বাষট্টি বছরের পুরনো বনগাঁ পুরসভায়
বাড়ি বাড়ি পানীয় জল আজও অধরা
পুরসভার বয়স হয়ে গেল বাষট্টি বছর। কিন্তু আজও উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ পুর এলাকার বাসিন্দারা পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়িতে পানীয় জলের সুবিধা থেকে বঞ্চিতই থেকে গিয়েছেন। রাজ্যে বাম সরকারের আমলে যা পাওয়া যায়নি, নতুন সরকার এলে তা পাওয়া যাবে বলে আশা করেছিলেন পুরবাসীরা। কিন্তু তাঁদের সেই আশা দুরাশাই থেকে গিয়েছে। যদিও কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত বনগাঁ পুরসভা সম্প্রতি এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে। মাস সাতেক আগে পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের জ্যোৎস্না আঢ্য বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়ে এই পরিষেবা চালু করার দাবি জানিয়েছেন।
পুরসভা সূত্রের খবর, বাড়ি বাড়ি পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহের এই প্রকল্প চালু করতে পরিকাঠামোগত কি কি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তার বিস্তারিত রিপোর্ট জনস্বাস্থ্য-কারিগরি মন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, “পুর এলাকায় তিনটি রিজার্ভার তৈরি এবং পাইপলাইন সম্প্রসারণের জন্য ৪ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে। ওই তিনটি রিজার্ভার তৈরি হয়ে গেলে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।”
বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস এবং প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠও বিষয়টি নিয়ে সুব্রতবাবুর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। গোপালবাবু বলেন, “মন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আমার কথা হয়েছে। মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, শীঘ্রই বনগাঁ পুর এলাকায় পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”
কয়েক বছর আগে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বনগাঁ পুর এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে পরিস্রুত আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল পৌঁছে দিতে একটি রিজার্ভার এবং তিনটি আয়রন এলিমিনেশন প্ল্যান্ট বসানো হয়েছিল। এ জন্য আটটি পাম্পহাউসও তৈরি করা হয়েছিল। তবে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল না পৌঁছলেও রাস্তার ধারে ট্যাপকলে জল সরবরাহ করা হয় প্রতিটি ওয়ার্ডেই। যদিও ওই জল আর্সেনিক দূষণমুক্ত নয় বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। বনগাঁ পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সুনীল সরকার বলেন, “বেশ কয়েক মাস আগে পুরবোর্ডে সিদ্ধান্ত হয়, পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা চালু হয়নি। আমরা বোর্ডের বৈঠকে বেশ কয়েকবার ওই প্রকল্প চালু করার দাবি জানিয়েছি।” বাম আমলে বামবিরোধী পুরবোর্ডের পক্ষ থেকে প্রায়ই অভিযোগ তোলা হত, রাজ্যের তরফে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও যেহেতু পুরসভায় বিরোধীরা ক্ষমতায় রয়েছে তাই এই প্রকল্পকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু রাজ্য এখন তৃণমূল সরার। বনগাঁ পুরসভাও কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের। তাহলে এখন কেন প্রকল্প রূপায়ণে দেরি হচ্ছে সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পুরবাসীদের মনে।
১৯৫০ সালে তৈরি হয় বনগাঁ পুরসভা। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার জনসংখ্যা বর্তমানে ১ লক্ষ ৮ হাজার ৮৮৭ জন। পুরসভার মোট এলাকা ১৫.০২৭৪ বর্গ কিলোমিটার। ১৯৮২ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ দফতর এই পুরসভায় পানীয় সরবরাহের অনুমোদন দেয়। তদানীন্তন রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে কারিগরি সহায়তাও করেছিল। জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, “ওই সময় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে ঋণ করে এক কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কাজই শেষ করেনি। ওই অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার জন্য দাবি জানানো হয়েছে।” স্থানীয় বিএসএফ ক্যাম্প মোড়ের কাছে ১৯৮৬ সালে একটি রিজার্ভার তৈরি করা হয়। রিজার্ভার ছাড়া বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। ওই রিজার্ভার থেকে মাত্র চারটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা জল পেতে পারেন। পুর এলাকায় বর্তমানে ১৪ হাজার ৪৩১টি বিপিএল পরিবার আছে। সেই সব পরিবারকেও পানীয় জল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বনগাঁয় পরিস্রুত আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের সমস্যা ভয়াবহ। গরমে সেই সমস্যা আরও বাড়ে। এখানে জলের একমাত্র উৎস ইছামতী নদী বর্তমানে মৃতপ্রায়। জোয়ারভাটা খেলে না। ফলে স্বাভাবিক ভাবে এখানকার মানুষ ভূগর্ভস্থ জলের উপরেই নির্ভরশীল। সে কথা ভেবে পুরসভার পক্ষ থেকে ২২টি ওয়ার্ডে ২০০টিরও বেশি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। যদিও তা আর্সেনিকমুক্ত নয় বলে অভিযোগ।
জ্যোৎস্নাদেবী বলেন, “জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে সম্প্রতি একটি চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, প্রকল্পটি চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরের পক্ষ থেকে জল প্রকল্পটি চালু করার জন্য সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে এর জন্য প্রয়োজনে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণও নেওয়া হতে পারে।” বনগাঁর মহকুমাশাসক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিএডিপি প্রকল্পে এখানে জল প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করার আবেদন জানানো হয়েছে। তবে ওই প্রকল্পে অর্থ অনুমোদনের সম্ভাবনা কম। তাই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে অর্থের অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.