পঞ্চম শ্রেণিতে অলচিকি মাধ্যমে পড়ানোর ব্যবস্থা না থাকায় অলচিকি মাধ্যমে চতুর্থ শ্রেণি উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি হতে সমস্যায় পড়েছে। এই অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া জেলা জুড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল কয়েকটি আদিবাসী অরাজনৈতিক সংগঠন। এ দিন সকাল ৬টা থেকে কোথাও টানা তিন ঘন্টা আবার কোথাও টানা ৬ ঘন্টা ধরে চলে ওই অবরোধ। পরে বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে অবশ্য সব অবরোধ উঠে যায়।
এদিন সকাল ৬টা থেকে বাঁকুড়া সদরের ধলভাঙা মোড়, ইঁদপুর মোড়, হিড়বাঁধের হাতিরামপুর, তালড্যাংরা, সিমলাপাল, রাইপুর, সারেঙ্গা, পিড়রগাড়ি, ফুলকুসমা, রানিবাঁধ ও খাতড়া এলাকার ১৭টি জায়গায় এই অবরোধ হয়। ধলভাঙা মোড়ে এই অবরোধ সকাল ৯টা নাগাদ উঠে যায়। অন্যান্য জায়গায় এই অবরোধ ওঠে বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে। জেলাজুড়ে বিশেষত খাতড়া মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘক্ষণ অবরোধ চলায় চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হন সাধারণ নিত্যযাত্রীরা। বাঁকুড়া-খাতড়া, বাঁকুড়া-রাইপুর, খাতড়া-রানিবাঁধ, খাতড়া- রাইপুর, খাতড়া-সারেঙ্গা রুটে দীর্ঘক্ষণ যান চলাচল বন্ধ ছিল। |
আদিবাসীদের চারটি সংগঠন- আদিবাসী সমাজ শিক্ষা সংস্কৃতি সংস্থা (অ্যাসেকা), অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, অল ইন্ডিয়া টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং আদিবাসী মাঝি মাড়োয়ার পক্ষ থেকে এদিন রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি নেওয়া হয়। অবরোধকারীদের তরফে অল ইন্ডিয়া টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা নেতা তথা বেলিয়াকোলা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক জগন্নাথ মুর্মু বলেন, “এ বছর জেলায় পাঁচশোর বেশি ছাত্রছাত্রী অলচিকি মাধ্যমে (সাঁওতালি) পঞ্চম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ এলাকায় অলচিকি মাধ্যমে মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার ব্যবস্থা নেই। ফলে পড়ুয়ারা পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারছে না।” তাঁর দাবি, এ ব্যাপারে দু’দিন আগেই জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হলেও কোনও সুরাহা হয়নি। তাই তাঁরা বাধ্য হয়ে এদিন রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। একইসঙ্গে ৭ দিনের মধ্যে ভর্তি সমস্যার সমাধান না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। সারেঙ্গা ব্লকের কদমা গ্রামের বাসিন্দা মতিলাল হেমব্রম, দাখিন মাণ্ডিদের অভিযোগ, “এ বছর অলচিকি মাধ্যমে চতুর্থ শ্রেণি থেকে পাস করেছে আমাদের ছেলেরা। কিন্তু স্থানীয় হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে অলচিকিতে পড়ানোর সুবিধা না থাকায় তাদের ভর্তি করাতে পারিনি।”
সমস্যার কথা মেনে নিয়ে বাঁকুড়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি রিঙ্কু বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “জেলার ৪৬টি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে অলচিকিতে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা করি সমস্যা মিটে যাবে।” রিঙ্কুদেবীর দাবি, “সোমবার এ বাপারে স্মারকলিপি দিতে আসা আদিবাসীদের একটি সংগঠনকে বিষয়টি বোঝানো হয়েছিল। তারপরেও তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার জন্যই এ দিন অবরোধ করা হয়েছে।” |