ঘটনা ১-মাসখানেক আগে জমিতে গিয়ে চমকে উঠেছিলেন বাউসমারীর অশোক মণ্ডল। পাশের জমিটা আর চেনাই যাচ্ছে না। অনুমতির তোয়াক্কা না করে ভাটা মালিককে বিক্রি করে দেওয়ায় সেখানে রাতারাতি গভীর গর্ত।
ঘটনা ২-গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মাঠে গিয়ে একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল তেহট্টের নাটনা গ্রামের নিখিল বিশ্বাসের। রাতারাতি পাশের জমি থেকে মাটি উধাও হয়ে গিয়ে সেটা পুকুর হয়ে গিয়েছে। তিনি প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে ছিলেন। সুরাহা হয়নি।
নিয়ম নীতির পরোয়া না করে গত কয়েক বছরে তেহট্ট মহকুমায় মাটি মাফিয়াদের এমনই লাগাতার দৌরাত্ম্য। যার ফলে ক্রমেই বদলে যাচ্ছে জমির শ্রেণী বিন্যাস। কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। বিপন্ন হচ্ছে নদীও। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, দিনের পর দিন প্রকাশ্যে চলছে এসব। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। বাউসমারীর অশোক মণ্ডল কিংবা নাটনার নিখিল বিশ্বাসদের অভিযোগ, ‘‘আমাদের জমি থেকে মাটি কাটা হয়নি ঠিকই কিন্তু একেবারে পাশের আলের জমি থেকে যেভাবে মাটি কাটা হয়েছে তাতে আমাদের জমিরও মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। আগামী বর্ষায় আমাদের জমিও ভেঙে যাবে। এমনিতেই আমাদের মত কৃষকদের চাষআবাদ করাটাই এখন কঠিন হয়ে গিয়েছে। সেখানে এ ভাবে যদি দিনের পর দিন পাশের জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয় তাহলে একসময় আমাদের জমিরও কোন অস্তিত্ব থাকবে না।’’ |
প্রশাসন ও স্থানীয়সূত্রে জানা গিয়েছে গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে বেআইনি ইটভাটার সংখ্যা। তেহট্ট মহকুমাতেই প্রায় শ’খানেক। যার অধিকাংশই বেআইনি। তেহট্ট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের দিলীপ পোদ্দার বলেন, ‘‘বেআইনি ইটভাটার সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলায় বাড়ছে মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য। তারাই ওই সব ভাটায় মাটি সরবরাহ করছে। মোটা টাকার প্রলোভন দেখিয়ে অভাবী কৃষকদের প্রভাবিত করে তারা কেটে নিচ্ছে কৃষি জমির মাটি। ভূমি সংস্কার দফতরের অজান্তেই বদলে যাচ্ছে জমির চেহারা। এ ছাড়াও মাটি মাফিয়ারা নদীর চর থেকেও মাটি কেটে নেওয়ায় সমস্যায় পড়ছে নদী ও নদীর পারে বসবাসকারী মানুষ প্রশাসনকে আমরা জানিয়েছি অবিলম্বে এই বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে সংকটে পড়বে এলাকার চাষ-আবাদ।’’
তেহট্ট ১ ব্লক কৃষক সভার সম্পাদক ভক্তরাম ঘোষ বলেন,‘‘ প্রশাসনের উচি সবার আগে বেআইনি ইটভাটাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তেহট্ট থেকে বেতাই পর্যন্ত রাস্তার দুধারে চাষের জমির মধ্যেই গজিয়ে উঠেছে অজস্র ইটভাটা এগুলো কার অনুমতি নিয়ে চলছে?’’
তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন,‘‘ প্রশাসন কিছুই করছে না এটা ভাবার কোন কারণ নেই। গত এক মাসে আমরা জলঙ্গি নদীর চর ও বেশ কিছু জায়গায় হানা দিয়ে বেশ কিছু মাটি বোঝাই ট্র্যাক্টর আটক করেছি। বেআইনিভাবে মাটি কাটার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। মহকুমার অন্তত চল্লিশটি ইটভাটার মালিককে নোটিশ দিয়ে তাদের ভাটার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে।’’
মহকুমার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক দুলাল দাস বলেন,‘‘ মাসখানেকের মধ্যে কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে আমাদের কাছে কয়েকটি অভিযোগ এসেছিল। সেই ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।এই বিষয়ে দিনকয়েক আগে আমরা পুলিশের কাছে আটজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।’’ |