স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র না দেওয়ায় শিক্ষকরা এসএসসি’র শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় আবেদন করতে পারছেন না। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মৌতোড় এমএস হাইস্কুলের ৬ জন শিক্ষক এই অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার পুরুলিয়ার জেলাশাসক ও জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক)-এর দ্বারস্থ হন। জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “ওই শিক্ষকদের অভিযোগ সম্পর্কে জেলা স্কুল পরিদর্শককে (মাধ্যমিক) খোঁজ নিতে বলেছি।” স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই শিক্ষকরা চাকরি পেয়ে অন্য স্কুলে চলে গেলে এই স্কুলের পঠনপাঠনের ক্ষতি হবে।
ওই শিক্ষকরা হলেন মৌতোড় এমএস হাইস্কুলের ভূগোলের শিক্ষক গুরুপদ মাজি, নবনীতা চন্দ্র (ইংরেজি), মানিক রায় (ইতিহাস), প্রদীপ কুমার (ভূগোল), নির্মল মাহাতো (কম্পিউটার) ও আশিস ঘোষ (পদার্থ বিজ্ঞান)। তাঁদের অভিযোগ, স্কুল সার্ভিস কমিশনের আসন্ন শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসার জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র চেয়ে তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। তাঁরা পরীক্ষায় বসার আবেদনপত্র কিনেছেন। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের ছাড়পত্র দিতে চাইছে না। স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়ম হল, কোনও শিক্ষক দু’বছর পরে ফের এসএসসি’র শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় আবেদন করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁকে পূরণ করা আবেদনপত্রের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও ‘কন্টিনিউয়েশন’ শংসাপত্র জমা করতে হবে। ওই দুই শংসাপত্র দেবে সংশ্লিষ্ট স্কুল। অভিযোগ, ওই শংসাপত্র এই শিক্ষকদের দেওয়া হচ্ছে না।
তাঁদের মধ্যে মানিক রায়, নবনীতা চন্দরা দাবি করেন, “স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক আশিস চট্টোপাধ্যায় ও প্রধান শিক্ষক অলকানন্দ মুখোপাধ্যায়কে মৌখিক ভাবে জানিয়েছিলাম। পরে শংসাপত্র চেয়ে লিখিত ভাবে জানালে তাঁরা তা প্রাপ্তি স্বীকার পর্যন্ত করেননি।” তাঁরা জানান, অন্যান্য স্কুলের শিক্ষকরা ফের এসএসসি’তে বসার জন্য তাঁদের স্কুলের কাছ থেকে শংসাপত্রগুলি পেয়েছেন। অথচ, এই স্কুল কেন তাঁদের শংসাপত্র দিতে চাইছে না তা বোঝা যাচ্ছে না। তাঁদের কেউ উত্তরবঙ্গ, কেউবা মেদিনীপুরের বাসিন্দা। কয়েকজনের বাড়ি জেলার অন্য প্রান্তে। ফের পরীক্ষা দিয়ে এ বার তাঁরা বাড়ির কাছাকাছি স্কুলে যেতে চাইছেন। মানিক রায় শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য। তিনি বলেন, “এসএসসি’র পরীক্ষায় বসার জন্য শিক্ষকদের ছাড়পত্র দেওয়া হবে না বলে সমিতি আগে কোনও সিদ্ধান্তদও নেয়নি। তা সত্বেও সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে আমাদের আটকে দেওয়ার চেষ্টা কেন করা হচ্ছে?” স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদকের দাবি, “স্কুলে ১০০০-এর বেশি ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। পার্শ্বশিক্ষক-সহ ২৭ জন শিক্ষকের মধ্যে এক সঙ্গে ৬ জন শিক্ষক অন্যত্র চলে গেলে এই স্কুলের পঠনপাঠনের সমস্যা হবে। এত জন শিক্ষককে ছাড়লে অভিভাবকদের কাছেই বা কী জবাব দেব?” প্রধান শিক্ষক বলেন, “ওই ৬ জন পরীক্ষায় বসতে চাওয়ায় আরও দু’জন শিক্ষক ও তিন জন পার্শ্বশিক্ষক ছাড়পত্র চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। দু’জন শিক্ষকের শূন্য পদ রয়েছে। আরও দু’জন শিক্ষক চলতি বছরে অবসর নেবেন। আবেদনকারীরা সবাই চাকরি পেয়ে অন্যস্কুলে চলে গেলে এখানে শিক্ষক সঙ্কট তৈরি হবে।” তিনি জানান, আবেদনকারীরা ভাগাভাগি করে পরীক্ষায় বসলে আমাদের আপত্তি নেই। স্কুলের পড়ুয়াদের ভবিষ্যত তাঁদের ভাবা উচিত। |