বিশাল রানের ‘লিড’ নিয়ে ফেলল অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেটে যদিও ফল নিয়ে পূর্বাভাস করতে যাওয়াটা বোকামি, তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি, ভারতকে দারুণ অসামান্য কিছু করতে হবে ম্যাচ বাঁচাতে হলে।
আমার মতে টেস্টের প্রথম তিনটে দিন একচেটিয়া শাসন করেছে অস্ট্রেলিয়া। এমনিতেই কোনও টিম ২৮৬ রানের একটা পার্টনারশিপ করা মানে তারা টেস্টে খুবই ভাল জায়গা দখল করে নেবে। এখানে অস্ট্রেলিয়া দু’টো সে রকম পার্টনারশিপ করল। দ্বিতীয়টা আরও বড়। আর এই পার্টনারশিপ দু’টো খুব দ্রুতগতিতে করল ওরা। রিকি পন্টিং আউট হয়ে যাওয়ার পরেও ক্লার্ক আর হাসি মিলে আর একটা বড় পার্টনারশিপ খেলে দিয়ে গেল। অস্ট্রেলিয়ায় কোনও অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের করা সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোরের রেকর্ড করে ফেলল ক্লার্ক। কী ইনিংসটাই না খেলল ও! এ রকম একটা ইনিংস খেলার এর চেয়ে ভাল সময়ও আর হয় না। দল ৩৭-৩ হয়ে প্রবল চাপের মধ্যে। অধিনায়ক হিসেবে ওর প্রথম মরসুম। দশম টেস্ট। নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য এর চেয়ে ভাল মঞ্চ হয় না।
আমার কাছে ক্লার্কের ইনিংসটাই শুধু দামি নয়। যেটা আরও চোখে পড়ার মতো তা হচ্ছে, ওর ডিক্লেয়ারের সিদ্ধান্ত। টেস্ট ম্যাচটায় অনেক সময় পড়ে ছিল। টিম সাড়ে চারশো রানে এগিয়ে। প্রতিপক্ষ দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। সচরাচর এ রকম সোনার সুযোগ আর কোনও ব্যাটসম্যানের সামনে আসে না। ক্লার্ক হেসেখেলে ব্রায়ান লারার সর্বোচ্চ রানের টেস্ট ইনিংস টপকে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারত। সব কিছু ওর পক্ষে ছিল। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত বোলিং। ফিল্ডাররা নিঃশেষ। এ রকম একটা রেকর্ড করে ফেলতে পারলে ক্রিকেটের সর্বকালের ইতিহাসে ঢুকে পড়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু ক্লার্ক ঠিক সেটাই করল যেটা টেস্ট ম্যাচ জিততে চাওয়া ক্যাপ্টেনরা করে। ওর ব্যক্তিগত রেকর্ডের চেয়েও ও প্রাধান্য দিল টিমের জেতার ওপর। ক্লান্ত হয়ে পড়া একটা টিমকে আরও বড় মানসিক ধকলের দিকে ঠেলে দিল ব্যাটিং করতে পাঠিয়ে।
এত বিশাল রানে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে যে, সেটা যে-কোনও প্রতিপক্ষের কাছে বড় মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা হতে পারে। বিশেষ করে এমন টিমের কাছে যারা প্রথম ইনিংসে খুব অল্প রানে আউট হয়ে গিয়েছে। স্কোরবোর্ডের দিকে তাকিয়ে যে কোনও ব্যাটিং পক্ষের মনে হবে এখান থেকে একটাই টিম ম্যাচটা জিততে পারে। সেই ভাবনাটা মন ভেঙে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। ক্লার্কের চালটা এই কারণেই মোক্ষম। |