম্পানির সঙ্গে প্রতিয়োগিতায় টিকে থাকতে পারছি।” মন্তব্য করেছেন সংস্থার এক কর্তা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.